somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের ৯৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথিতযশা ও স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি সংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র। রবীন্দ্রসংগীতের একজন অগ্রগণ্য গায়িকা ও বিশেষজ্ঞ। সুচিত্রা মিত্র ছিলেন একাধারে কণ্ঠশিল্পী, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, অভিনেত্রী, অধ্যাপিকা, রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা, লেখিকা (শিশুসাহিত্য ও রবীন্দ্রচর্চা-বিষয়ক)। দীর্ঘকাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। সংগীত বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের তথ্যকোষ রচনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সুচিত্রা মিত্র ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী, বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আলাউদ্দিন পদক পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা। তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মনিক ডি-লিট পেয়েছেন। তিনি কলকাতার শেরিফও ছিলেন। সুচিত্রা মিত্র জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও মনে প্রানে ছিলেন আমাদেরই লোক। একাত্তরে বাংলাাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বারবার বলেছিলেন- ওরা (পাকিস্তানিরা) অন্যায় করছে, ওদের মানসিক বিকৃতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে; ওদের প্রতিহত করা আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এ ঘটনার ১৭ বছর পরের কথা। বাংলাদেশ সেবার বন্যায় বিপর্যস্ত। লক্ষ লক্ষ মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। সেবারও ঘরে বসে থাকতে পারেননি সুচিত্রা মিত্র। দুর্গতদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে কোলকাতার রাস্তায় নেমেছিলেন অসংখ্য মানবতাবাদী। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। প্রবাদপ্রতিম রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান সুচিত্রা মিত্রের আজ ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৪ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের গুঝাণ্টি রেলস্টেশনে জন্মগ্রহণ করেন। স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা


সুচিত্রা মিত্র ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডের ডিহিরী জংশন লাইনে শালবন ঘেরা গুঝাণ্টি নামে একটি রেলস্টেশনের কাছে, ট্রেনের কামরায় সুচিত্রা মিত্রের জন্মগ্রহণ করেন। ট্রেনে জন্ম তাই ট্রেন নিয়ে নিজেই ছড়া লিখেছিলেনঃ
শুনেছি, রেলগাড়িতে জন্মেছিলাম
দুই পায়ে তাই চাকা
সারাজীবন ছুটেই গেলাম
হয়নি বসে থাকা।
যাই যদি আজ উত্তরে ভাই
কালকে যাবো দক্ষিণে
পশ্চিমে যাই দিনের বেলা
রাত্তিরে ঘুরি পুবকে চিনে।
(সংক্ষেপিত)
সুচিত্রা মিত্রের পৈত্রিক নিবাস কোলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে। তাঁর পিতা রামায়ণ-অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝা’র উত্তর পুরুষ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক। মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী।সুচিত্রা মিত্র ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান তাঁদের পৈত্রিক নিবাস ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে। কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেছেন্। এই স্কুলে পড়ার সময় গানের চর্চা শুরু হয় দুই শিক্ষক অমিতা সেন এবং অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে। এখানে স্কুল বসার আগে প্রার্থনা সংগীতের মতো করে গাওয়া হতো রবীন্দ্রনাথের গান। বিদ্যান্বেষী সুচিত্রা মিত্র পরবর্তীতে পড়াশোনা করেছেন স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। খুব অল্প বয়সে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিখতে শুরু করেন। বাবা ছিলেন রবীন্দ্র সংগীতের বিশেষ অনুরাগী। বাড়ীতে সংগীতের নিবিড় আবহ ছিল। তুমুল আড্ডা হতো এবং তাতে গানও হতো। তিনি বসে বসে গান শুনতেন। তাঁর মা-ও গান করতেন। মায়ের গলায় "সন্ধ্যা হল গো ও মা" গানটি শুনে বালিকা সুচিত্রা মিত্রের চোখ জলে ভরে উঠতো। পঙ্কজকুমার মল্লিকের গান শুনে রবীন্দ্র সংগীত শেখায় বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়েছিলেন। পরে তিনি যাদের কাছে গান শিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন - ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, শৈলজারঞ্জন মজুমদার এবং শান্তিদেব ঘোষ। ছেলেবেলায় তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ সাহচর্য লাভ করেছিলেন।


