
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও স্বপ্নের ফসল। এই যুদ্ধ শুধু একটি ভৌগোলিক স্বাধীনতা এনে দেয়নি, বরং তা আমাদের জাতীয় পরিচয়, সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব এবং চেতনার ভিত্তি নির্মাণ করেছে। পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কোনো দলীয় মতবাদের নয়—এটি পুরো জাতির।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” শুধু একটি গান নয়, এটি এক গভীর আত্মিক বন্ধন। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে, যেকোন পরিস্থিতিতে এই গানটির সুর বাজলে একজন প্রকৃত বাঙালির হৃদয়ে শিহরণ জাগে। সেই অনুভূতি রাজনীতি বোঝে না, বোঝে না ধর্ম, জাতি কিংবা শ্রেণিবিভাগ—এটি বোঝে মাটি, মা, ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার টান।
স্বাধীনতা ও পাকিস্তান-আবেশ
আজও যখন কেউ পাকিস্তানকে "ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ" বলে, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চায়, তখন তা শুধু শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান নয়—বরং গোটা জাতির আত্মপরিচয়কে অস্বীকার করার সামিল। কিছু কণ্ঠস্বর আজও পাকিস্তান প্রীতির নামে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।
জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক চর্চা: দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে
নিজের দেশকে ভালোবাসতে, মাটির প্রতি টান রাখতে কিংবা বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, ও সংস্কৃতি চর্চা করতে কাউকে নির্দিষ্ট দলের হতে হয় না। বাঙালি হতে হয়। জাতি হিসেবে আমাদের চেতনা ও ঐতিহ্য দলীয় রাজনীতির গণ্ডির বাইরেই প্রস্ফুটিত হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজ অনেক ক্ষেত্রেই দেশপ্রেম ও সাংস্কৃতিক বোধকেও দলীয় রঙে রঙিন করে ফেলা হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: জাতির উন্নয়নের অন্তরায়
বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। শাসক দল ও বিরোধীদলের মধ্যকার চরম বিভাজন, মিথ্যা প্রচার, ক্ষমতার দখল নিয়ে সংঘর্ষ, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন—সবই জনমানুষের আস্থায় আঘাত করছে। জনগণ উন্নয়ন চায়, কর্মসংস্থান চায়, শান্তি ও নিরাপত্তা চায়—কিন্তু তা আজ রাজনীতির হট্টগোলের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
সমাধানের পথ: ঐক্য, সচেতনতা ও ইতিহাস চর্চা
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিহাস ভুলে যাওয়া যাবে না। বিভাজনের রাজনীতি নয়—দরকার ঐক্যের রাজনীতি। প্রয়োজন গণতন্ত্রের সুসংহত চর্চা, শিক্ষিত ও সচেতন নেতৃত্ব, এবং একটি সংস্কৃতি যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইতিহাসের সত্যতা, ও জাতির স্বার্থ প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশ কারো একার নয়, এটি আমাদের সকলের। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা যদি নিজেদের বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি—তবে সেটিই হবে সকল শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা, আর আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ভিত্তি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



