
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক অদ্ভুত দৃশ্যপট আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট চায় নির্বাচন ও কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির পদত্যাগ; অন্যদিকে সেই ব্যক্তিদের নিয়েই আলোচনার টেবিলে বসছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এমন দ্বৈততা কেবল প্রশ্নই তোলে না—জাগিয়ে তোলে সন্দেহ, কৌশল আর উদ্দেশ্য নিয়ে।
সম্প্রতি ড. ইউনুস বৈঠকে বসেছেন বিএনপি নেতাদের সাথে। তার পাশে ছিলেন ড. আসিফ মাহমুদ, যিনি পরোক্ষভাবে এনসিপির সঙ্গে যুক্ত এবং যার পদত্যাগের দাবি বারবার তুলেছে বিএনপি। আশ্চর্যের বিষয়, যাঁর ওপর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার অভিযোগ রয়েছে, যাঁর ব্যক্তিগত এপিএস-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে—তাঁকে নিয়েই বিএনপির সাথে আলোচনায় বসেন ড. ইউনুস।
এই দৃশ্যটিকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। কেউ বলতে পারেন, ড. ইউনুস এইভাবে আসিফ মাহমুদকে পাশে রেখে বিএনপিকে একধরনের বার্তা দিয়েছেন—হয়তো অবচেতনেই বিএনপিকে হেয় করে দিয়েছেন বা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায়। আবার এটাও হতে পারে, আলোচনার নামে বিরোধী পক্ষকে কৌশলে কোণঠাসা করে তোলা হচ্ছে, যেন তারা আলোচনার টেবিলেই বারবার ফিরে আসে, কিন্তু অর্জন থাকে শূন্যের কোঠায়।
একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন এখানেই উঠে আসে—ড. ইউনুস কি সত্যিই সমাধান খুঁজছেন, না কি রাজনৈতিক টানাপোড়েনকে জিইয়ে রাখার একটি ভূমিকা পালন করছেন? কারণ আলোচনার ভাষা যদি কূটনৈতিক হয়, তাহলে এই বার্তাটি বিএনপি নিশ্চয়ই বুঝে নিয়েছে—আজকের আলোচনা থেকে বড় কিছু আসার সম্ভাবনা নেই।
আরেকটি বিষয় রয়েছে এই চিত্রের— আওমী লীগের ফিরে আসার ভয় দেখিয়ে বারবার বিএনপিকে আলোচনায় আনানো, আর আলোচনার নামে ‘মুলো ধরিয়ে’ দেওয়া। এ যেন এক গভীর রাজনৈতিক নাটক, যেখানে আলোচনার কুশীলবরা আসলে নিজেরাই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছেন।
বিএনপি যদি সত্যিই পরিবর্তন চায়, তাহলে তাদেরও হয়ত দরকার আরও সরাসরি অবস্থান নেওয়া। আর ড. ইউনুস যদি মধ্যস্থতাকারী হতে চান, তাহলে নিরপেক্ষতার বার্তাটা স্পষ্টভাবে দেওয়া জরুরি।
আজকের এই রাজনৈতিক বিভ্রান্তির কেন্দ্রে রয়েছে আস্থার সংকট। আর সেই সংকটের জন্যেই জন্ম নিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন—ড. ইউনুস কি সত্যিই সমাধানের পথ খুঁজছেন, না কি নিজেই এই অচলাবস্থার স্থপতি?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



