somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্নার উপকারিতাঃ কান্নায় শরীর ও মন ভালো থাকে

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কান্না হল মানবজীবনের অতীব কার্যকরী এক অনুচ্চারিত ভাষা। মানুষের জীবনের এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। জন্মের দিন থেকে কান্না আমাদের সঙ্গী হয়ে আছে। একজন বিশেষজ্ঞের মতে, শিশু অবস্থায় আমরা আমাদের কান্নার মাধ্যমে আমাদের কী দরকার, তা বোঝাতে চাই কারণ আমরা আমাদের আবেগগত ও শারীরিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য কাঁদি। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কাঁদে না। কেউ হয়তো একটু বেশি কাঁদে, কেউ কম। কান্না হচ্ছে আবেগের বহিঃপ্রকাশ। অনেকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। অনেকে পারেন না। অভিনয় শিল্পীরা অভিনয়ের স্বার্থে কাঁদেন। অর্থাৎ কান্নার অভিনয় করেন। আবার ভারতের রাজস্থানে ‘রুদালি’ নামে একটা সম্প্রদায়ের কথা শোনা যায় যারা নাকি ‘ভাড়ায়’ কান্না করেন! কারও মৃত্যুর পর মাতম করার জন্য, কাঁদার জন্য এই ‘রুদালি’ নারীদের ভাড়া পাওয়া যায়। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করে যে, কান্না আমাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশের এক কার্যকরী উপায় আর সেই কান্নাকে বার বার চেপে রাখলে, তা হয়তো আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আবার অন্যেরা যুক্তি দেখায়, কান্না যে শারীরিক অথবা মানসিকভাবে উপকার করে, তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তবুও সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ৮৫ শতাংশ মহিলা ও ৭৩ শতাংশ পুরুষ কাঁদার পর নিজেকে হালকা মনে করে থাকে। নোয়িমি নামে একজন মহিলা বলেন, “কখনো কখনো আমি বুঝতে পারি যে, আমার কাঁদা উচিত। আর কাঁদার পর আমার নিজেকে হালকা লাগে আর আমি বিষয়গুলোকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পাই।” কান্না নিয়ে এত কথা বলার কারণ কা্ন্নায় আছে বিশেষ উপকারিতা। শোকে-দুঃখে সবার চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই জল বেরিয়ে আসে। কথায় আছে 'কান্নায় নাকি কষ্ট দূরীভূত হয়।' এটি শুধু জনমানুষের কথা নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। বিভিন্ন গভেষণায় বলা হয়েছে, কাঁদার নাকি নানা রকম শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা রয়েছে। কান্না প্রধানত তিন রকমের হয় যথাঃ