১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ক্লাস টেন-এ পড়ার সময় শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেছিলেন। ১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার মায়া পরিত্যাগ করে তিনি শান্তিনিকেতন চলে যান;- এর মাত্র কুড়ি দিন আগে রবীন্দ্রনাথ লোকান্তরিত হয়েছিলেন। সুচিত্রা ত্রিত্র রবীন্দ্রনাথের ছাত্রী ছিলেন না, তবে রবীন্দ্রনাথকে খুব কাছ থেকে দেখা ও জানার অভিজ্ঞতা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পনেরো দিন পর তিনি শান্তিনিকেতনে সঙ্গীত বিভাগে পড়তে যান। কবিগুরুর কাছে গান শিখতে পারেন নি, এটাই ছিল তার দুঃখ। ১৯৪৩-এ শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। কলেজ জীবনে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের মুক্তির জন্য পতাকা হাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেছেন, টিয়ার গ্যাসের ঝাঝেঁ নাকাল হযেছেন। মিছিল, প্রতিবাদ করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছেন। পরবর্তী জীবনে অবশ্য তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন। তবে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটি অক্ষূণ্ন ও অম্লান থাকে। একেবারে কৈশোরেই সুচিত্রা মিত্রের শিল্পী জীবনের শুরু। ১৯৪৫-এ প্রথম তাঁর গানের রেকর্ড বেরোয় তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। সেটা রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ড;- এক পিঠে "মরণেরে তুঁ হু মম শ্যাম সমান", অন্য পিঠে "হৃদয়ের একুল ওকুল দু’কুল ভেসে যায়"। দ্বিতীয় রেকর্ডটি তাঁর পিতার লেখা গানঃ এক পিঠে "তোমার আমার ক্ষণেক দেখা", অন্য পিঠে "আমায় দোলা দিয়ে যায়"।এরপর মৃত্যু অবধি তাঁর সাড়ে চার শরও বেশি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড বের হয়েছে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিযেট পরীক্ষা দেন সুচিত্রা মিত্র। একই বছর রবীন্দ্র সংগীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন৷ এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই অর্থনীতিতে সম্মান-সহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ১ মে তিনি ধ্রুব মিত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন জন্ম হয় তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান কুণাল মিত্রের। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সুচিত্রা মিত্রের।


সুচিত্রা মিত্র দীর্ঘকাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। এখানে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় প্রভাষক হিসাবে। তারপর পদোন্নতি পেযে রিডার হয়েছেন, অধ্যাপক হয়েছেন এবং "রবীন্দ্র সংগীত বিভাগের" প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ২১ বছর একনাগাড়ে শিক্ষকতার পর ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্র ভারতী থেকে অবসর নেন। রবীন্দ্র ভারতীতে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তিনি বাংলায় এমএ পাস করেন। সুচিত্রা মিত্র ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের একজন অগ্রগণ্য গায়িকা ও বিশেষজ্ঞ। সংগীত বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের তথ্যকোষ রচনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গেও তাঁর দীর্ঘকালের যোগসূত্র ছিল। ২০০১ সালে তিনি কলকাতার শেরিফ মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী এবং অভিনেত্রীর ভূমিকাও পালন করেছেন। ১৯৪১ তে বৃত্তি নিযে গান শেখার উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার আগেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকে অভিনয় করেছেন। পরিণত বয়সে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত দহন নামক চলচিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে নির্মিত উমাপ্রসাদ মৈত্রের জয় বাংলা এবং মৃণাল সেনের “পদাতিক”-এ অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, বিষ্ণু পাল চৌধুরীর টেলিফিল্ম আমার নাম বকুল-এর একটি পর্বে তিনি অভিনয় করেন।বেশ কিছু চলচিত্রে প্লে ব্যাক গায়ক হিসেবেও গান গেয়েছেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আর সংগীতের প্রতি আশৈশব ভালবাসা আর তীব্র টানে তিনি পুরোপুরি নিজেকে উৎসর্গ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে তিনি রবীন্দ্র সংগীতের প্রধান শিল্পী হিসাবে আবির্ভূত হন। তাঁর গায়কী ঢং ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র প্রকৃতির। গান প্রাণ পেত তাঁর কণ্ঠে। রবীন্দ্র সংগীতের তুলনারহিত প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন তিনি অগণিত শ্রোতাদের কাছে । রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে অতুলপ্রসাদের গান, ব্রহ্মসংগীত, আধুনিক বাংলা গান এবং হিন্দি ভজন।


