গতকাল (২৫ মে ২০১২) “প্রথম আলো”-তে একটা ভয়ঙ্কর খবর ছাপা হয়েছে। লিচুতেও এখন নাকি বিষ দেওয়া হচ্ছে, হরমোন দেওয়া হচ্ছে! যাঁরা পড়েননি তাঁদের জন্য আমি খবরটা নিচে হুবহু তুলে দিলামঃ
“কীটনাশক ছিটিয়ে পাকানো হচ্ছে লিচু
আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী | তারিখ: ২৫-০৫-২০১২
রাজশাহীতে কীটনাশক ছিটিয়ে কাঁচা লিচু পাকানো হচ্ছে। লিচু বড় করতেও ছিটানো হচ্ছে এক ধরনের হরমোন। পরে লাল টকটকে, মন ভোলানো লিচু চলে যাচ্ছে বাজারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, লিচুতে কীটনাশকের ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ ফল খেলে কিডনি ও যকৃতের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মানবদেহে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
লিচুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁচা লিচুতে পাকা রং ধরাতে পানির সঙ্গে ক্যামোমেথ্রিন ও টিডো নামের দুই ধরনের কীটনাশক ও ম্যাগনল নামের এক প্রকার হরমোন মিশিয়ে ছিটানো হয়। রং ধরার পর লিচু দ্রুত বড় করতে ফের টিডো ও ম্যাগনল ছিটানো হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টিডো ও ক্যামোমেথ্রিন হচ্ছে কীটনাশক। লিচুতে টিডো দেওয়ার দরকারই নেই। আর ক্যামোমেথ্রিন এখন শেষ সময়ে দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ লিচুর বোঁটায় যে পোকা হয়, তা প্রায় এক মাস আগে জন্ম নেয়। এখন শেষ সময়ে লিচুতে টিডো ও ক্যামোমেথ্রিন একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া মানে মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনা। আর ম্যাগনল হচ্ছে এক ধরনের হরমোন বা ভিটামিন। এটি গুটি হওয়ার সময় দিলে কিছু কাজ হতে পারে। এখন দিয়ে কোনো লাভ নেই।
গত সোমবার রাজশাহীর পবা উপজেলার মুশরোইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাগানের কাঁচা লিচুতে তরল রাসায়নিক ছিটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক চাষি। বালতিভর্তি পানিতে টিডো মেশানোর সঙ্গে সঙ্গে পানি সাদা হয়ে গেল। এবার তার সঙ্গে মেশানো হলো ক্যামোমেথ্রিন। পরে এই মিশ্রণে ঢালা হলো ম্যাগনল। জানতে চাইলে বাগানমালিক শাহ আলম বলেন, এসব কীটনাশক ও হরমোন ছিটালে লিচু লাল রং ধারণ করে এবং দ্রুত আকারে বড় হয়ে ওঠে। এই লিচু গাছ থেকে পাড়ার পর কয়েক দিন রাখলেও বোঁটার কাছে পোকা ধরবে না। পচবে না। এসব দেওয়ার চার-পাঁচ দিন পর বাজারে বিক্রির জন্য লিচু নিয়ে যাবেন। গুটি ধরার পর থেকে লিচু পাড়ার আগ পর্যন্ত তিন থেকে চারবার কীটনাশক ও হরমোন ছিটানো হয় বলে জানান তিনি।
একই দিন ওই এলাকার আরেকটি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, লিচু পেকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সেই লিচুতেও তরল পদার্থ ছিটানো হচ্ছে। লিচু সম্পূর্ণ পেকে গেছে, সুন্দর রংও হয়েছে। তার পরও কেন তরল রাসায়নিক ছিটাচ্ছেন, জানতে চাইলে বাগানমালিক আয়নাল হক বলেন, ূএই রাসায়নিক লিচুকে দ্রুত আকারে বড় করে।’ অদূরে দুটি বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেল। এর একটিতে টিডো, অন্যটিতে ম্যাগনল লেখা। এগুলোই পানিতে মিশিয়ে ছিটাচ্ছেন আয়নাল। তখন প্রায় সন্ধ্যা।
