
একটা কথায় কতটা ক্ষোভ, হতাশা আর বাস্তবতার প্রতিফলন হতে পারে—এই একটুকু বাক্যই তার প্রমাণ। এটা নিছক কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস না, এটা আজ হাজারো সাধারণ নাগরিকের কণ্ঠস্বর, যারা প্রতিদিন বাঁচার সংগ্রামে নাম লেখাচ্ছেন অথচ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সুবিধাভোগীরা যেন তাদের অস্তিত্বটুকুকেও অস্বীকার করে চলেছে।
রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়াই এখন যেন যুদ্ধ। রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল, পিজি বা বারডেম যেতে পারছেন না কেউ। কোথাও গেলে ঘন্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন থাকলেও সেসব যেন এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে।
ব্যবসায়ী যারা কাঁচাবাজারের ট্রাক পাঠান কাওরান বাজারে, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পৌঁছান বংশাল, নয়াবাজার বা সদরঘাটে, মেশিনারিজ আনেন নবাবপুর থেকে—তাদের জীবন তো আরও নরক হয়ে উঠেছে। রাস্তায় একটার পর একটা প্রতিবন্ধকতা, রাস্তা আটকে মিছিল-মিটিং, অবরোধ, ব্লকেড—সব মিলে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে, অথচ কেউ জবাবদিহি করে না।
একটা রাষ্ট্রযন্ত্র তখনই ব্যর্থ, যখন তার মূল জনগোষ্ঠী—যারা কর দিয়ে দেশ চালায়, শ্রম দিয়ে অর্থনীতি চালু রাখে—তারা নিজ দেশে নিজেদের পরিত্যক্ত মনে করে। আর আজ আমরা ঠিক সেই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে আছি। কে মেয়র হবে, কে হবে উপদেষ্টা—সেটা নিয়ে এত মাতামাতি অথচ মানুষ যে চলার পথ হারিয়ে ফেলছে, তা নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই।
আরও কষ্টদায়ক বিষয় হলো—হাইকোর্টের রায় পর্যন্ত বদলানোর দাবিতে একের পর এক আন্দোলন হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে সাধারণ মানুষ কোথায় দাঁড়াবে? যদি আদালতের রায়ও নিজের পছন্দ অনুযায়ী বদলাতে চায় কেউ, তাহলে সেই রাষ্ট্রে আইনের শাসন বলে কিছু থাকলো কি?
সবচেয়ে বড় কথা, যারা সব সুবিধা ভোগ করছেন, তাদের পদপদবী কি জনগণের কোনো কাজে লাগছে? না। তারা বরং জনগণের পথ আটকে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছেন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বললেই শুনতে হয়—“বিরক্ত হবেন না!” অথচ দেশের প্রকৃত কর্ণধার—এই সাধারণ মানুষগুলোই দিনদিন কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে।
তবে মানুষ আশা ছাড়ে না।
এই লেখা কোনো রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে নয়—এই লেখা তাদের জন্য, যারা এখনো বুকে দেশ নিয়ে ভালোবাসা ধারণ করেন। সময় এসেছে, কথাটা বলার—“আমার পথ আটকিয়ে আপনি আপনার স্বার্থ উদ্ধার করতে পারেন না, আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বলুন”।
এই শহরের প্রতিটি ভাঙা রাস্তা, প্রতিটি ক্লান্ত মুখ, প্রতিটি বন্ধ গাড়ি—সাক্ষী দিচ্ছে, এখন সময় কাজের, কথার নয়। জনগণ আর দেখতে চায় না কে পদ পেল, কে চেয়ার পেল। তারা চায় শুধু চলাচলের পথটা মুক্ত হোক, জীবনের পথটা সহজ হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




