somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক খলিল উল্লাহ খান খলিলের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক খলিল উল্লাহ খান। নায়কোচিত অভিনয়জীবন তার। অভিনয়শিল্পী হতে চাননি কখনও তাই নায়কের খেতাব অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে কলিম শরাফী ও জহির রায়হান পরিচালিত 'সোনার কাজল' চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। ১৯৬৬ সালে এসএম পারভেজ পরিচালিত 'বেগানা' সিনেমায় প্রথমবারের মতো খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপর বহু সিনেমায় তাকে খলচরিত্রে দেখা গেছে। ইতিহাসনির্ভর 'ফকির মজনু শাহ' সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেও তিনি ভূয়সী প্রশংসা পান। ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। বড় পর্দার এই অভিনেতা বেশ কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক সংশপ্তক এ মিয়ার বেটা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক নন্দিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান অভিনেতা খলিল উল্লাহ খানের আজ তার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় অভিনেতা খলিল উল্লাহ খান খলিলের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


খলিল উল্লাহ খান ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের মেদিনিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের কুমারপাড়ায়। বাবার চাকরিসূত্রে দুই বছর বয়সে সিলেটে চলে আসেন তিনি। সেখানেই তার শৈশব কাটে। তার পিতা মরহুম শফিউল হক খান ও মা মেহেরুন্নেছা। তার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন বলে তাকে মেদিনিপুর, কৃষ্ণনগর, বগুড়া, বর্ধমান, নোয়াখালী যেতে হয়। খলিলের শৈশব জীবন কেটেছিল এসব জেলাতেই। ১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন খলিল। এরপর ১৯৫১ সালে মদনমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। ১৯৫১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পরীক্ষা দিলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি করার সৌভাগ্য হয়নি খলিলের। তবে ১৯৫৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন আনসার বাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন আনসার ডিপার্টমেন্টে চাকরী করার পর বয়সের কারণে ১৯৯২ সালে তিনি চাকরী থেকে রিটায়ার করেন। খলিল তার ৫৪ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় আট শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে জহির রায়হান পরিচালিত সোনার কাজল ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে সোনার কাজল, আলোর মিছিল, অশান্ত ঢেউ, কাজল, জংলী ফুল, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, বেগানা, সমাপ্তি, তানসেন, নদের চাঁদ, মাটির ঘর, পাগলা রাজা, অলংকার, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, কন্যাবদল, সঙ্গম, সোনার চেয়ে দামি, বদলা, মেঘের পর মেঘ, আয়না, মধুমতি, ওয়াদা, বিনি সুতোর মালা, মাটির পুতুল, গুণ্ডা, বউ কথা কও, দিদার, আওয়াজ, নবাব, যৌতুক উল্লেখযোগ্য। বাংলার পাশাপাশি তিনি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যায়সে কহু, পুনম কি রাত, উলঝন প্রভৃতি। প্রতিটি ছবিতেই তার অনবদ্য অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করেছে। খলিল চলচ্চিত্র মাধ্যম ছাড়াও টেলিভিশনেও অভিনয়েও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আশির দশকে টেলিভিশন পর্দা আসেন খলিল। তার অভিনীত বিশেষ নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আব্দুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক। অভিনয় ছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।


(পরিবারের সদস্যদের সাথে খলিলউল্লাহ খান)
অভিনয়ের পাশাপাশি ১৯৬৫ সালে ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খলিল পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘সিপাহী’ ও ‘এই ঘর এই সংসার’ নামে দুটি সিনেমার প্রযোজনাও করেছেন তিনি। প্রয়াত পরিচালক আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘গুন্ডা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান খলিল। এ ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সুমিতা দেবী ও সুলতানা জামান। প্রায় ৮০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনেতা। খলিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কুমকুমের গুন্ডা ছবিতে অভিনয় করে খলিল সর্বপ্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্যে ২০১২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন খলিল। তবে দুঃখ জনক ঘটনা এই যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অভিনেতা খলিল যখন আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন, তখন মোহাম্মদপুরের নিজ অফিসে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তার বড় ছেলে আল আমিন তারেক খান। উল্লেখ্য তার ছোট ছেলে বাবু ইন্তেকাল করেন ১৯৯৩ সালে।


২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন খলিল উল্লাহ খান খলিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, লিভার ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর ছেলে খালেদ খান জানিয়েছিলেন মৃত্যুর তিন দিন আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি চিকিৎসক খালেদ মোহসিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে ২০১১ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গিয়েছেন। তার মৃত্যুর আগে তার আরও দুই ছেলে মারা গেছে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা খলিল উল্লাহ খানের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় এই দাপুটে নায়ক, চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত খলিল উল্লাহ খান খলিলের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×