দেশে যে ধরনের অর্থনৈতিক সিস্টেম চলছে তাতে এর সমস্যা অনেক গুলো। কোনোটা থেকে কোনোটা ছোট সমস্যা নয়। ক্যাপেটেলিজম অর্থনীতিতে যা যা সমস্যা তৈরি হয় তার সবই আমাদের অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে খালি চোখেই। তবে যদি বলি আমাদের অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা কোনটি? তাহলে বলা যায় রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি আমাদের অর্থনীতির সবচয়ে বড় সমস্যা। এটা বলার কারন হচ্ছে আমরা যে খাতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় করি সেটা হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত এবং এই রপ্তানি পন্যের বাজারের উপর আমাদের কেনো নিয়ন্ত্রণ নেই। রপ্তানী পণ্যটি কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও নয় অথবা এমন না যে, আমদের বাজারের উপরই শুধু এই পন্যের ক্রেতারা নির্ভরশীল।
এরচেয়ে বড় বিষয় এই রপ্তানি পণ্যে আমরা খুবই কম মূল্য যোগ করি। কারন এর কাচামাল, এক্সসরিজ ও মেশিনারিজ প্রায় সবকিছুই বাহির থেকে আসে। এগুলোর সাথে আমরা যোগ করি শুধু সস্তা শ্রম, যার মূল্য হিসেবে আমরা কারেন্সি পাই। দেখা যাচ্ছে এই সস্তা শ্রম না হলে এই খাতের বাজার আমরা হারিয়ে ফেলবো। অর্থ্যাৎ কাল যদি অন্য কেউ আরো সস্তা শ্রম দেয় তাহলে আমাদের হাত থেকে ক্রেতা ছুটে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
সস্তা শ্রমের কথা যখন বলছি তাতে বলা যায় এই সস্তা শ্রম আসলে আর বেশিদিন পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এর কারন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের অভাবনীয় সাফল্য। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হার এই মুহূর্তে বলা হচ্ছে ২:২। যার জন্য একসম়য় শ্রমিক সংকট দেখা দিবে অর্থাৎ শ্রমিকের যোগান কমে যাবে আর তখন বেশি মুজুরী দিয়ে শ্রমিক রাখতে হবে।
আসলে আমরা এমন একটি রপ্তানিযোগ্য পন্যের উপর আমদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে যা অন্য দেশের ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার উপর সরাসরি নির্ভর। ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা কমলে সে চাইলে আমাদের পন্যেটি না কিনে বা কম কিনে চলতে পারবে এবং সেটাই হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় চার কোয়াটার ধরে জাতীয় উৎপাদন কমছে আর দুই কোয়াটার কমলেই বড় ধরনের রেসিশন শুরু হয়ে যাবে এবং ক্রেতারা RMG পণ্য ক্রয় কমিয়ে দিবে। যার প্রভাব সরাসরি আমদের অর্থনীতিকে খুব ভালো ভাবেই বিপর্যস্ত করে তুলবে।
আমরা যদি আমদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে বড় না করি, গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পের মালিকদের দিয়ে ন্যায্য মুজুরী বৃদ্ধি না করি তাহলে অচিরেই আমাদের এই রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি কলাপস করবে।
নতুন চাকুরী সৃষ্টি না করে শুধু জনগনকে শিক্ষিত করেও লাভ নেই। কেননা এতে শুধু অশিক্ষিত বেকারের জায়গায় শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি হবে মাত্র আর তেমন কোনো কাজের কাজ হবে না। তাই শুধু শিক্ষার হার বাড়িয়ে গেলেই হবে না একই সাথে এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আর কর্মসংস্থানের সাথে পুঁজির সম্পর্ক সরাসরি জড়িত। যার জন্য দেশের পুঁজিকে কয়েকটি কোম্পানির কাছে কুক্ষিগত করে রাখা সঠিক হবে না।
বসুন্ধরার সালমান এফ রহমানের আয় ও পাট চাষী নজরুলের আয়কে একসাথ করে মাথাপিছু আয় না দেখিয়ে দুইজনের জন্যই ব্যবসায়ের সুযোগ গুলো সমানভাবে সহজ করা উচিত। আর এটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আগামী দিনে অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখতে এর বিকল্প কিছু নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১১