somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

গাধার মানুষ হওয়া!! সংগৃহীত একটি বাংলার হাসির গল্প

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্লগটা কয়েকদিন ধরে কেমন যেন কুরুক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে। তাই আজ আর কোন গুরুগম্বীর প্রবন্ধ কিংবা কাব্য কথা নয়! আজ স্রেফ মজা করার জন্য একটি হাসির গল্প।
নিমাই। পেশায় ধোপা। তার একটা গাধা আছে। ইচ্ছে হলো গাধাটাকে নিয়ে একবার দূরের শহরে ঘুরে আসবে। নিজে তো দেখবেই, গাধাটাকেও শহর দেখানো হয়ে যাবে। সব দেখেশুনে যাতে ওটা মানুষ হয়- একটু মানুষের মতন হয়- এই হলো তার অনেক কালের সাধ।
গাধাকে সঙ্গে নিয়ে দূরের শহরে একমাত্র রাজারাই যেতে পারে। আর রাজাদের চেহারা ধোপদুরস্ত রাখা যাদের কাজ, তারাও পারেন হয়তো। যেমন- নিমাই। তা ছাড়া নিমাই চিরকালের সহচর এই গাধাকে ফেলে রেখে একলা কোথাও যেতে পারে! গাধাটা যে কেবল সারাদিন তার সঙ্গে চরে বেড়ায় তা নয়, মাঝেমধ্যে নিমাইও গাধার পিঠে চড়ে বসে। নিমাইয়ের সমস্ত বোঝাও থাকে গাধার পিঠে। নিমাই যেমন হাসিমুখে চাপেন আর চাপান, গাধাও মুখ বুজে সবকিছু বহন করতে বা বাহকের ভার সহ্য করতে কখনও পিছপা হয় না। গাধারা যে কখনও বিরক্ত করে না সেটা আমাদের ভাগ্য। যা হোক, নিমাই তো গাধাকে নিয়ে রওনা দিল। কিন্তু গাধাটাকে স্টেশন পর্যন্ত হাঁটিয়ে আনতে তাকে যা বেগ পেতে হলো, তা বলার মতো নয়। হতভাগা হাঁটতেই চায় না, যদি-বা হাঁটে, এক পা হাঁটতে প্রায় দু'মিনিট লাগে। রেলগাড়ি যে তার জন্য বসে থাকবে না সেই বুদ্ধিও যদি গাধার থাকে! শহর দেখার জন্য একটুও তার কৌতূহল আছে, চালচলন দেখে তা মনেই হয় না। সাধে কি আর তাকে সবাই গাধা বলে?
গাধারা একটু বেখেয়ালি হয়! বিশ্বসংসারে এই নির্বিকার জীবটিকে টেনেটুনে কোনো রকমে স্টেশনে পৌঁছল। টানাপোড়েনে দু'জনেই ক্লান্ত তখন। কিন্তু গাধাটাকে কোন কামরায় তুলবে? এ কথা জিগ্যেস করল স্টেশন মাস্টারের কাছে।
স্টেশন মাস্টার জবাব দিলেন, 'কোথায় আর তুলবেন! গাধা কি আবার ফাসটুকেলাসে যায় নাকি? গাধা যাবে পেছনের ভ্যানে। গাড়ির একদম পেছনে।'
নিমাই গাধাটাকে যথাস্থানে রেখে নিজের কামরায় এসে বসেছে। ঘণ্টাখানেক পর হঠাৎ তার খেয়াল হতেই পাশের সহযাত্রীকে ডেকে সে জানতে চেয়েছে, 'রেলগাড়িটা কত জোরে যাচ্ছে মশাই।'

'তা ঘণ্টায় ষাট মাইল তো হবেই।'
'ষা-ট মাইল।' নিমাই অবাক হয়, 'ঘণ্টায় ষাট- মানে, মিনিটে এক মাইল? বলেন কি মশাই?'
'তা ষাট না হলেও পঞ্চাশ তো বটেই।'
কিন্তু তাতেও নিমাইয়ের চমক কম নয়- কিন্তু গাধাটা যে মিনিটে এক পাও হাঁটতে পারে না।
'রেলগাড়ি আর গাধা কি এক হলো, মশাই?'
সহযাত্রীও যেন চমকে উঠলেন- 'গাধা তো রেলগাড়ি নয়, আর রেলগাড়িও তো আর গাধা নয়।'
'তা তো নয়।' বলল নিমাই।

বেশ একটু হিসাব করেই নিমাই ভাবনার জগতে ডুবে গেল- একেবারে আকাশ-পাতাল ফারাক। রেলগাড়ি যায় এক মিনিটে এক মাইল আর গাধা যায় মিনিটে আধ পা- ঘণ্টায় অন্তত কয়েক লাখ মাইলের তফাত তো হচ্ছেই।
দেখতে দেখতে নিমাইয়ের মুখ মিষ্টি হাসিতে ভরে ওঠে। তাকে ক্রমশই যেন বেশি খুশি হয়ে উঠতে দেখা যায়। অবশেষে সে আর নিজেকে চাপতে পারে না- 'যাক, আমার আশা তাহলে সফল, গাধাটা এবার মানুষ হবে। কত গাধাই তো হচ্ছে।'

