somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নুরুন নাহার লিলিয়ান
আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

গল্পঃ বইমেলা যেতে যেতে - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"এই সাইদুর এক কাপ চুম্মা দাও তো ! সেই সকাল থেকে চুম্মা খাই না ! "

মেয়েটি খুব বাজ কণ্ঠে কথাটা বলল । আমার মতো আর ও অনেকেই ঘুরে তাকাল । আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আসলেই কথাটা ঠিক শুনেছি কিনা । কারন আমি যখন বেশি ভাবাবেগ বা ফুরফুরে মেজাজে থাকি তখন এক কানে কম শুনি । আর যখন অনেক চিন্তায় অথবা গুরুত্বপূর্ণ ভাবাবস্থায় থাকি তখন একটু বেশি শুনে ফেলি । এই ধরেন তিন কান কাজ করে ।
আমি আমার বাম কান আঙ্গুল ঢুকিয়ে একটু ঝাঁকানি দিয়ে দেখি । কানের অবস্থা ঠিক আছে । একটু দীর্ঘশ্বাস দিয়ে নিজের মুড বুঝার চেষ্টা করি । তিন কানে ও শুনিনি ।
তারপর ও দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকি । আমিও সাইদুরকে ডাকলাম । কারন যে সাইদুর আমার সামনে সে তের চৌদ্দ বছর বয়সী একটি কিশোর ছেলে । আমি ওকে এক কাপ দুধ চা দিতে বললাম । কিন্তু পাশের বাজখাই গলার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম কয়েক সেকেন্ডে । খুব মোলায়েম কণ্ঠে বললাম ," সাইদুর এক কাপ আদা চা দাও তো । দুধ চা খাব না "
এই কয়েক মুহূর্তে আমি বুঝলাম আমার সম্বিৎ ফিরেছে । আসলে পাশের মেয়েটি চুম্মা না চা বোধহয় খেতে চেয়েছে । কিন্তু আমি এমন শুনলাম কেন ?
আমি চায়ের জন্য অপেক্ষা করি । মেয়েটির গায়ে আধ পুরনো একটি চেক শার্ট । কোমর থেকে নিচ একটি ছেড়া জিন্স প্যান্ট দ্বারা আবৃত । তবে এই সাধারন আধুনিক ড্রেসটা মেয়েটির কণ্ঠ , বসার ধরন , কথা বলার ধরন সব মিলিয়ে ভীষণ রকম অশ্লীল মনেহল । মেয়েটির মুখে সিগারেট । জিন্স প্যান্টের উপরের অংশে আপত্তিকর জায়াগাটা ছেড়া । খুব ফর্সা না হলেও তাঁর চামড়া জিন্স ভেদ করে উঁকি দিচ্ছিল । মেয়েটির পাশের ছেলেটির সাজ পোশাক আবার আমাদের গ্রামের বাড়ির কামলাদের মতো । মেয়েটি আধা খেয়ে সিগারেট দেয় । ছেলেটি তা অতি যত্নে ফুঁ দিয়ে ধোঁয়ার সুখ সেবন করে ।
ছেলেটি খুব ভদ্র কায়দায় সিগারেট ফুঁকলেও মেয়েটি কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে বলছে " এই সাইদুর ! কথা শোন না কেন ? চা টা দাও না কেন ?"
এতক্ষণে আমার আদা চা এল । দাঁড়ানোর জায়গা নেই কোথাও । পুলিশ ভাই বোনদের দল ও আছে । অনেকেই নিজেদের সাথে কথা বলছে চা বিস্কুট খাচ্ছে ।
দলে দলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন মেয়েটির দিকে বার বার তাকাচ্ছে ।মেয়েটি ইচ্ছে করেই চিৎকার দিয়ে কথা বলছে যেন সবাই তাঁর দিকে তাকায় । সে কিছুটা সফল ও হয়েছে ।
আমার চা প্রায় অর্ধেক তখন ।মেয়েটি আবার ও চিৎকার করে চা চাইল ।
সাইদুর এবার উত্তর দিল ।
--"মামা এখান থেকে উঠেন । আপনি নিয়মিত বাকি খান । আপনারে চা দিয়ন যাইব না । "
মেয়েটি বাজ কণ্ঠে আবার ধমকায় ," এই সাইদুর । তুই কিন্তু বেয়াদব হইয়া গেছস ! এখানে ব্যবসা করাইয়া দিমু । চা দেয়।"
সাইদুর পাশের মুরুব্বির সাথে কিছু একটা বলল ফিসফিস করে । মনেহয় ভদ্রলোক ওর বাবা ,চাচা বা মালিক ।
তারপর কঠিন কণ্ঠে ,"
আমি বেয়াদ্দব না ।আপনারা উডেন তো । যারা টেকা দিয়া চা খায় তাদের বইতে দেন । "
মেয়েটি এবার মোলায়েম কণ্ঠে ," তুই আজকে বেশি বেয়াদবি করলি । ভাল হইয়া যা ।"
সাইদুর কাপে কাপে চা ঢালতে ঢালতে ঘাড় ফিরিয়ে বলে ," আপনে ভাল হইয়া যান ।"
মেয়েটি পাশের ছেলেটির হাত ধরে টেনে তুলে নিল । তারপর রাগে কটকট করতে করতে সিগারেট মুখে নিয়ে বেরিয়ে গেল ।যেমন অভিজাত ভঙ্গিতে হাক ডাক করতে করতে সিগারেট নিয়ে বসেছিল । যাওয়ার সময় একদম লাজুক লতা ।
বিকেল চারটার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি 'র এক কোনের দৃশ্য গল্প । সাইদুর খুব ব্যস্ত কাপে কাপে চা ঢালা নিয়ে । চুলার প্রচণ্ড তাপে গ্যাসের আগুন জ্বলছে । সাইদুরের মেজাজ জ্বলছে । কিন্তু খুব দৃঢ় সাইদুরের কণ্ঠ ।

