আজকে প্রফেসর ডক্টর ইউনুসের শ্রম আদালতের মামলায় ৬ মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে কর ফাঁকির একটি মামলায় উনার বিপক্ষে রায় হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি সে করের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। সেই মামলায় উনি যেভাবে অভিনব পদ্ধতিতে কর ফাঁকি দিয়েছেন সেটা উল্লেখ করেছিলাম। এছাড়া ওনার নোবেল কমিটি থেকে প্রাপ্ত অর্থের করও দিতে উনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। শেষমেষ সে টাকাও হয়তো উনাকে দিতে হতে পারে।
আজকে উনাকে যে মামলায় সাজা দিয়েছে সে মামলায় উনার বক্তব্য স্পষ্ট নয়। বিচারক যে রায় দিয়েছেন এবং রায়ে যে সকল পর্যবেক্ষণ রেখেছেন সেটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। প্রথমত উনি গ্রামীণ টেলিকমে যাদের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের পরে তাদের চাকুরী স্থায়ী করেননি। উনি এবং উনার আইনজীবী এটার বিপক্ষে যে যুক্তি দেখিয়েছে তা হচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে। নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে সেখান থেকে তারা লভ্যাংশ পায়। এজন্য তারা তাদের নিয়োগগুলিকে স্থায়ী করেনি। তারা বলতে চাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠানের কাজই হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক সে প্রতিষ্ঠানের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদেরকে স্থায়ী না করা দোষের কিছু নয়!
কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানে কি নিয়ম বা আপনি কি করবেন সেটা শ্রম আদালত বুঝবেনা। শ্রম আইনে কি লিখা আছে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। ধরুন আপনি যদি বলেন আপনার প্রতিষ্ঠানে আপনি কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিবেন না এবং এই শর্ত দিয়েই আপনি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন তাহলে কিন্তু সেটা হবে না। কারণ দেশের শ্রম আইনে কি আইন আছে সেটাই বিচারের সময় দেখা হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানে কি আইন আছে, কি নিয়মে চলে সেটা দেখবে না। ডক্টর ইউনূসের সাজার ক্ষেত্রে ঠিক এটাই বিবেচনা করেছে আদালত।
আরেকটা অপরাধে উনাকে সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে উনার কোম্পানির নিট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ উনি কর্মচারীদেরকে দেননি। এটা আসলে খুব সহজেই বের করা সম্ভব। বাংলাদেশের অন্যান্য কোম্পানিগুলি যেভাবে তাদের নিট প্রফিট অপ্রদর্শিত রাখে গ্রামীন টেলিকমের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়না। কেননা গ্রামীণ টিলিকমের প্রধান আয়ের উৎস হল গ্রামীণফোন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ। আর এই লেনদেনগুলি থাকে স্বচ্ছ, তাই নিট প্রপিট বের করা খুবই সহজ এবং উক্ত নিট প্রফিট কর্মচারীদের একাউন্টে জমা হয়েছে কিনা সেটাও বের করা কঠিন কিছু নয়।
সকল ডকুমেন্ট ও কাগজপত্র আদালত পর্যবেক্ষণ করে দেখিয়ে দিয়েছে ডঃ ইউনুস তার কর্মচারীদের কোম্পানি আইন অনুযায়ী তার কর্মচারীদের এই লাভের ভাগ দেয়নি। এছাড়াও কোম্পানির অ্যাটেনডেন্স লিস্টে দেখা গিয়েছে অনেক কর্মচারীকে তাদের রেগুলার ছুটি দেওয়া হয়নি। এটাও শ্রম আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
এসব আইনের লঙ্গনের কারণে তাকে ৫০০০ টাকা জরিমানা ও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যাইহোক, ডক্টর ইউনুসের এই মামলার রায়টি ছিল সত্যিকার অর্থে দৃষ্টান্তমূলক। আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে ডঃ ইউনুসকে একজন নোবেল লরীয়েট হিসেবে এই রায়ে বিবেচনা করা হয়নি। একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে শ্রম আইন লঙ্ঘন করার জন্য তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে উনাকে অগ্রিম জামিন দিয়ে আপেল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এবং উনি আপিল করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এখন অনেকেই বলতে পারে ডক্টর ইউনূসের মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। হ্যাঁ, এমনটি হতে পারে। সরকার তাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই এই মামলায় বিচার করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলি যাচাই বাছাই ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি আইনের ব্যতয় ঘটিয়েছেন বিদায় তার বিপক্ষে রায় দেওয়ার সুযোগ হয়েছে আদালতের। উনার মত হাইপ্রোফাইলের লোককে একেবারেই বিনা অপরাধে সাজা দেওয়া সম্ভব নয়। উনি যে অপরাধগুলি করেছেন শ্রম আইনে, উন্নত বিশ্বগুলি ও ওয়েলফেয়ার যে রাষ্ট্রগুলো আছে সেখানে ওনার শাস্তি আরো বহুগুণ বেশি হতো। এছাড়া আরো আগেই উনি আইনের আওতায় চলে আসতেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৫