somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ১০ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গোপনে সে আমায় ভালোবাসে ৯ - নুরুন নাহার লিলিয়ান
গোপনে সে আমায় ভালোবাসে-নুরুন নাহার লিলিয়ান
পর্ব ১০
একটু সাহস দেখালেই হয়তো আমি আর অভিনন্দন এক হতে পারতাম!
কথাটা যতোটা সহজে আজকে ভাবা যাচ্ছে আজ থেকে বিশ বছর আগে এমন করে কল্পনা করাও ভীষণ কঠিন ছিল।
সেই সময়ে সাহস দেখানোর চেয়ে সম্মান প্রদর্শন করাটাই ছিল সুন্দর। মানুষ এই সম্মান বোধের চর্চাটা করতো।
তাছাড়া তখন জীবন এতো সহজ ছিল না। তখন সবার ব্যক্তিগত অনুভূতি গুলো আবৃত থাকতো।অনুভূতি গুলো আড়ালে রাখাই সৌন্দর্য ছিল। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে এখন ব্যক্তিগত অনুভূতি গুলো কে কতো রকম ভাবে প্রকাশ করতে পারে সেই প্রতিযোগীতা ও চলে। বলা যায় ব্যক্তিগত আচার অনুষ্ঠান গুলো পালন করতে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো গুলো ও মুখিয়ে থাকে।
আমাদের সময়ে গাছের বাকল কেটে, লুকিয়ে অচেনা দেয়ালে, নদী তীরে বালুচরে কিংবা গোপন ডায়রিতে এমন হাজারও উপকরণ আছে যেখানে মানুষ তাঁর প্রিয় মানুষের স্মৃতি গল্প রেখে দিতে ভালোবাসতো।
প্রিয় মানুষের আদি অক্ষর যেকোন জায়গায় দেখতে ভাল লাগতো। লুকিয়ে লুকিয়ে অনুভব করতে ভাল লাগতো। একটা লুকোচুরির মধ্যেই মানুষ তাঁর জীবনের আনন্দ খুঁজে পেতো।
এই সময়ে কোন বিশেষ দিন এলে প্রিয় মানুষ জানার আগেই গোটা পৃথিবী জেনে যায়।ব্যক্তিগত অনুভূতি গুলো ব্যক্তিগত ভাবে অনুভব করার সময়ই থাকে না।
আজকের পৃথিবীতে ছেলে মেয়েরা যতো সহজে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। কিংবা নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে । আজকের দিনের পৃথিবীতে জীবনকে সবাই দেখতে পায়। কিন্তু সে সময়ে জীবন নিয়েই ছিল মানুষের সবচেয়ে বেশি ফ্যান্টাসি।
আর এখন ফ্যান্টাসিই জীবন হয়ে গেছে৷
তবে আজকালকার দিনের এতোসব আয়োজন ও আমার খারাপ লাগে না।
মানুষ বোধহয় এমনই চায়। মানুষ চায় বলেই তো চারিদিকে এতো কিছু। জীবনের প্রয়োজনে ও আয়োজনে সবাই মেতে থাকতে চায়।
একটা পাহাড় দুঃখ বুকে নিয়ে আসাদের সাথে আমার দীর্ঘ জীবন কেটে যাচ্ছে।হয়তো এভাবেই কেটে যাবে একটা জীবন। এভাবেই একটা গোপন ভালোবাসা গোপনেই থেকে যাবে। বাকি জীবনটা এই ভালোবাসাটা বুকে নিয়ে চলবে। পৃথিবীর কেউ জানতে পারবে না। একটা সুখী জীবনের আড়ালে গভীর একটা ক্ষতের দহন।
আমার পুরো পৃথিবীটা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।চোখের জলের ঘন কুয়াশায় আমি আমার জীবনকে আবছা দেখতে পেতাম। এই জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন সময়ের অপচয় !