পরের দিন মঙ্গলবার বিকেলে আয়নালের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিন কীটনাশক ছিটানো লিচু পাড়া হয়ে গেছে। সকালে সেগুলো বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নগরের নিউমার্কেট এলাকায় সেই লিচু বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহীতে কী পরিমাণ লিচু উৎপাদিত হয় এবং কতজন চাষি লিচুতে কীটনাশক মেশান, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে জেলার বাঘা উপজেলার ১০ জন, পবার সাতজন ও চারঘাটের তিনজনসহ ২০ জন লিচুচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ জন চাষি লিচুতে কীটনাশক-হরমোন দিয়েছেন, বাকিরা দেননি। কীটনাশক দেন না এমন চাষিরা জানান, তাঁদের অল্প গাছ। তাই খরচাপাতি ও ঝামেলায় যাননি। যাঁদের বড় বাগান ও বেশি গাছ, তাঁদের অনেকে কীটনাশক-হরমোন দেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আহাম্মেদ বলেন, ‘আমরা লিচুতে এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষককে পরামর্শ দিইনি। তাঁরা নিজেরাই দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, দোকানিরা ব্যবসা করার জন্য যা বলছেন, চাষিরা তা-ই দিচ্ছেন। এই লিচুই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সাইফুদ্দিন একরাম বলেন, কীটনাশক মাত্রই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তার পরও এখানকার চাষিরা কোনো বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে মাত্রা না জেনেই তা প্রয়োগ করছেন। আবার ফল আহরণের আগমুহূর্তেও তা দিচ্ছেন। এতে ক্ষতিকারক উপাদান অধিক মাত্রায় থেকে যেতে পারে, যা যকৃৎ ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।”
এরা মানুষ হত্যাকারী। আমি এদের মৃত্যুদণ্ড চাই। এরা ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করছে। জনপথের যন্ত্রদানবগুলোর চালকদের চেয়ে এরা আরো মারাত্মক, ভয়ঙ্কর। যন্ত্রদানবের চাকার তলায় পড়লে মুহুর্তে প্রাণ বের হয়ে সব কষ্ট-যন্ত্রণার ঊর্ধে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এদের এই কুকর্মের ফলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে।
আপনি যত স্বল্প আয়ের মানুষ হোননা কেন, আপনার নিষ্পাপ-অবুঝ বাচ্চার মুখে অন্ততঃ একবার হলেও আম বা লিচু তুলে দিবেন। আর তাতেই যদি থাকে জীবননাশি বিষ এবং তা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া আপনার নিষ্পাপ বাচ্চাদের সেই কাতর চোখের চাউনি কীভাবে আপনি সহ্য করবেন!
একটা ছোট্ট অনুরোধ। “আগে দর্শনদারী, পরে গুণ বিচারী” এই প্রবাদের অর্থ বুঝে তা এড়িয়ে চলুন। দেখতে সুন্দর হলে যে ভাল হবেই এরূপ বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করবেননা। বিশেষ করে দেশীয় ফলের ক্ষেত্রে। দেখতে সুন্দর যে কোন দেশী ফল এখন না কেনাই শ্রেয়। সেসব ফল থেকে যতটা দূরত্ব রক্ষা করে চলতে পারেন ততই মঙ্গল। দেখতে সুন্দর প্রায় সব ফলেই ফর্মালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড আছে। আজ ঐ দুটোর সঙ্গে যোগ হলো ক্যামোমেথ্রিন ও টিডো নামের দুই ধরনের কীটনাশক ও ম্যাগনল নামের হরমোন। আপনার আত্মজকে বিষ খাওয়াবেন? যে বিষ খেয়ে তারা আপনার সামনেই ধুঁকে ধুঁকে মরবে। টাকা দিয়েতো দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বদলে ফেলা যায়না!
আসুন এই হত্যা কারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। আমরা যদি সবাই একজোট হয়ে সব ধরনের হলুদ বা লালচে হলুদ রঙের আম, হোকনা তা লক্ষণভোগ, কেনা এক্কেবারে বন্ধ করি। যে কারণে অপুষ্ট আম বা লিচু তাড়াতাড়ি পাকে, সেই একই কারণে তাড়াতাড়ি পাকা আম বা লিচু তাড়াতাড়ি পচে যাবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা এক চালান-দুই চালান-তিন চালানে মার খাওয়া হয়তো সহ্য করতে পারবে, কিন্তু যদি ১০ চালানে মার খায় তাহলে? তাহলে নিশ্চয়ই ওরা এসব ফলে বিষ দেওয়া বন্ধ করবে। সেই সঙ্গে এই অপরাধের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন করা দরকার এবং তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