" এক কাপ চা কিন্না খাওনের মুরদ নাই । আবার বেনসন সিগারেট মুখে লইয়া ম্যাম সাজে । ফকিন্নি হালায় । এরা কাম করলে দেশটা পালটাইয়া যাইতো ।মাইন্সের ডা খায় আবার ফুটানি মারায় "

সে একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে ।
সাইদুর চা কিংবা চুম্বন কিছুই দেয়নি । বরং একটা শিক্ষা দিয়েছে ।একটি প্রতিবাদের শিক্ষা ।
এই সমাজে অনেকেই দামি বেনসন খায় । আভিজাত্য প্রকাশ করে অন্যের পরিশ্রমের ঘামে । সাদা গ্লাসে লাল মদ খায় । কার ও মানব রক্ত শুষে । অন্যের দেহ বিসর্জনের নিজেদের জীবন খোঁজা ।
মিথ্যার সহস্র বেসাতি ঘরে কেবল একজন সত্যিকারের মানুষ থাকে । ঠিক পথে পাওয়া সাইদুরের মতো ।
সাইদুর একটা জীবন । সাইদুর একটা গল্প । সাইদুর একটা বাংলাদেশ ।
আজকাল জীবনের শিক্ষা পথে ঘাটে জীবন যুদ্ধরত মানুষের কাছেই পাওয়া যায় । দামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাওয়া কঠিন ।গতকাল আমি বইমেলায় যাচ্ছিলাম ।বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস গুলোতে প্রচুর নারী ধুমাপায়ী বেরেছে । কিছু সময় চোখ ধরে যায় চির চেনা নারীর সুন্দর সিগারেটের ধোঁয়ায় বিলীন হয় ।
আমি আদা চায়ের সাথে একটা গল্প নিয়ে বইমেলার দিকে এগুতে লাগলাম । কিন্তু পেছনে মেয়েটি এবং ছেলেটির গল্পটা রয়ে গেল ।
#বইমেলায় যেতে যেতে
#নুরুন নাহার লিলিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৪৭
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×