somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(২)★★

০৪ ঠা মে, ২০২২ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি তখন ক্লাস নাইনে'র বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে আমার খালার বাড়িতে বেড়াতে যাই। আমার খালাদের বাড়িটি ছিল অনেক বড় বাড়ি। আমার সমবয়সী অনেক ছেলেপেলে ছিল তাই ছুটি পেলে তাদের বাড়িতেই বেড়াতে যেতাম। খেলাধুলায় সময় কেটে যেতো। খালাদের বাড়ির দরজায় একটা কাঁচারীঘর ছিল, সেখানে বাড়ির হুজুরের থাকার ব্যবস্থা ছিল। বাড়ির হুজুর আমাদের থেকে এক দুই বছরের বড়, মাদ্রাসায় পড়তো। তার নাম ছিল মোস্তফা। মোস্তফার কাজ ছিল নিয়মিত আযান দেওয়া আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো।
আমি তখন নিয়মিত নামাজ পড়তাম জামাতের সাথে, মোস্তফার পিছনে নামাজ পড়তে ভালো লাগতো। সে খুব ছোট ছোট সূরা দিয়ে নামাজ পড়াতো তাই সময় কম লাগতো। অবশ্য এই জন্য বাড়ির মুরুব্বীরা তাকে মাঝে মাঝে ধমক দিতো এত তাড়াতাড়ি করে নামাজ পড়ায় কেনো সে। যাক আমি যেদিন খালার বাড়ি থাকে চলে আসবো সেদিন মোস্তফা ফজর নামাজের আযান দেওয়ার আগেই আমি কাঁচারী ঘরের দিকে রওনা দিই। প্রচন্ড ঠান্ডা দিয়ে ওযু করতে নামি কাঁচারী ঘরের সাথের পুকুরে। ওযু শেষে কাঁপতে কাঁপতে উঠে শুনতে পাই মোস্তফা আযান দিচ্ছে। আমি কাঁচারী ঘরের আশেপাশে মোস্তফাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। সামনে পিছনে আমি তাকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু দেখতে পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম সে কোত্থেকে আজান দিচ্ছে! কাঁচারীর ভিতরে ঢুকে তার রুমের ভিতর উঁকি দিলাম। দেখলাম মোস্তফা কম্বলের ভিতর শুয়ে মুখ বের করে আযান দিচ্ছে! আযান শেষে আমি তাকে ডাক দিলাম, সে এতটা ভয় পেলো মনে হয় তার সামনে আজরাইল এসে দাঁড়ায়ছে। হাত জোড় করে কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো আমি যেনো বাড়ির কাউকে না বলি। প্রচন্ড শীতে সে উঠতে পারছিল না। ভালো কোনো গরম জামা নেই তার। সে স্বীকার করলো শীতের সময় প্রতিদিনই সে এই কাজটি করে।
আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম কাউকে বলবো না। বেশ কয়েকদিন পর শুনি তার চাকুরী চলে গেছে, কিসের জন্য গেছে সেটা আর জানতে পারিনি।