১। বেসাল টিয়ার বা প্রতিবর্তী চোখের জলঃ যেটা আপনার চোখকে পরিষ্কার রাখে এবং চোখের লুব্রিকেশনের মাত্রা ঠিক রাখে। এই ধরনের চোখের জল তখনই আসে, যখন আমাদের চোখে কোনো কিছু পড়ে। আবার অন্যান্য কারণেও যেমন, হাই তুললে ও হাসলে চোখে যে-জল আসে, সেটাও প্রতিবর্তী চোখের জল।
২। রিফ্লেক্স টিয়ারঃ অশ্রু গ্রন্থি ক্রমাগত এই ধরনের স্বচ্ছ তরল পদার্থ উৎপন্ন করে, যা চোখকে রক্ষা করে এবং চোখের ভেতরের অংশকে পিচ্ছিল রাখে। এ ছাড়া, এটা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। যখন আমরা চোখের পাতা ফেলি, তখন এই তরল পদার্থ পুরো চোখে ছড়িয়ে পড়ে। পেঁয়াজ কাটার সময় বা চোখে কিছু একটা হঠাৎ ঢুকলে এই কান্না বের হয়।
৩। ইমোশনাল টিয়ারঃ এই ধরনের চোখের জল তখনই দেখা যায়, যখন আমরা প্রচণ্ড আবেগ অনুভব করার সময় কেঁদে ফেলি আর এটা একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। প্রতিবর্তী চোখের জলের চেয়ে এতে ২৪ শতাংশ বেশি প্রোটিন থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু মানুষ স্বাভাবিক কারণেই অন্যদের তুলনায় বেশি কাঁদেন। কিন্তু অনেকেই কান্না দমাতে বা লুকাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনটি করা মোটেও উচিত নয়। মনোচিকিৎসকেরা বলছেন, কান্নায় লজ্জার কিছু নেই, কান্না এলে কাঁদতে হবে। কারণ কান্নার অর্থাৎ চোখের জলের রয়েছে বিশেষ কয়েকটি উপকারিতা। মানসিক চাপ দূর করা থেকে শুরু করে মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আনতেও কান্না ভূমিকা রাখে। নিচে কান্নার নানা উপকারি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
কান্না চোখ পরিষ্কার করেঃ
কাঁদতে কাঁদতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে! কিন্তু আসলে কান্না আমাদের ভালো করে দেখতে সহায়তা করে। চোখের পানি চোখের মণি আর চোখের পাতা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিয়ে। চোখের ভেতরে এই পানির সঞ্চালন আমাদের চোখকে পানিশূন্যতা থেকেও বাঁচায়। ফলে চোখ পরিষ্কার রাখতে আর ভালো করে দেখতে সাহায্য করে কান্না।
কান্না ব্যাকটেরিয়া তাড়ায়ঃ
চোখের পানি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি-ভাইরাস হিসেবে কাজ করে থাকে। রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রামের ধুলো-বালি থেকে সারা দিনে চোখের ভেতর কত ময়লাই না জমা হয়। এগুলো থেকে নানা জীবাণু আমাদের চোখের বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু চোখের পানি এসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জীবাণু ধ্বংসে খুবই কার্যকর। চোখের পানিতে আইসোজাইম বলে একটা উপাদান থাকে, যা মাত্র ৫-১০ মিনিটেই চোখের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।
কান্না মানসিক চাপ দূর করেঃ অশ্রুর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ বেরিয়ে যায়। এর ফলে মানসিক চাপ কমে আসে। গবেষকরা বলছেন, যদি কান্না আসে, তবে সেটা হতে দেওয়া উচিত। এতে মানসিক চাপ কমে।
কান্না সম্পর্ক জোরদার করেঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো আরও জোরদার হয়। বিশেষ করে সান্ত্বনা এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যারা এগিয়ে আসে তাদের সঙ্গে। কেননা সব আবেগের মধ্যে কান্নাই সবচেয়ে বেশি সংক্রামক এবং শক্তিশালী।
মনোভাব পরিবর্তনঃ কান্নার পর মনে এবং শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি চলে আসে। কারণ কাঁদলে স্ট্রেস হরমোন শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং এন্ডরফিন বা যেটাকে ‘ফিল গুড’ হরমোন বলা হয় তা শরীরে নির্গত হয়। এ জন্যই বোধ হয় বলে, কাঁদলে মন হাল্কা হয়। গবেষকরা জানান, চোখের জলের সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বেরিয়ে যায়। এতে মনে এক ধরনের পরিচ্ছন্ন ভাব তৈরি হয়, যার ফলেই ভালো লাগা তৈরি হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে , কান্না শুধু আমাদের অনুভূতি প্রকাশ বাদেও নিরবে আমাদের অনেক উপকার করে . তাই কান্না আসলে তা জোড় করে আটকে রাখা ঠিক নয় । কারণ এতে মানুষিক ভাবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি , কাজ করার শক্তি হাড়িয়ে ফেলি। এছাড়াও উপরে উল্লেখিত সুবিধাগুলো থেকেও বঞ্চিত হই।


এটা ঠিক যে, চোখের জল সম্পর্কে রহস্য অধরাই থেকে গিয়েছে। তবে আমরা যা জানি তা হল, চোখের জল আমাদের আবেগকে প্রকাশ করার এক অন্যতম উপায়, যা মহান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার ভয়ে কান্নাকাটি করা ব্যক্তি মর্যাদা অনেক উঁচু মানের। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ভয়ে কান্নাকাটি করে হাদিসের ঘোষণায় তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি; তিনি বলেছেন, ‘দুটি চোখকে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না; প্রথম হলো সেই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর দ্বিতীয় হলো সেই চোখ; যা আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারায় রাতযাপন করে। (তিরমিজি)। অপর এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা সেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন; যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে ওই ব্যক্তি একজন, যে নির্জনে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে; আর তার চোখ থেকে পানি ঝরে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। মানুষের চোখের পানির মর্যাদা আল্লাহ তাআলার নিকট অনেক বেশি। তাই মানুষের উচিত তাঁর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে মানুষকে তাঁর সব বিধিবিধান মেনে চলার পাশাপাশি তাঁর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটির করার তাওফিক দান করুন। মানুষের মনে তাঁর ভয় ও মহব্বত সৃষ্টি করে দিন। আমিন।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৪৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×