somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৬ দফার নীতি নির্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম খান সারওয়ার মুরশিদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাষা আন্দোলন সহ বাংলাদেশের সকল গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকার খান সারওয়ার মুরশিদ। তিনি ছিলেন জ্ঞান সন্ধানী ব্যক্তি, একজন সংগঠক, বিভিন্ন আন্দোলনের অগ্রনায়ক, একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন দক্ষ কূটনীতিক এবং দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী যোদ্ধা। আজীবন তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা; এবং শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তিতূল্য প্রতিভা। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পর ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা নিউ ভ্যালুজ প্রকাশনা করে তিনি দেশের বিদ্যোৎসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেলন। জীবদ্দশায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া খান সারওয়ার মুরশিদ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্বও পালন করেছেন। খান সারওয়ার মুরশিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার নীতি নির্র্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ত‍ৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের উপদেষ্টা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর পরিবারের সবাই বিশেষ করে তাঁর স্ত্রী নূরজাহান মুরশিদ, দুই মেয়ে-ছেলে সকলেই জড়িত ছিলেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এছাড়া তিনি কমনওয়েলথ এর সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যূর আগ পর্যন্ত তিনি মানবাধিকার ভিত্তিক সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের চেয়ারম্যান ছিলেন। খান সারওয়ার মুরশিদের স্ত্রী প্রয়াত নূরজাহান মুরশিদ বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী. শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রদূত খান সারওয়ার মুরশিদের আজ ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী যোদ্ধা খান সারওয়ার মুরশিদের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


খান সারওয়ার মুরশিদ ১৯২৪ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার নাসিরাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলী আহমদ ছিলেন অবিভক্ত বাংলার এবং পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাবস্থাপক পরিষদের সদস্য। মাতা মরহুমা বেগম সিদ্দিকা খানম। নিজ বাড়ীতেই শিক্ষানুকূল পরিবেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাইস্কুলে আনুষ্ঠানিক অধ্যয়নের শুরু করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এ স্কুলের ছাত্র হিসাবে ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দের প্রবেশিকা (বতর্মান এস.এস.সি) পরীক্ষায় পাস। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এফ. এ (ইন্টারমিডিয়েট)। কিছুদিন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশুনা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে অধ্যয়ন এবং ১৯৪৮-এ ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী অর্জ্জন করেন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। দুরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি খান সারওয়ার মুরশিদ বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে কাজ করে গেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘সংস্কৃতি সংসদের’ প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলের লেখক সংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ১৯৫২ সালে বাংলাভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। তৎকালীন পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তিনি পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর প্রবল বাধা পেরিয়ে বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ, ড: গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালন করেন। খান সারওয়ার মুরশিদ রবীন্দ্র জন্মশতবার্র্ষিকী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্র জন্মশতবার্র্ষিকী পালনের পর বনভোজনের আয়োজন করা হয়, আর সেখানেই আজকের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের সৃষ্টি। ১৯৬৫ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ড. মুরশিদ প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং সরকারের গঠিত প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরি তিনি বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু করেন। ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত খান সারওয়ার মুরশিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপাচার্য থাকাকালে ‘ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’গঠন করেন। তিনি ফরাসি বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী আঁদ্রে মালরোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন জানানোর সম্মানার্থে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান এবং সম্মানজনক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করেন।


খান সারওয়ার মুরশিদ তাঁর কর্মজীবনে শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। বৃদ্ধিজীবি এবং চিন্তাবিদ হিসেবে প্রসিদ্ধি থাকলেও তার লেখালিখির পরিমাণ খুবই কর্ম তাঁর একমাত্র গ্রন্থ কালের কথা ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ মাওলা ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত। তবে তাঁর কিছু ইংরেজী প্রবন্ধ-নিবন্ধ অগ্রন্থিত অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাকে "আজীবন সম্মাননা" প্রদান করেন। এছাড়াও ২০০৬ সালে তিনি জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক, ২০১৮ সালে কণ্ঠশীলন পুরস্কার, ২০১০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০১০ তাঁর সম্মানেখান সারওয়ার মুরশিদ সংবর্ধনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ দিন তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৪-এ হৃদপিন্ডের সারাই হয়েছিল সফল। বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরের হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন। ২০১২-এর মাঝামাঝি শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ধরা পড়লে অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি একাধিকবার হূদরোগে আক্রান্ত হন। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্শ্চেপূর্তণ নিশ্চেতন হয়ে পড়লে তাঁকে কৃত্রিম ব্যবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ২০১২ সালেল ৮ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। মৃত্যুকালেতার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এই মহান শিক্ষাবিদ সংগ্রামী মানুষটি জীবনভর এ দেশের কথা ভেবেছেন, মানুষের কথা ভেবেছেন, বিনিময়ে তিনি কিছুই আশা করেননি। আদর্শ শিক্ষক হতে হলে যে বিষয়গুলো করতে নেই, তিনি সেগুলো কখনো করেননি। একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সমাজের শিক্ষকে উপনীত হয়েছিলেন। পরিতাপের বিষয় বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সংগ্রামী চেতনার বাহককে জাতীয়ভাবে আজ পর্যন্ত কোন সম্মান জানানো হয়নি। তবুও আগামী প্রজন্মের কাছে অধ্যাপক সারওয়ার মুরশিদ খান একজন আদর্শ শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নবজাগরণের মূর্ততার প্রতীক হয়ে থাকবেন। বরেণ্য শিক্ষাবিদ সারওয়ার মুরশিদ খানের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। খান সারওয়ার মুরশিদ সমাজ উন্নয়নে অনেক কিছুই চিন্তা করতেন। অনেক কাজও হাতে নিয়েছিলেন। তার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেয়াই হবে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। সমাজের দর্পণ খান সারওয়ার মুরশিদের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৫
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×