
১৯৫২ সালে যে ভাষা আন্দোলন হয়েছে সেটা হয়েছিল পাকিস্তানিদের আমাদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার ফলে। তারা যেমন উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিয়ে ভুল করেছে তেমনি আমাদেরও পুরো পাকিস্তানের উপর বাংলা ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার আন্দোলন ভুল কনসেপ্ট ছিল। দরকার ছিল মাঝামাঝি কিছু একটা। সেটা হতে পারতো ইংরেজি অথবা কোন জাতীয় ভাষায় না রেখে দুটিকে প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে চালু রাখা। যাই হোক এই বাংলা ভাষার জন্য আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে কিন্তু এই বাংলা ভাষার ব্যবহার ও সুবিধা আমরা আজও নিতে পারিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা ভাষা কিন্তু এ মিষ্টির স্বাদ আমরা এখনো নিতে পারিনি। নিতে পারেনি বললে হয়তো ভুল হবে, বলা যায় আমরা নেওয়ার চেষ্টাই করিনি।
পৃথিবীর সকল দেশেই নিজ মাতৃভাষায় যে কোন বিষয় যত সহজে বুঝা যায়, উপলব্ধি করা যায় অন্য ভাষায় সেটা সম্ভব নয়। আপনি পৃথিবীর যত ভাষায় দক্ষ হন না কেন নিজ মাতৃভাষায় আপনার আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকবে সবচেয়ে নিখুত। তাই সব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে মাতৃভাষার ব্যবহার থাকা জরুরী।
আপনি কি কখনো বাংলাদেশের কোন ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন? তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা অবশ্যই আছে এ ব্যাপারে। ব্যাংক থেকে যদি আপনার ঋণ নেওয়ার পরিমাণটা একটু বেশি হয় তাহলে দেখবেন কি পরিমান নথিপত্র তারা যাচাই-বাছাই করে। তবে ঋণ নেওয়ার সময় দেখবেন ঋণের শর্তগুলি লেখার জন্য তাদের কাগজের অভাব পড়ে যায়। এত ছোট ছোট অক্ষরে লেখে যে আপনার চোখের পাওয়ার একটু কম হলে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পড়তে হবে। এই সম্পূর্ণ শর্ত গুলি ইংরেজিতে লেখা থাকে এবং এমন এমন কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয় যা আপনি আপনার শিক্ষা জীবন ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে কখনো শুনে থাকবেন না। এই শর্তগুলি বাংলায় লিখলে কি সমস্যা? এছাড়ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আমাদের বিচারকরা যে রায় ও অবজারভেশন লিখেন সেটাও ইংরেজিতে। আজকাল অনেক স্কুলে বাচ্চাদের রেজাল্ট কার্ডে মূল্যায়ন টুকুও ইংরেজিতে লিখে। অনেক অভিভাবক এটার পাঠউদ্ধার করতে হিমশিম খায়।
যাইহোক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। যেসব বিষয় না বুঝলে নাগরিকদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আইন ভঙ্গ করতে পারে সেসব বিষয়ে ভিনদেশী ভাষা ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র মোবাইলে, কম্পিউটারে অটোমেটিক ভাবে বাংলা লিখার সফটওয়্যার ডাউনলোড করে দিলেই খুব বেশি ফলাফল পাওয়া যাবে না। দরকারি জায়গায় আগে কাজ করতে হবে। যেসব জায়গায় সাধারণ মানুষ চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেনা সেসব জায়গায় সরকারেরই কাজ করতে হবে।
৫২'র ভাষা সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ও ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