তার উচ্ছ্বাসে সায় দেন সহযাত্রী- 'তবে সব গাধা কিন্তু সমান নয়। মানে, সবাই কিন্তু সমান গাধা নয়। অনেকে গাধাই থেকে যায়- কিছুতেই আর মানুষ হয় না।' 'তা না হোক, এই ধাক্কায় আমার গাধাটা যদি একটু চটপটে হতে শেখে তাহলেই আমি বাঁচি। ও খাটতে পারে বেশ, কিন্তু উৎসাহ একটু কম। নড়াচড়ায় ভারি নারাজ। এই ফাঁকে যদি একটু হাঁটতে ছুটতে শেখে তাহলে তা আমার ঢের লাভ।'
দীর্ঘশ্বাস পড়ে নিমাইয়ের- 'বলব কি মশাই, আমার পরিবারে- উহুঁ, পরিবার নয়- আমার বংশে- না বংশেও নয়- আমার সংসারে ও-ই একটি মাত্র গাধা। ওটা মানুষ হলো না, এই আমার বড়ো দুঃখ।
সবাই বলে, গাধা পিটিয়ে নাকি ঘোড়া করা যায়, কিন্তু আমার গাধাটাকে পিটিয়ে-পাটিয়ে কিছুতেই ঘোড়া করতে পারিনি মশাই। মানুষ তো দূরের কথা!'
এখন রেলগাড়ির প্যাঁচে পড়ে বাধ্য হয়ে যদি ওটা ঘোড়া- না না মানুষ হয়ে যায়! দেখা যাক, গাধাটাকে সঙ্গে নিয়েই তো তীর্থভ্রমণে বেরিয়েছি।
'তীর্থভ্রমণ?' সহযাত্রী হা হয়ে যান।
নিমাই বললাে রাজধানী যাচ্ছি। রাজধানী একটা তীর্থ ছাড়া কী? তা তীর্থ না বলেন, দেশ তো বলবেন? আমাদের দেশভ্রমণে বেরুনোও বলতে পারেন।' একথা বলে নিমাই হাঁফ ছাড়ে। তার সহযাত্রীর চোখ কিন্তু লাফালাফি শুরু করে দেয়- একসময় সেই চোখ কপালেই উঠে যায় সটান- 'কিন্তু আপনার সতীর্থটি কই? সেই গাধা কোথায়? তাকেও কি এক কামরায় তুলেছেন নাকি? কই, দেখতে পাচ্ছি না তো।'
চারদিকে তাকিয়ে নিলেন সহযাত্রী। অবশেষে নিমাইকেই তিনি ভালো করে দেখে নেন। তাক করে দেখেন তাকে। প্রায় যেন দেখতে পেয়েছেন- এমন একটু আভাস তার সন্দেহের চোখে। উঁকিঝুঁকিও মারতে থাকে।
'আজ্ঞে না, এখানে আর তুলতে দিল কই? স্টেশনের মাস্টার বললেন, গাধার স্থান কখনও মানুষের পাশে হতে পারে না। কিন্তু কেন মশাই বলুন তো? মানুষের সঙ্গে গাধার স্থান হতে পারে না। মানুষ কি এতই অপদার্থ? এতই অধম? এমনকি গাধার চেয়েও? কেন, মানুষের মধ্যেও কি গাধা নেই? আপনি তো অনেক দেখেছেন, আপনিই বলুন না। গাধার সমকক্ষ কাউকে দেখেননি কখনও আপনি?'

এ কথার আর কী জবাব দেবেন ভদ্রলোক? তিনি হয়তো নিমাইয়ের বাক্যের উদাহরণ নিমাইয়ের মধ্যেই দেখেছিলেন। কিন্তু সে কথা প্রকাশ করতে তার লজ্জা হয়। তিনি শুধু বলেন, 'গাধাটাকে কোথায় রেখে এলেন তাহলে?'
'কোথায় আর রাখব! যেখানে বলল সেখানেই। রেলগাড়ির একদম পেছনে তাকে বেঁধে দিয়েছি। বেশ শক্ত করে রেললাইনের সঙ্গে বাঁধা- পালাবার জো নেই। বলব কি মশাই, স্টেশনের ওইটুকু পথ আসতেও যা নাকাল করেছে আমাকে- প্রায় কাঁদিয়েই ছেড়েছিল। কিন্তু এখন? ঘণ্টায় ষাট মাইল করে রেলগাড়ির পিছু পিছু ছুটতে হচ্ছে- রামছুটুনি যার নাম। কিছুতেই ছাড়ান নেই। মরুক ব্যাটা দৌড়ে দৌড়ে এমনি করে- সেই রাজধানী অব্দি! কেমন জব্দ।'

সূূত্রঃ(বাংলার পথে-ঘাটে, গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য হাসির গল্প। বছরের পর বছর এই গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে বয়ে বেড়াচ্ছে। এমনই একটি গল্প-গাধার মানুষ হওয়া)।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×