তখন মনেহয় নুশমা পেটে প্রায় ছয় মাস। আমার শরীর ভীষণ রকম ভারী হতে শুরু হয়েছে। হাতে পায়ে অল্প অল্প পানি বা ফোলা দেখা যায়। আবার ঠিক ও হয়ে যায়।
তেমন ভাল কোন ডাক্তারের পরামর্শ আমি পাইনি। এই শরীর নিয়েই আমি পুনরায় একটু একটু করে সংসার গুছাই। ডুবে যাওয়া বিল্ডিং গুলোর বাসিন্দারা বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। আমাদের বিল্ডিং টিকে যায়।
এখানে আগে যারা থাকতো তারাই ফিরে আসে।
আমরা ফেরার কিছুদিন পর টাকিয়া ভাবিরাও ফিরে আসে।
এদিকে একেক সময় আসাদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন বেড়াতে আসতে থাকে। একেক সময়ে একেক আত্মীয়। কখনও আমার ননাশ। কখনও ননদের ছেলে। কখনও আসাদের মামা।
এতো দিন কোন খবর ছিল না। আমার শরীর ভারী হতে শুরু করে। আর আত্মীয় স্বজন আসা শুরু করে। এরমধ্যে অভিনন্দন ও ঢাকায় যায়। বেশ অনেক দিন।
আমার বড় ননাশ ও তাঁর হাজবেন্ড এসেছে। দুলা ভাইয়ের কি যেন কাজ। তিনি পেশায় ডাক্তার।
আমার ননাশের হাজবেন্ড যতো নরম ভদ্র আমার ননাশ ততোটাই গরম ও অভদ্র ধরনের।
আমার বড় ননাশ কিন্তু তথাকথিত সুন্দর নয় কিন্তু তিনি সব সময় অন্যের সৌন্দর্য খোঁজে। যেমন আমি বাচ্চা পেটে আসার ছয় মাসেই ফুলে পটকা মাছ হয়ে গেছে।
আমি নাকি নড়তে চড়তে পারিনা। তিনি দশ মাস পেট নিয়েও অনেক স্বাভাবিক ছিল।
আমার চেহারাটা নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়ে তাকে অনেক তরতাজা লাগতো।
তিনি প্রথম ছেলে সন্তানের মা হয়েছেন। তাই নাকি সবাই তাঁকে অনেক আদর করতো।
একদিন টাকিয়া ভাবি ভর্তা বানিয়ে আমার বাসায় এলো।
আমার বড় ননাশ দৌড়ে এলো। ভীষণ রকম সন্দেহ জনক চাহনি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ভর্তার বাটিটা ভালো করে নেড়ে চেড়ে দেখলো।
তারপর জানতে চাইলো, " নিজের হাতে বানাইছেন? "
টাকিয়া ভাবি সহজ সরল ভাবেই বলল," হুম আমি নিজেই বানাই। "
আমার ননাশের চোখে মুখে সন্দেহ আর বিরক্তি। তিনি কারও সাথেই মেলামেশা, ভালো সম্পর্ক সহ্য করতে পারে না। আমি যে একটা সন্তানের মা হতে যাচ্ছি এই ব্যাপারটা যেন কিছুই না।তিনি গল্প শুনাতেন তিনিও মা হয়েছেন। এতো আহ্লাদ করেননি। ঘরের সমস্ত কাজ একাই করেছেন। সেই সাথে শ্বশুর শাশুড়িকে সেবা দিয়েছেন। আমি তো স্বামী নিয়ে একা একা স্বাধীন জীবন যাপন করছি। তাঁকে অন্যের অধীনে থেকে সব মানিয়ে জীবন চালাতে হয়েছে।
তার শাশুড়ি তাঁকে ঠিক মতো খাবারও দেয়নি। আমি তো নিজের মতোই খাই দাই ঘুমাই। কেউ বলার নেই।কেউ দেখার নেই।
আমি নিরুত্তাপ তাঁর কথা শুনি। একদম নিস্তব্ধতায় নিজেকে সঁপে দেই।
আমাকে একটার পর একটা প্রয়োজন ছাড়াই অর্ডার করতে থাকে। উনি বেড়াতে এলে মাথাটা খারাপ করে ফেলতো। সবার শারীরিক সক্ষমতা তো এক না। মা হওয়ার অভিজ্ঞতা সব নারীর এক হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি এটা মানতে চাইতেন না।
