আমাদের মাঝে অনেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রকে এক করে ফেলেন। অথচ দুটোই সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। তবে হ্যাঁ জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার বাইপ্রডাক্ট হিসেবে জ্যোতিষশাস্ত্রের উদ্ভব ঘটে। জ্যোতিষশাস্ত্র হচ্ছে কিছুটা বিজ্ঞান মিশানো কুসংস্কার। মূলত এই জ্যোতিষশাস্ত্র তিন হাজার বছর আগে ব্যাবিলনে প্রথম চর্চা শুরু হয়। প্রাচীন কালে কিছু অসাধারণ ও জ্ঞানপিপাসু মানুষ চেষ্টা করেছিলো আকাশ মন্ডলের মাঝে গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য এসবের অবস্থান, গতিবিধি নির্ণয় করার। তাদের এই জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা থেকে অবৈধভাবে উৎসারিত হয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্র আর এতে ভূমিকা রেখেছে তখনকার দিনের পুরোহিত ও ধর্ম প্রবর্তকরা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থের জন্য তৈরি করেছিল তারকা রাশি। আর জ্যোতিষীরা এই তারকা রাশির মাঝে সূর্য ও গ্রহ গুলোর কাল্পনিক কয়েকটা পথ তৈরি করে। সূর্য ও গ্রহ গুলো যখন যে রাশির ভিতর দিয়ে যায় সেসময় কেউ জন্ম নিলে সে সেই রাশির জাতক। যেমন ২১শে মার্চ থেকে ১৯শে এপ্রিল এই সময় সূর্য বিষুব রেখা পার হয়ে উত্তর গোলার্ধে যে স্থানে অবস্থান করে সেটা মেষ তারকা রাশি বরাবর থাকে। আর ওই সময় কেউ জন্মগ্রহণ করলে সে মেষ রাশির জাতক ধরে নেওয়া হয়। আদৌ'ত সূর্য কোন তারকা রাশির ভিতর দিয়ে যায় না। তখন তাদের ধারণা ছিল না সূর্য থেকে সেসব রাশি গুলি লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে।
জ্যোতিষশাস্ত্র সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ধর্ম গুলোকে আকর্ষণীয় করতে। প্রাচীন কালের মানুষেরা কৃষিকাজ করতো এই গ্রহ নক্ষত্র গুলোর অবস্থান দেখে। যাত্রাপথ ঠিক করতে, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি সম্পর্কে ধারনা নিতো চন্দ্র সূর্য আর নক্ষত্র গুলোর গতিবিধি হিসেব করে। তাই তারা ভাবতে থাকে চন্দ্র,সূর্য আর নক্ষত্র গুলো এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তাদের জীবন এবং ভাগ্যও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এসব অনুমান আর অজ্ঞতা থেকেই ধর্ম গুলো আস্তে আস্তে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে থাকে। কল্পনার আকাশে সাজাতে থাকে তাদের স্বর্গ,নরক, আরশ, আর দেবতাদের আবস্থল!
আসলে যেমনটি প্রথমে বলছিলাম জ্যোতিষশাস্ত্রটি হল সামান্য বিজ্ঞান মিশ্রিত একটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। গ্রহ, নক্ষত্র এগুলো কখনোই আমার আপনার ভাগ্য কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারপরেও এখনো এই জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা আছে। এখন অনেক জ্যোতিষী কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকে, তারা বলে এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে আরও নিখুঁত ভাবে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি তারা পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। আসলে বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আর বিজ্ঞান চর্চা আলাদা ব্যাপার, মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা আনার জন্য এই পন্থা বর্তমানে জ্যোতিষীরা অবলম্বন করে যাচ্ছে। মানুষকে বুঝাতে চায় তারা বিজ্ঞান সম্মত জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করে। অনেক সাধারণ মানুষ অর্থ দিয়ে এসব প্রতারণা ক্রয় করে। জ্যোতিষ শাস্ত্রের উপর বিশ্বাস করে অর্থের পাশাপাশি নষ্ট হয় মানুষের আত্মবিশ্বাস, অপচয় হয় মূল্যবান সময়ের।
আশার কথা হচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিনদিন অগ্রগতির কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে মানুষের অনেক ভ্রান্ত ধারণা। এখন মানুষ বুঝতে শিখেছে মঙ্গল, শুক্র, কিংবা বৃহস্পতি নিছকই এক একটা গ্রহ যেগুলো আমাদের সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। আর আমাদের সূর্যও বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের মাঝে একটি মাঝারি মানের নক্ষত্র। যে তারকা রাশি দিয়ে তারা মানুষের রাশি নির্ধারণ করে সেই তারকারাজিরা আমাদের থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। যাদের কোন প্রভাবই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভূমিকা রাখেনা। কিংবা এই যে মহাশূন্য আমরা দেখছি এটার কোনো খুঁটি নেই নেই সাতটি স্তর। দূরে যে তারা গুলো মিটিমিটি করে জ্বলছে সেগুলো কোনো দেবতা নয় সেখান থেকে কেউ কোনো বিশেষ যানে চড়ে মর্তে আসেনি।
ছবি: গুগুল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৫