২০১৭ সালে বলেছিলাম সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা মিলে বিএনপিকে রিফর্ম করছে। বিএনপিকে তাদের মিত্র জামায়াত থেকে আলাদা করা হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ধারনাটি আংশিক সত্য ছিল। জামায়াতকে বিএনপি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পারলেও বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনকে রিফর্ম করা সম্ভব হয়নি, কিংবা সরকার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আবার এমনও হতে পারে বিএনপিকে এমন অবস্থায় রেখে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সহজ রাখছে।
তবে মূলকথা হচ্ছে একটি দেশের রাজনৈতিক উন্নতি সাধন করার জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধীদল অতীব প্রয়োজন। এ জায়গায় বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুটি অংশীজন। বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আওয়ামী লীগকে প্রশ্নের সম্মুখীন করার মত একমাত্র দল তারাই আছে। সেজন্য আমি ১৭ সালে ভেবেছিলাম শেখ হাসিনা বিএনপিকে রিফর্ম করবে দেশ ও রাজনৈতিক স্বার্থেই।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ দেশে যে ধরনের গণতন্ত্র চালু করেছে এটার কুফল অনেক। এধরনের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। আমলারা লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটতে থাকে। আমলা এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বোঝাপড়া থাকে বিধায় জনগণের মৌলিক অধিকার গুলি খর্ব হয়। উভয়ের জবাবদিহিতার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে পড়ে। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের কাছে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী অসহায় হয়ে পড়ে।
আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। এই নির্বাচনটি শেখ হাসিনা চাইলে আরো সুন্দরভাবে করতে পারতেন। উনার জন্য হয়তো এটি শেষ নির্বাচন। উনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইলে করতে পারতেন। যাইহোক যা হয়নি তা বলে লাভ নেই।
সাধারণ মানুষ যা লাউডলি বলতে পারেনা সেই কথাগুলি বিরোধী দল সাধারণ মানুষের হয়ে লাউডলি বলবে। কিন্তু আমাদের বিরোধীদল বিএনপি নিজেদের কথাই গুছিয়ে ও পরিকল্পনামাফিক বলতে পারেনা, সেখানে জনগণের কথা কিভাবে বলবে! বিএনপিতে কি যোগ্য ও জনগণের ভাষা বুঝে এমন নেতৃত্ব নেই! অবশ্যই আছে। কিন্তু তাদের নিজেদের সুপ্রিম লিডার নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন নয়। এত বড় একটি জনপ্রিয় দল, এত জনসমর্থন নিয়ে শুধুমাত্র সঠিক নেতৃত্বের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আমি যখন বিএনপি'র নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করি, বিএনপি'র বেশিরভাগ সমর্থকই আমার বিরোধিতা করে এবং কিছু ক্ষেত্রে কটু কথা বলে। একটি দল টানা ২০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকতে যাচ্ছে সেখানে নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে তার সমর্থকরা আলোচনা করতে চাইছে না এটা সবচেয়ে হতাশার বিষয়।
তাহলে শুনুন ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান যখন ছয় দফা দাবী আন্দোলনের রূপরেখা দেয় তখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা তর্কবাগীশ এটার বিরোধিতা করে এবং শেখ মুজিবকে এই ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করতে নিষেধ করে। কিন্তু শেখ মুজিব দলের বাকি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করে। পরের প্রেক্ষাপট তো আপনারা সবাই জানেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি এই ছয় দফা কেই কেন্দ্র করে শুরু হয় এবং শেষমেষ দেশ স্বাধীন হয়। ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পরের দলীয় কাউন্সিলেই শেখ মুজিব নিজ দলের সভাপতি দায়িত্ব পান। মাওলানা তর্কবাগীশ বলতে গেলে দৃশ্যপট থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যায়। এটা বলার কারণ হচ্ছে বর্তমান বিএনপি'র এক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান এত বড় দল চালানোর মতো নেতৃত্বগুন সমৃদ্ধ নয়। তাই বিএনপি'র বাকি নেতৃত্ববৃন্দের উচিত তারেক রহমানকে এড়িয়ে গিয়ে দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে সঠিক এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:১৪