এই যে সরকার নতুন কারিকুলামে শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে এখানেও অনেক আপত্তির জায়গা আছে। অনেকে বুঝে বিরোধিতা করেছে, অনেকে না বুঝেই তাদের সাথে সুর মিলিয়েছে। নতুন কারিকুলামটি খুবই চমৎকার একটি কারিকুলাম কিন্তু সেখানে অনেক কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের দরকার আছে। এটা নিয়ে কথা বলা যায়, আপত্তি করা যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের কারিকুলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের দরকার অনেক সৃজনশীল শিক্ষক শিক্ষিকার। যেটা সরকারের হাতে নেই এবং তাদেরকে সৃজনশীল করার জন্য সরকারের উদ্যোগও পর্যাপ্ত নয়। যার জন্য এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ।
যাইহোক এই যে সৃজনশীল শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা বললাম এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ যারা এই পেশায় আছেন কিংবা বাচ্চাকাচ্চাদের হ্যান্ডেলিং করেন তারা বুঝতে পারবেন। সপ্তম শ্রেণীর বইতে আমাদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে একটি ছোট গল্প আছে। খুবই চমৎকার ভাবে অল্প কথায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দুঃখ-কষ্ট, সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অথচ একজন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক এটার প্রতিবাদ করেছে। মাথায় কি পরিমাণ গোবর থাকলে এ ধরনের স্টুপিডিটি দেখাতে পারে।
গল্পে কিংবা লেখায় যদি সমস্যা থাকে তার সেটা নিয়ে রিচার্স করা উচিত ছিল। সপ্তম শ্রেণীর বাচ্চাদের এ ধরনের গল্পে তাদের মনোজগতে কি ধরনের প্রভাব পড়ে সেটা নিয়ে তার গবেষণা করে তার ফলাফল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে পারতো। এরপর এটা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি মনে করতো এই গল্পটি বাচ্চাদের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাহলে সেটাকে সরিয়ে নিতো। কিন্তু কোন ধরনের গবেষণা কিংবা তথ্য উপাত্ত সরবরাহ না করে এটাকে পাঠ্য বইয়ে রাখা যাবেনা এমন ধারণা পোষণ করা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের যোগ্যতার সাথে যায় কিনা! আমি মনে করি অবশ্যই যায়না। এজন্যই শিক্ষকরা যদি সৃজনশীল ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়, তাহলে জাতিকে সত্যিকার অর্থে সুশিক্ষিত করা সম্ভব নয়।
কিন্তু এই শিক্ষক সেটা না করে শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তা ও সাধারণ পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি সেমিনারে এই বইয়ের দুইটি পাতা ছেড়ে প্রতিবাদ করছে। পাতা ছাড়ার পর আসলে সে কি ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং এটি কেনো সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে থাকার দরকার নেই সে সম্পর্কে কিছুই বলেনি। শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছে এবং বলেছে এটা ধর্ম বিরোধী। তবে আমি মনে করি যারা এই গল্পটি পড়বে এবং ধর্ম সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে তারা নিজেরাও ধর্মের সাথে এটার সাংঘর্ষিকতার কিছুই খুঁজে পাবে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সাথে আলাপ করেছি অনেক সময়ে, এছাড়াও ইউটিউব এ ধরনের অনেক গবেষণামূলক ভিডিও পাওয়া যায়। বইতে যে গল্পটি লেখা হয়েছে, তৃতীয় লিঙ্গ কোন মানুষের সাথে যদি আপনার কখনো কথা হয়, তাকে জিজ্ঞেস করবেন তার গল্পটিও ঠিক হুবহু এইরকমই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:২২