somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ কয়েকটি বই!★★

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখকের বই, বিভিন্ন কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার অনেক নিষিদ্ধ করা বইয়ের নিষেধাজ্ঞা পরবর্তীতে তুলেও নেওয়া হয়েছে।
আজকে তেমনি কিছু নিষিদ্ধ বইয়ের কথা উল্লেখ করলাম। বিশেষ করে যে বইগুলি আমি পড়েছি। পোষ্টের শেষে আপনার কাছে জানতে চাই, বই নিষিদ্ধ করা কি সঠিক বলে মনে করেন আপনি?

• স্যাটানিক ভার্সেস: এই বইটি নিয়ে সারা বিশ্বে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। বইটি সালমান রুশদি নামক এক ব্রিটিশ ভারতীয় লেখক লিখেছিলেন ১৯৮৮ সালে। বইটিতে আমাদের ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা: ) এর জীবনী ও উনার উপর নাযিলকৃত ওহী নিয়ে কিছু বিতর্কিত লেখা লিখা হয়েছিল। কোরআনের কিছু ওহী শয়তানের পক্ষ থেকে এসেছিল বলে মন্তব্য করা হয়। যেগুলি পরবর্তীতে কোরআন থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেই আয়াতগুলিতে লাত, মানত, উজ্জা নামক দেবতাদের ইবাদত করার কথা বলা হয়েছিল। যা পরে নবী মুহাম্মদ বুঝতে পারে এই ওহী গুলি শয়তানের পক্ষ থেকে এসেছে। প্রকাশিত বছরেই বইটি বুকার পুরস্কার এর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরস্কার জিততে পারেনি।

• জিন্নাহ অফ পাকিস্তান:স্ট্যানলি ওল্পের্ট ১৯৮২ বইটি লিখেছিল। লেখার পরপরই পাকিস্তান সরকার বইটি পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ করার কারণ ছিল বইটিতে জিন্নাহ মদ ও শুকরের মাংস খেয়েছে এ কথাটি কয়েকবার এসেছে। যার জন্য পাকিস্তান সরকার বইটিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। জিন্নাহর মাধ্যমে পাকিস্তানের বিভিন্ন অবস্থান ও প্রেক্ষাপট খুব সুন্দর করে তুলে ধরে লেখক।

• নারী: হুমায়ুন আজাদের বইটি ১৯৯২ সালের প্রথম প্রকাশিত হয়। বইও যে নিষিদ্ধ হতে পারে বাঙালিরা সর্বপ্রথম সম্ভবত খুব ভালো করে বুঝতে শুরু করে ১৯৯৫ সালে এই বইটির নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। যদিও পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে উচ্চআদালত বলে, নারী বইটি নিষেধাজ্ঞা ছিল অবৈধ। এরপরে বইটির তিনটি সংস্করণ বের হয় এবং অসংখ্য পুন:মুদ্রন হয় বইটির।
বইটিতে হুমায়ুন আজাদ রাসকিন, রুশো, ফ্রয়েড ও রবীন্দ্রনাথের নারীবিরোধিতার এবং রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের নারীমুক্তির আন্দোলন নিয়ে যে আলোচনা করেছে নিঃসন্দেহে সেটি পুরো বইয়ের বেস্ট আলোচনা।

•নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর: ইরানের প্রগতিশীল লেখক আলী দোস্তি বইটি লিখেছিল। বইটিতে তিনি নবী মুহাম্মদের নবুওয়াতের ২৩ বছর সময়টাকে খুবই সূক্ষ্মভাবে তার মত করে ব্যাখ্যা করেছে। অলৌকিকতা যে শুধুমাত্র বিভ্রম নয় এ বিষয়টি খুবই সহজ করে বইটিতে তুলে ধরেছে। ধর্মে সন্দেহ পোষণকারী বেশিরভাগ মানুষই ধর্মকে কটাক্ষ করে মন্তব্য ও বই লিখে থাকে। এক্ষেত্রে আলী দোস্তি নবী মোহাম্মদের সময়টাকে বাস্তব অর্থে উপলব্ধি করে বোঝার চেষ্টা করেছে এবং পাঠকদেরও সেভাবে বোঝাতে চেয়েছে। নবী মুহাম্মদ যখন তার দক্ষতা, কৌশল, বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হন, তখন সেই কাজকে অলৌকিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়না। নবি মুহাম্মদ এই অর্থে সে সময় অসাধ্য সাধন করেছেন। এই বিষয়গুলিকে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে যেখানে অলৌকিকতা হিসেবে দেখা হয় সেখানে লেখক বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করেছে। স্বভাবতই ধর্মের কিছু বিষয় তখন বিশ্বাসে আঘাত হানে, যার জন্য বইটি আরব দেশে ও অন্যান্য মুসলিম দেশে নিষিদ্ধ করা হয়।
নিষিদ্ধ বইয়ের মধ্যে সম্ভবত আমি এই বইটি সর্বাধিকবার পড়েছি।

•লজ্জা: তসলিমা নাসরিনের লেখা এই বইটি নিয়েও এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনা হয়। লেখিকা ১৯৯৩ সালে বইটি প্রকাশ করে। প্রকাশিত হওয়ার ছয় মাসের ভিতরেই বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এখনো বইটি বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশে নিষিদ্ধ আছে। বইটিতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হিন্দু মুসলিমের যে দাঙ্গা বেধেছে সেটাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। সেসময় এদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় কিভাবে নির্যাতিত হয়েছিল তার বর্ণনা দেওয়া ছিল গল্পের ছলে। তবে লেখিকা বর্ণনা দিতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে খুবই খারাপ ভাবে কটাক্ষ করে, যার জন্য বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। লজ্জা বইটি প্রকাশিত হওয়ার ছয় মাসের ভিতরেই প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
এই বইয়ের রেশ ধরেই লেখিকার প্রতি এত পরিমান বিদ্বেষ জমা হয়েছে, যার জন্য তাকে নিজ জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছে। তসলিমা নাসরিন এখনো তিনি নির্বাসিত জীবন পার করছে।

•বিশ্বাসের ভাইরাস: বইটি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার অভিজিৎ রায় লিখেছিল। বইটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। লেখক বইটিতে কিভাবে ধর্মান্ধতা মানুষকে বিবেকের দিক থেকে অন্ধ করে দেয় সে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টা করতে গিয়ে লেখক ধর্মের বিভিন্ন বিশ্বাসগত দিকগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার জন্য স্বভাবতই ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত হয়েছে বলে এই বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। আর এতেই বইটি পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বইটি যদি আপনি পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন বইটি লেখার জন্য লেখক কঠিন পরিশ্রম করেছে। বইটি যে লেখক দীর্ঘ সময় ধরে সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছে সেটাও বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় বোঝা যায়।
অবশেষে শুধুমাত্র নিষিদ্ধ হয়ে এই বইয়ের বিতর্ক শেষ হয়নি। লেখককে বইটি প্রকাশ করার জন্য শেষমেষ জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে!

•বিষফোঁড়া: ২০২০ সালে তরুণ উদীয়মান লেখক সাইফুল বাতেন টিটো বইটি লিখেছিল। বইটিতে তিনি তার দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানমূলক গবেষণা থেকে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার আবাসিক বাসস্থানে বাচ্চাদের উপর কি ধরনের যৌন নির্যাতন চলে তার বর্ণনা দিয়েছে। স্বভাবতই এই বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য করেছে। আর যার জন্যই তিনি ধর্মীয় শিক্ষকদের রোষানলে পড়ে এবং তার বইটি নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে প্রচন্ড চাপ দেওয়া হয়। ঐ প্রেক্ষিতে এক সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বইটিকে নিষিদ্ধ করে।
বইটি প্রকাশ করে এ তরুণ উদীয়মান লেখক প্রচন্ড সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছে। তবে বইটির জন্য আমার মতামত হচ্ছে, লেখক চাইলে তার লেখায় আরো সুন্দর শব্দ চয়ন করতে পারতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:৫৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×