করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা সুপার সাইক্লোনে রুপ নেয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টার দিকে বাংলাদেশের উপকূল দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। ‘আম্পান’ বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের সুন্দরবন অংশে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ আঘাত হানতে পারে। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ ̈বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত হতে বুধবার বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঝড়ের মূল অংশ সুন্দরবন অংশে এলেও এর প্রভাব পড়বে চারদিকেই। ইতোমধ্যেই আম্পানের প্রভাব শুরু হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলেও বিকেলে দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে আবওহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপার সাইক্লোন আম্পান উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে কাল (বুধবার) ভোররাত থেকে বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গত ১২ ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে ঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকার সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে মোংলা ও পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
নামকরণঃঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এখন বাংলাদেশ অভিমুখে এগোলেও এর নামকরণ হয়েছিল আজ থেকে ১৬ বছর আগে। ২০০৪ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সভায় আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনের নামকরণ নিয়ে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় সে সময়ই আম্পান নাম তালিকায় যুক্ত হয়। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য ৬৪টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে। আম্পান সেই তালিকার শেষ নাম । ‘আম্পান নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই ভাষায় ‘আম্পান’ অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি। ২০০৭ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্তভাবে নামকরণ শুরু করে আবহাওয়া অধিদফতর। ওই বছরের নভেম্বরে আঘাত হানা প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয় ‘সিডর’। সিডরের পর তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া একেরপর এক ঝড়ের নামকরণ হয়- আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, নার্গিস, ফণী ও বুলবুল ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আম্পান’। ক্রান্তীয় অঞ্চলের ৮টি দেশ মিলে ১৬ বছর আগে এই তালিকা প্রস্তুত করে। সেই তালিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার ১৩টি দেশ মিলিয়ে ১৬৯টি নামের নতুন তালিকা প্রস্তুত করেছে। আম্পান শেষে পরবর্তী সাইক্লোনের নাম ওই তালিকা দিয়েই শুরু হবে।
“করোনা ভাইরাসের এই কঠিন দুর্যোগের সময় ঘূর্ণিঝড় আমফানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি জাতিকে দারুণভাবে বিচলিত করেছে। বিপদ যত বড় হোক, তা চিরদিনের নয়। বরং বিপদ যত বড় হোক না কেন, আল্লহর রহমত তার চেয়ে অনেক বড়। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমাদের মুক্তি অতি কাছেই। সুতরাং হতাশ হবেন না। অধৈর্য হবেন না। অস্থিরতা প্রকাশ করবেন না। আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকুন। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর নিজের সবকিছু সমার্পণ করুন। অন্যকেও আল্লাহর ওপর ভরসা করতে নিশ্চিন্ত করুন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এই সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।”
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২০ রাত ১:৩৫