
কনস্টান্টিনোপলঃ শক্তিশালী দেওয়াল দিয়ে ঘেরা কনস্টান্টিনোপল শহরকে বলা হতো সে সময়ের সবথেকে দুর্ভেদ্য শহর। শহরটির প্রতিষ্ঠাতা কনস্টাইন দ্যা গ্রেটের নামনুসারে রাখা এই শহর ১৫শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতীতের শৌর্যবীর্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়। রেনেসাঁর শুরুর দিকে যখন অটোমেন সাম্রাজ্য প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে, তখন একটি সামান্য কিন্তু মারাত্মক ভুল শহরটিকে দখল করতে অটোমেনদের সাহায্য করেছিল।

বাজেইন্টাইন সাম্রাজ্যর শহর ঘিরে রাখার দেওয়ালের একটি গেইট বন্ধ করতে ভুলে যাওয়ার ফলেই অটোমেনরা সেই গেইট দিয়ে ঢুকে শহরে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। বিস্মিত আর আতংকিত বাজেইন্টাইন যোদ্ধাদের হঠিয়ে শহর দখল নিতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। মজার বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার ২শ বছর আগে বাজেইন্টাইন যোদ্ধারা এই গেইট দিয়েই ঢুকে ক্রুসেডার হাত থেকে শহরটি পুনরুদ্ধার করেছিল।

টাইটানিকঃ টাইটানিক জাহাজের নাম শুনেন নাই এমন মানুষ সম্ভবত খুব কমই আছে। ১৯১২ সালে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় জাহাজ। ৮৮৩ ফুট লম্বা এই জাহাজের ধারন ক্ষমতা ছিল ক্রু সহ ৩৫০০ জন যাত্রী। আইসবার্গ এর সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবতে এর সময় লেগেছিল ৩ঘন্টার ও বেশি। পানিভর্তি ৪টি কম্পার্টমেণ্ট নিয়ে এটি ভেসে থাকতে পারলেও এর ৫টি কম্পার্টমেণ্টে ফাটল ধরে পানি ঢুকে যায়। টাইটানিক ডুবে গেলেও এর মধ্যে থাকা ৭১০ জন যাত্রী ও ক্রু প্রানে বেঁচে যায়। তাদের মধ্যে একজন জাহাজের ক্রু ফ্রেডিক প্লিট যিনি আইসবার্গটি প্রথম দেখেন।

তিনি জানান সে সময় যদি তার হাতে দূরবীন থাকতো তাহলে তিনি আরো আগেই জাহাজের ক্যাপ্টনকে জানাতে পারতেন। মজার ব্যাপার হলো এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি জাহাজের লকারে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল। আর লকারের চাবি ছিল সেকেন্ড অফিসার ডেভিড ব্লেয়ারের কাছে যিনি তার ডিউটি শেষ করে কিছুক্ষন আগে তার রুমে চলে যান। এই সামান্য ভুলটি যদি না হতো তাহলে হয়তো টাইটানিক আইসবার্গকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারতো।

ডি-ডেঃ ১৯৪৪ সালে জুনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এডলফ হিটলার ফ্লিড মার্শাল এরউন রোমেল কে ফ্রান্সের উপকূলে কড়া পাহাড়ার দায়িত্ব দেন। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারনে রোমেল ভাবলেন মিত্র বাহিনী আক্রমণ করবে না। তাই তিনি নিজের স্ত্রীর জন্মদিন পালন করতে বাড়িতে চলে যান।

জুনের ৬ তারিখেই রোমেলের স্ত্রীর জন্মদিনের দিনে মিত্র বাহিনী ফরাসী উপকূলে আক্রমণ চালায় আর রোমেলের অধীনে থাকা ৫টি ঘাঁটি দখল করে নেয়। ঐদিন বেঁচে যাওয়া জার্মান সৈনিকরা মনে করেন ফিল্ড মার্শাল রোমেল সেইদিন নেতৃত্ব দিলে যুদ্ধের ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।
যুদ্ধের কিছুক্ষন পরেই রুমেল যুদ্ধক্ষত্রে ফিরে আসে আর মিত্র বাহিনীকে হঠাতে পাঞ্জান নামের ট্যাংক চেয়ে পাঠান। কিন্তু ঐ ট্যাংক পাঠাতে হিটলারের অনুমতি লাগে তাই তিনি হিটলারের অনুমতির জন্য ফোন করেন কিন্তু হিটলার ঐসময় ঘুমে ছিলেন, আর কেউই তাকে জাগাতে রাজি ছিলনা। আর এই পরাজয়ের ফলেই মূলত নাৎসি বাহিনীদের পতন হতে থাকে।

হিরোশিমাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়ে যখন নাৎসি বাহিনী একেরপর এক পরাজিত হতে থাকে মিত্র বাহিনীদের হাতে তখন জাপানকে অনতিবিলম্ব আত্মসমর্পণ করতে বলে মিত্রবাহিনী। সেই সময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কান্ডারো সুজুকি এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মিত্রবাহিনীর কাছে একটি বার্তা পাঠান।

বার্তাটি ছিল জাপানি ভাষায়, আর এতে তিনি জাপানি শব্দ মুকোসার্চু ব্যবহার করেন। এই মুকোসার্চু শব্দের একাদিক অর্থ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী মুকোসার্চু দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন জাপান মিত্রবাহিনীর প্রস্তাব গভীর ভাবে চিন্তা করছে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর অনুবাদক এইটাকে অনুবাদ করে জাপান আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নাকচ করেছে! আর এর ঠিক দশদিন পরেই হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা হামলা হয়!

বার্লিন প্রাচীরঃ প্রায় তিন দশক (২৮ বছর) ধরে বার্লিন প্রাচীর পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে আলাদা করে রেখেছিল। এই দেওয়াল যে কখনো ভেঙ্গে ফেলা হবে তা চিন্তাই করা সম্ভব ছিলনা। কিন্তু একটা হাস্যকর ভুল সবকিছু পাল্টে দিলো! ১৯৮৯ সালে মিখাইল গর্ভেচেভ সোভিয়েত ইউনিয়ন এর দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই জার্মানিকে এক করার উদ্যোগ নেয়। তার চেষ্টায় দুই জার্মানির মধ্যে চলাচল কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাজতন্ত্র আর গনতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য গড়ে তোলা বার্লিন প্রাচীরের সামনেই ৯ নভেম্বর এক গণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আর ঐ সমাবেশে পূর্ব জার্মানির প্রচারমন্ত্রী গুন্টার সাবোয়স্কিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।

৯ই নভেম্বরের পূর্বে সাবোয়স্কি ছুটিতে থাকায়, এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। একই দিনে একটি সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে তাকে ঘোষণাপত্রটি ধরিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু কবে থেকে এটি কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণাটি দেয়ার পর এটি কবে কার্যকর হবে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি পত্রটি অনেকক্ষন দেখার পরও কিছু বুঝতে না পেরে বললো আমি যতদূর জানি সম্ভবত এখন থেকেই। সাথেসাথে গণমাধ্যম গুলোতে প্রচার হতে থাকে এই খবর। ঐখানে উৎসুক জনতা তখই দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে। সামরিক অভ্যুত্থান এর কথা চিন্তা করে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ছবিঃ গুগুল
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




