গতকাল সিএনএন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে(লিংক পাচ্ছিনা, তবে আমি নিজে রিপোর্টটি দেখেছি)। যে রিপোর্টে আমেরিকার একজন সিনেটর বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বাংলাদেশে এলজিবিটি প্রমোট করার জন্যই ফান্ডিং করা হয়েছে এবং সেটাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কন্টিনিউ করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন কট্টর ডানপন্থী নেতা যে এই এলজিবিটি মুভমেন্টের পক্ষেই ছিল না! এখানে একটা সূক্ষ্ম বিষয় আছে, যেটা আপনি একটু ডিপলি চিন্তা ভাবনা করলে ধরতে পারবেন। আমেরিকা যেহেতু সারা বিশ্বে সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে নিজেকে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে চায়, সেজন্য সে সবসময় চাইবে তার নিজস্ব আইডিওলজি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে। এখন সে আইডিওলজি কোনো ব্যক্তি মানুষের সমর্থনের বাইরে হলেও শুধুমাত্র আমেরিকার প্রভাব বিস্তারের জন্য সেটা সে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাইবে।
আরেকটু পরিষ্কার করে বললে দেখবেন, আমেরিকা সবসময় গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, মাইনোরিটিদের অধিকার এগুলি নিয়ে সারা বিশ্বেই কাজ করে। তারা যে দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়গুলি ডিল করে ঠিক একই ভাবেই অন্যান্য দেশগুলি যাতে এ বিষয়গুলি ডিল করে সে চেষ্টা চালায়। এতে হবে কি, তাদের নিজস্ব আইডিওলজি যখন সবাই ফলো করবে সেখানে তাদের সাথে কাজ করা কিংবা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা অধিকতর সহজ হবে। ঠিক এই জিনিসটাই ব্র্যাকের মাধ্যমে আমেরিকা এই মুভমেন্টটি এই দেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে।
একটি মজার জিনিস খেয়াল করুন। আমেরিকা যখন এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করে, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তখন কিন্তু আপনি আমেরিকাকে সমর্থন করছেন। আবার যখনই তারা এই এলজিবিটি মুভমেন্টের স্পিরিট ছড়িয়ে দিতে আসে তখন কিন্তু আপনি সেটা নিতে পারছেন না। শুধুমাত্র যেটা আপনার পক্ষে যাবে সেটাকে গ্রহণ করবেন বাকিটা করবেন না। আমি বলছি না এটা ভুল বা দোষের কিছু। আমেরিকায় যেটা সম্ভব সেটা অন্য জায়গায় সম্ভব নাও হতে পারে। তবে আমেরিকা সবসময় চেষ্টা করবে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে।
সুপার পাওয়ার ও ক্যাপিটালিজম চিন্তাভাবনার গোষ্ঠীর এটাই কৌশল। তারা সব সময় চেষ্টা করবে তাদের চিন্তা-ভাবনা নিয়েই অন্য দেশ জাতিগুলি গড়ে উঠুক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরনের মুভমেন্ট কি আমাদের মত দেশগুলিতে এই মুহূর্তে শুরু করা উচিত? প্রথমে আমি বলে নিই, এই এলজিবিটি মুভমেন্টের সাথে আমি নৈতিকভাবে একমত। কিন্তু আমাদের মত দেশে এ ধরনের মুভমেন্ট করার মত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। কেনো তৈরি হয়নি বলছি। প্রথমে আমেরিকায় এই ধরনের মুভমেন্ট গুলি কেনো হয়েছে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। প্রথমত সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এরপর মানবাধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তাও প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও সে দেশে একজনও যদি মাইনরিটি থাকে তার অধিকার সংরক্ষিত আছে। তাহলে দেখুন সেখানে কিন্তু মানুষের মৌলিক অধিকার গুলি সবদিক থেকেই সুরক্ষিত। এরপর তারা চিন্তা করলো সবার যেহেতু অধিকার গুলি নিশ্চিত হয়েছে এখন এই এলজিবিটি মানুষদেরও অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যার জন্য সেই মুভমেন্টটি তারা নিয়েছে। তারা কিন্তু ধরেই এই মুভমেন্টটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি।
এবার আমাদের দেশের দিকে নজর দিন। এখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা কিংবা সংখ্যালঘুদের অধিকার কি সঠিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে! এক কথায় সম্ভব হয়নি। তাহলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেই সমস্যা গুলির সমাধান করতে পারেনি সেখানে আমাদের জন্য এই ধরনের মুভমেন্ট শুরু করার কোন কারনেই আপাতত নেই।
এ ধরনের মুভমেন্ট এখন শুরু করার অর্থ হচ্ছে ঘোড়ার আগে গাড়ি নিয়ে টানাটানি। মানুষের মৌলিক অধিকার গুলি নিশ্চিত না করে তারও অনেক পরের বিষয়গুলি নিয়ে সময় ও অর্থ নষ্ট করছি। আমেরিকা যা করতে পারে সেটা আমরা সবসময় করতে পারবোনা। আমাদের যে বিষয়গুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা দরকার সেগুলি নিয়েই সময়, মেধা ও অর্থ ব্যয় করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১৬