একটা সময়ে আমাদের এলাকার দিকে কিছু মহিলা মাথায় করে কাঁচের জিনিস পত্র এনে সস্তায় বিক্রি করত। অবশ্য এখনো মাঝেমধ্যে এদের দেখা মিলে। আমাদের গ্রামের ভাষায় এদেরকে বেজনী বলা হতো। আমার মা, চাচিদের দেখতাম এদের কাছ থেকে কাচের প্লেট, কাপ, পিরিচ ক্রয় করতো। এদের দেখে খুব পরিশ্রমী মনে হতো। এত ভারী বোঝা সারাদিন ফেরি করে বিক্রি করা সোজা কথা না।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম ঘন বাগান দিয়ে। গ্রীষ্মের সময় বাড়ি যাওয়ার জন্য এটা আমার শর্টকাট রাস্তা ছিল। অনেকে ভয়ে যেতো না এই বাগানের রাস্তা দিয়ে। বাগানের মাঝামাঝি এসে আমি দেখলাম একজন বেজনী তার মাথা থেকে সে কাঁচের জিনিসে পূর্ণ ঝুঁড়ি পাশে রেখে কান্না করতেছে। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? কান্না করছো কেনো? সে আমার কথায় কোনো ভ্রূক্ষেপ করলো না, শুধু বললো আমাকে একটু ঝুঁড়িটা মাথায় উঠিয়ে দে। আমি তার ঝুঁড়িটি মাথায় উঠিয়ে দিলাম, সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।
বিকেল বেলায় আমি বাড়ির পাশে চা দোকানে গেলাম ছোলা মুড়ি খেতে। পাশে আমাদের পাশের বাড়ির নোমান তার দুই বন্ধুর সাথে কথা বলছে। নোমান বিয়ে করেছে, তার দুইটা বাচ্চা ছিলো, সে তেমন কিছু করে না। দিন রাত তাকে এই দোকানেই আড্ডা দিতে দেখতাম। বুঝতে পারলাম তার আলোচ্য বিষয় ছিল সে বেজনীকে নিয়ে। সেদিন দুপুরে সে ঐ বাগানে বেজনীকে একা পেয়েছিল। সে হাতে একটা মোটা লাঠি নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল, বলছিল সে রাজি না হলে লাঠি দিয়ে তার ঝুঁড়িতে থাকা কাঁচের সব জিনিস পত্র ভেঙ্গে দিবে। মহিলা উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যায়। এরপর কি কি করছে অট্টহাসি দিতে দিতে তার বর্ণনা দিতে থাকে তার বন্ধুদের কাছে। সেদিন আমার নিজের অজান্তেই আমার চোখে পানি এসে পড়েছিল তখন।

আমাদের এই দিকে একটা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, দুধ দাঁত পড়ে গেলে সেটা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয় কারন হচ্ছে যে দাঁতটি উঠবে সেটা নাকি তখন ইঁদুরের দাঁতের মত চিকন আর শক্ত হবে। আমি আমার দাঁত মনে হয় তিন চারটা হবে ইঁদুরের গর্তে ফেলতে পেরেছিলাম এবং আমার সব দাঁত আমি নিজের হাতেই ফেলেছিলাম, কারো সাহায্য ছাড়া। নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম এবং আমার সামনের দাঁত খুলে পেলেছিলাম নিজের হাতে। নানী বললো যা ইঁদুরের গর্তে ফেলে দিয়ে আয়। আমি দাঁত হাতে ইঁদুরের গর্ত খুঁজতে বের হলাম, সাথে আমার এক মামাতো বোন। নানীর বাড়ির পিছনেই বিশাল মাঠ। খুঁজতে খুঁজতে মাঠের একেবারে এক কোনে চলে গেলাম। মাঠের সে পাশেই বিশাল নারিকেল সুপারির বাগান। একটা ইঁদুরের গর্ত দেখলাম। আমি মামাতো বোনকে বললাম এই গর্তে ফেলে দিই। সে বলল না এই গর্তে সাপ থাকে। আমি ভাবলাম সে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিলাম। হাত ঢুকানোর পর গর্ত থেকে শোঁ শোঁ আওয়াজ বের হতে লাগলো। আমি দ্রুত হাত বের করে উপুড় হয়ে গর্তে তাকালাম। সত্যি সত্যি বিশাল এক সাপ দেখতে পেলাম গর্তে।
বাড়িতে গিয়ে মামাতো বোনকে বললাম আপনে কি করে জানতেন এই গর্তে সাপ থাকে। সে মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো আমি এই সাপটিকে কয়েকদিন কয়েকবার দেখেছি এই গর্তে ঢুকতে। এর কয়েকদিন পরেই আমার সে মামাতো বোনটি তাদের পাশের বাড়ির এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে পেলে। আমি বুঝতে পারলাম আমার মামাতো বোন আর সে ছেলেটি ঐ বাগানটিতে দেখা করতো আর সে সময় হয়তো এই সাপটি গর্তে আসা যাওয়ার ব্যাপারটি সে দেখেছিল।
স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(১)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×