বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর কেটে গেলেও তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি।
গত ৫ আগষ্টের পর থেকে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এবার তিনি দেশে ফিরে সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে দেশে না ফিরলেও তার রাজনৈতিক তৎপরতা আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। তিনি এখনো লন্ডন থেকেই ভার্চুয়ালি দলের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।
তার দেশে না ফেরার পেছনে নানা কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ বলছেন, মামলার ভয় বা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; কেউ আবার নিরাপত্তাজনিত কারণ উল্লেখ করছেন। তবে এসব কারণ যথেষ্ট জোরালো নয় বলে আমার মনে হয়। আসল সত্যটি তারেক রহমান ও তার কিছু ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কেউ জানেন না।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, তিনি রাজনীতিতে ফেরার জন্য উপযুক্ত সময় ও পরিপূর্ণ প্রস্তুতির অপেক্ষায় আছেন। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও তার রাজনৈতিক বক্তব্য এখন অনেক পরিণত ও কৌশলের দিক থেকে ম্যাচিউর। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—তিনি রাজনীতিকে যেভাবে দেখতে ও করতে চাচ্ছেন, ক্ষমতায় এসে তা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন?
আমার মতে তিনি দেশে ফিরে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান। এক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্ন হলো, যদি আগামীকাল তিনি দেশে ফিরে আসেন, তবে দলের নেতৃত্বে যে পরিবর্তন আসবে—তা কি সবাই মেনে নেবে? এছাড়া যখন তিনি ফিরে আসবেন, তাহলে ড. ইউনুসের সরকারের নেতৃত্বে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ড. ইউনুস দেশ চালাবেন আর তারেক রহমান দল চালাবেন; সভা, সেমিনার করে সময় কাটাবেন এটা বিএনপি ও তারেক জিয়া মানতে পারবে না।
তারেক রহমান সম্ভবত দেশের মিছিল-মিটিং, সমাবেশ-সেমিনারে জড়িয়ে পড়ে নিজের ভাবমূর্তি ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না। বরং তিনি পরিকল্পিতভাবে একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজনীতির কেন্দ্রে ফিরে আসতে চান। দেশে ফিরলে বিএনপির বর্তমান নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সরাসরি তার ওপর এসে পড়বে, যা বিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইবে।
সবশেষে বলা যায়, এখনো পর্যন্ত তারেক রহমান বা বিএনপির মধ্যে ড. ইউনুসকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত বা প্রস্তুতি নেই। সে কারণেই তারেক রহমান এখনো দেশে ফিরে সরাসরি রাজনীতি করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তিনি বরং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণার জন্যে কৌশলগতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৪