যেভাবেই হোক তাল গাছটা আমার! তাই যেভাবেই হোক আমাকে মানসিক নির্যাতন করাই তাঁর এক ধরনের প্রবণতা।
আমিই শুধু না আমার আশেপাশে যারা আছে তাঁদের সবাইকে ও সহ্য করতে পারতেন না।
তিনি টাকিয়া ভাবিকে কারন ছাড়াই সহ্য করতে পারতেন না। তাই উনি এলে টাকিয়া ভাবি ও আর আমার বাসায় আসতেন না।
গর্ভবতী মায়েদের সন্তান পেটে এলে প্রায়ই অনেকের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। অনেকেরই রক্তশুণ্যতা দেখা যায়।
পেটের সন্তানের লৌহ চাহিদা মিটাতে গিয়ে মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়। যে কারনে এই সময়ে অনেক মায়ের রক্তস্বল্পতা দেখা। শুধু তা নয় নানা রকম শারিরীক জটিলতা আর দূর্বলতা ও দেখা যায়।
এই সময়টায় একজন মায়ের শারিরীক যত্ন শুধু নয় মানসিক সুস্থতার দিকেও নজর রাখতে হয়।
নিয়মিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, কোষ্ঠ কাঠিন্যের কোন সমস্যা আছে কিনা নিয়মিত চেক আপ করতে হয়।
এতো কিছু আমার মনেহয় অনেক আগে থেকেই সবাই জানে। তারপরও কিছু মানুষ এসব জেনেও মানসিক ভাবে টর্চার করে।
সমাজে এমন ভাবে মানসিক নির্যাতন করার লোকের অভাব নেই। আমার ননাশ যাওয়ার কিছুদিন পর শ্বশুর শাশুড়ি আসেন।
কি যে কষ্টের সে সব দিন গুলো। ননাশ তো মুখে নানা কথা বলে খোঁচা দিয়ে আহত করতো। আর শ্বশুর শাশুড়ি দু'জনেই একটার পর একটা কাজের অর্ডার করতে থাকতো।
শাশুড়ি সকালে ঘি আলু ভর্তা দিয়ে গরম ভাত খায়। আর শ্বশুর খায় রুটি ডিম। ঘন্টায় ঘন্টায় নানা রকম কাজের বাহানা।
নামাজে যাবে যতো বার পাঞ্জাবি আয়রন করে দাও।
শাশুড়ি আবার চা খায় কয়েকবার৷শীত গরম বারো মাস গরম পানিতে ওজু ও গোসল করেন।
আসলে ঘরের মুরুব্বিদের সেবা দেওয়া ফরজ কাজ। আমাদের সবারই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
কিছু সময় বা পরিস্থিতিতে দেখা যায় বাসার গুরজনেরাই বাচ্চাদের মতো আচরণ করে। পুরো পরিস্থিতি বুঝেও যেন বুঝেনা। আমি নির্বাক সহ্য করে যাই।
আমার মতো নানা রকম শারিরীক জটিলতা নিয়ে যে মানুষটার একটার পর একটা কাজ পারফেক্টলি করা
যে ভীষণ বেদনাদায়ক!
আমার ভাগ্য ভাল যে কাকতালীয় ভাবে শ্বশুর শাশুড়ি কিংবা ননাশ যখন ছিল সে সময়টাতে অভিনন্দন ঢাকায় ছিল।
আমার জীবনে এমন সব হাজারও সাংসারিক জটিলতা আর শরীর মনের কষ্ট ভুলে থাকার মন্ত্রই ছিল অভিনন্দন!
জানি একটা অদৃশ্য অসম্ভব সম্পর্কে আমার মন সব সময় ঘুরপাক খেতো। সে সম্পর্কটা আমাকে নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রেরণা দিত।
বেঁচে থাকার প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ আমি না চাইলেও আমার ভেতরে উঁকি দিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×