১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সংগীত নাটক অকাদেমি এ্যাওয়ার্ড তিনি পেয়েছেন ; এছাড়া এইচএমভি গোল্ডেন ডিস্ক এ্যাওয়ার্ড, বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে আলাউদ্দিন পুরস্কার লাভ করেছেন। আরো পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার-সহ নানা সম্মান। সাম্মানিক ডি-লিট পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়াও ১৯৪৫: লন্ডন টেগোর হিম সোসাইটি প্রদত্ত টেগোর হিম প্রাইজ, ১৯৫০: নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে স্বর্ণপদক, ১৯৭৪: ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মান, ১৯৭৯: বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার সমিতি প্রদত্ত পঙ্কজ মল্লিক স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮০: এইচএমভি প্রদত্ত গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮৫: ভারত সরকার প্রদত্ত সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৫: এশিয়ান পেইন্টস প্রদত্ত শিরোমণি পুরস্কার, ১৯৯০: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট. ১৯৯৭: বিশ্বভারতী প্রদত্ত দেশিকোত্তম, ১৯৯৭: পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত আলাউদ্দিন পুরস্কার, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট., যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট. পুরস্কারে ভূষিত হন।


জীবনের একেবারে শেষপর্বে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গান শেখানো প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র। কেবল ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে ভুলত্রুটি শুধরে নিতে অথবা তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে তাঁর বাড়িতে আসতেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি দ্বিপ্রাহরিক আহারের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি রেখে যান তাঁর একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পুত্র কুণাল মিত্রকে।৪ জানুয়ারি তাঁর মরদেহ নিয়ে এক বিরাট গণশোকযাত্রা বের হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন), রবীন্দ্রসদন ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগীত বিদ্যালয় রবিতীর্থে গুণমুগ্ধ, অনুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অপরাহ্নে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।


বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ঢাকায় এসে গান গেয়েছেন সুচিত্রা মিত্র। সবার মন জয় করেছেন সুচিত্রা মিত্র, বাঙালি সাংস্কৃতির একজন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথকে তিনি সম্পূর্ণ রূপে ধারণ করেছিলেন বলেই একজন বড় মাপের শিল্পী ও মানুষ হতে পেরেছিলেন। তাঁর মধ্যে শিক্ষা-রুচি ও আন্তরিকতার পরিচ্ছন্নতা এতো বেশি ছিল যে তার পরবর্তী দু প্রজন্মের শিল্পীরা উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে। তাঁর খুব কাছে গিয়ে আশীর্বাদ নিতে পেয়েছে। পঙ্কজ মল্লিক, দেবব্রত বিশ্বাস, আবদুল আহাদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কণিকা বন্দোপাধ্যায় , কলিম শরাফি ও সুচিত্রা মিত্র আমাদেরকে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনিয়ে যে বোদ্ধা বানাবার অবদান রেখে গেলেন, তার জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। রবীন্দ্র সঙ্গীত কন্যা হিসেবে বাঙালির মননে সাংস্কৃতিতে হৃদয়ে সুচিত্রা মিত্র নদীর মত বহমান থাকবেন। আজ এই গুণী শিল্পীর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় তাঁরজন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×