somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

বহুমুখী প্রতিভাধর সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম বজলুর রশীদের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ, ন, ম, বজলুর রশীদ। ‘জানি না ফুরাবে কবে এই মধুরাতি’- সমর দাসের সুরারোপিত এই একটি গানের জন্য হলেও আ,ন,ম, বজলুর রশীদকে আমাদের মনে না রেখে উপায় নেই। কারণ এটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলোর একটি। জনপ্রিয়তাই এই গানের একমাত্র গুরুত্ব নয়, শিল্পসম্মত গান হিসেবেও এটি যথেষ্ট স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাসাহিত্যে তিনি বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গানসহ সাহিত্যের সব শাখায় তার স্বদর্প বিচরণ ছিল। স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে প্রবন্ধ লিখে ‘ভগবতীচরণ স্মৃতিপদক’ লাভ করেন। এটিই তার সাহিত্যের প্রথম স্বীকৃতি। তখন থেকেই কবিতা লেখার প্রতি আকৃষ্ট হন। কী কবিতা, কী নাটক, কী উপন্যাস, কী গীতরচনা, কী প্রবন্ধ, কী অনুবাদ- সকল ক্ষেত্রেই তিনি সৃজন-মননের ছাপ রেখেছেন। বাংলাদেশের সাহিত্যের সূচনালগ্নে অসামান্য অবদান রেখেছেন আ,ন,ম, বজলুর রশীদ। নাট্যকার হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি বেশি জুটলেও তিনি কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষত ষাটের দশকে লেখা তাঁর নাটকগুলো তো সমকালে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল। কারণ, পাকিস্তান শাসনামলে নাটকের ওপর যে ধরনের বাধা-নিষেধ ছিল, সেসব উপেক্ষা করেই আনম. বজলুর রশীদ নাট্যচর্চা করেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি দেশের শি্ক্ষাবিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছন। কেবল শিক্ষকতা নয়, শিার্থীদের পাঠচাহিদা পূরণে তিনি পাঠ্যপুস্তক রচনায়ও আত্মনিয়োগ করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও পরে মহাবিদ্যালয়ে এবং শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আ,ন,ম, বজলুর রশীদ। "আমাদের দেশ তারে কত ভালবাসি, সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি" কবিতার কবি আ,ন,ম, বজলুর রশীদের আজ ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। বহুমূখী প্রতিভার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম, বজলুর রশীদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


আ, ন, ম, বজলুর রশীদ, পুরো নাম আবু নয়ীম মুহম্মদ বজলুর রশীদ। ১৯১১ সালের ৮ মে ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন বজলুর রশীদ। তাঁর বাবার নাম হারুনুর রশীদ আর মায়ের নাম নছিমুননেসা। তাঁর বাবা নদীয়া জেলায় তৃতীয় মুসলিম গ্র্যাজুয়েট এবং পেশায় ছিলেন আইনজীবী। বজলুর রশীদ ফরিদপুর জি.টি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পড়ালেখায় তিনি মেধাবী ছিলেন। প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩১ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৩৩ সালে বিএ পাস করেন। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। বিএ পাসের ২১ বছর পর এমএ পাস করার মতো ধৈর্য তিনি ধারণ করেছিলেন। দীর্ঘকাল পর ১৯৫৪ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে তিনি কলকাতা বিশঙ্কবিদঞ্ঝালয় থেকে বাংলায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে বজলুর রশীদ ১৯৩৪ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় স্কুল শিক থেকে ঢাকা টিসার্চ টেইনিং কলেজের অধ্যাপক হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি স্কুলে চাকরি করার পর ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং এখান থেকেই ১৯৭২ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৩-৭৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৭৫-৮০) ইংরেজি বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। আ,ন,ম, বজলুর রশীদ ছিলেন জসীমউদ্দীন-প্রভাবিত কবি। জন্মসূত্রে তিনি জসীমউদ্দীনের প্রতিবেশী। তার চার ক্লাস উপরে পড়তেন কবি জসীমউদদীন। তিনি সে সময়ে বজলুর রশীদের কবিতা সংশোধন করে দিতেন। সেই বিচারে বলা যায়, জসীমউদ্দীনও তাঁর কাব্যগুরু। জসীমউদ্দীন তখন এমএ পড়ার জন্য কলকাতায়। বাড়িতে এলে আ.ন.ম. বজলুর রশীদ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় জসীমউদদীন তাঁর যন্তস্থ ‘বালুচর’ কাব্যের ভূমিকা লেখার জন্য বজলুর রশীদকে অনুরোধ করেন। বজলুর রশীদ সেই অনুরোধ রক্ষা করেন। এভাবে জসীমউদ্দীনই সম্ভবত তাঁর কাব্যপ্রতিভাকে যথাযথ সনাক্ত করতে পেরেছিলেন।


আ,ন,ম বজলুর রশীদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলীঃ
কাব্যগ্রন্থঃ ১। পান্থবীণা (১৯৪৭), ২। মরুসূর্য (১৯৬০), ৩। শীতে বসন্তে (১৯৬৭), ৪। রঙ ও রেখা (১৯৬৯), ৫। এক ঝাঁক পাখি (১৯৬৯), ৬। মৌসুমী মন (১৯৭০), ৭। মেঘ বেহাগ (১৯৭১), ৮। রক্ত কমল (১৯৭২)
নাটকঃ ১। ঝড়ের পাখি (১৯৫৯), ২। যা হতে পারে (১৯৬২), ৩। উত্তরফল্গুনী (১৯৬৪), ৪। সংযুক্তা (১৯৬৫), ৫। ত্রিমাত্রিক (১৯৬৬), ৬। শিলা ও শৈলী (১৯৬৭), ৭। সুর ও ছন্দ (১৯৬৭), ৮। উত্তরণ (১৯৬৯), ৯। রূপান্তর (১৯৭০), ১০। একে একে এক (১৯৭৬), ১১। ধানকমল।
উপন্যাসঃ ১। পথের ডাল (১৯৪৯), ২। অন্তরাল (১৯৫৮), ৩। মনে মনান্তরে (১৯৬২), ৪। নীল দিগন্ত (১৯৬৭),
ভ্রমনকাহিনীঃ ১। দ্বিতীয় পৃথিবীতে (১৯৬০), ২। পথ বেঁধে দিল (১৯৬০), ৩। দুই সাগরের দেশে (১৯৬৭), ৩। পথ ও পৃথিবী (১৯৬৭)
প্রবন্ধঃ ১। আমাদের নবী (১৯৪৬), ২। আমাদের কবি (১৯৫১), ৩। রবীন্দ্রনাথ (১৯৬১), ৪। জীবন বিচিত্রা (১৯৬২), ৫। পাকিস্তানের সুফীসাধক (১৯৬৫), ৬। স্কুলে মাতৃভাষা শিক্ষণ (১৯৬৯), ৭। ইসলামের ইতিবৃত্ত (১৯৭২)


আ,ন,ম, বজলুর রশীদ তাঁর সাহিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ভগবতীচরণ স্মৃতি পদক’ ছাড়াও বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ঢাকা বেতার-এর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং পাকিস্তান সরকারের ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় সফলতার পরিচয় থাকা সত্ত্বেও আ.ন.ম. বজলুর রশীদকে যেন ভুলতে বসেছি। তাঁর কাজের মূল্যায়ন না করে তাঁকে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দেয়ার দায় বাঙালি হিসেবে আমাদেরকেই বহন করতে হয় কারন আ,ন,ম, বজলুর রশীদকে নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা-সমালোচনা প্রকাশিত হয়নি। আজ তার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বহুমূখী প্রতিভার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম, বজলুর রশীদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×