
এই প্রবনতাটি ইদানিং কালে খুব বেশিই দেখা যাচ্ছে। কম সময়ে বেশি আয় করার জন্য আমরা নানাবিধ ফর্মুলা আবিষ্কার করে যাচ্ছি। বেশি আয় করা খারাপ কিছু নয়, সবাই চায় তার আয়ের পরিমান বাড়ুক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা এই বেশি আয়টা করতে চাই অল্প সময় ও কম পরিশ্রম করে। যার জন্য অসৎ উপায় অবলম্বন করতে হয়। গ্রামের একজন মুচি থেকে শুরু করে শহরের গ্রূপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিকও অসৎ পথে অল্প সময়ে বেশি ইনকাম করার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকে।
একটা উদারন দিচ্ছি, কয়েকদিন থেকে ঢাকা শহরে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে সাত'শ থেকে সাড়ে সাত'শ টাকা। গ্রামে যখন কশাইরা জানতে পারলো ঢাকায় এই রেট চলছে তখন তারাও এই রেটে বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। আমাদের গ্রামে তো শবে বরাতের আগের দিন আট'শ টাকাও গরুর মাংশ বিক্রি হয়েছে। এবার দেখুন, গ্রামে একটা দোকান ভাড়া দুই'থেকে তিন হাজার টাকা যেখানে ঢাকায় পনের থেকে বিশ হাজার। গ্রামে কসাইয়ের সহকারির বেতন চার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে আর ঢাকায় দশ, বারো হাজার। অথচ ঢাকার দামের সাথে তারা মাংসের দামের মিল রেখে বিক্রি করছে! এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টিও সবার জানা। ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম বেড়েছে সে তেলের জন্য এখনো এলসি'ই খোলা হয়নি অথচ বাজারে আন্তর্জাতিক তেলের দাম হিসেব করে দাম বাড়িয়ে বসে আছে দোকানিরা! এসবের কারণ কি? কারন হচ্ছে অল্প সময়ে বেশি মুনাফা করার ইচ্ছে।
খাদ্যে ভেজাল তো এখন খাদ্যেরই অংশ হয়ে গেছে। এই ভেজাল মেশানো, ওজনে কম দেওয়া, নকল পণ্যে বিক্রি সবই বাংগালীর অতি মুনাফা লোভের জন্য। ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বাজে ও কঠিন বাজার। এখানে সততার সঙ্গে ব্যবসা করা প্রায় অসম্ভব। বিক্রেতা তার পণ্য, সেবার গুনগত মান ঠিক রাখে না, ক্রেতা সঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধ করতে চায় না, উৎপাদন শিল্পে জড়িত শ্রমিকের শ্রমের যথাযথ মূল্য দেওয়া হয়না। তা ছাড়াও ব্যবসার জন্য সরকার দরকারী সুযোগ সুবিধা গুলোকে নিয়মের বেড়াজালে কঠিন করে রাখে। এসব যারা দেখভাল করে তার অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ।
সবকিছু মিলিয়ে বাঙ্গালীদের ব্যবসায়িক নীতি ও দক্ষতা খুবই নিন্ম মানের। ব্যবসা বা যেকোন কাজের পূর্বেই শর্টকাট রাস্তা বানিয়ে রাখে অতি মুনাফা করার জন্য। যার জন্য টেকসই উন্নয়ন কখনো সম্ভব হয়নি এই জাতির।
যাইহোক, যে সমস্যা নিয়ে এতক্ষন বললাম এটার সমাধান খুব বেশি কঠিন নয়। এসব দেখার জন্য যারা আছে তারা একটু কর্তব্যপরায়ন ও দক্ষতা দেখালে এই সমস্যা থাকার কথা নয়। অংকে ও সাধারণ জ্ঞানে তারা একটু পটু হলেই এসব অসঙ্গতি চোখে পড়বে। আর রোগের কারণ জানতে পারলে সে রোগ প্রতিরোধ করা সকলের জন্যই সহজ হয়ে যায়।
বিঃদ্রঃ বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




