somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যানারির বর্জ্যে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড

১৯ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের খাদ্যতালিকা থেকে কি মাছ-মুরগী-গরু-খাসি বাদ দিয়ে দিতে হবে? খবর পড়েতো তেমনই মনে হচ্ছে। বাঙ্গালীর উর্বর মাথার উদ্ভাবনী শক্তির কারণে প্রাণ ধারণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যাদের কারণে আমাদের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখোমুখি, তারা কিন্তু নির্বিকারে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নাই। নিচের খবরটা পড়ে দেখুন। আজকের (জুলাই ১৯, ২০১২) “বাংলাদেশ প্রতিদিন”-এ ছাপা হয়েছে।

ট্যানারির বর্জ্যে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড
সাঈদুর রহমান রিমন

উচ্চ আদালতের কঠোর নির্দেশের পরও বন্ধ হয়নি ট্যানারি বর্জ্যে পোলট্রি, ডেইরি, ফিশ ফিড তৈরির ঘৃণ্য কারবার। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে পোলট্রি, ডেইরি, ফিশ ফিড তৈরির কারণে মাছ, মাংস, এমনকি মুরগির ডিম পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঘাতক ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ট্যানারি কারখানার উচ্ছিষ্ট চামড়ার বর্জ্য ব্যবহার করে তৈরি চলছে প্রোটিন ফিড। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকছে শিশুরা। গরুর খাঁটি দুধ আর অধিক প্রোটিনযুক্ত ডিমের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মাত্রার ডাই-অঙ্নি দেহে ঢুকে তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। শিশুদের মেধাবিকাশ ও জীবনীশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে চরমভাবে। অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ আদালতের কঠোর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্থাগুলো তেমন আন্তরিক নয়। বরং প্রশাসনের কয়েকটি বিভাগে নিয়মিত মাসহারা দেওয়ার বিনিময়ে ভয়ঙ্কর এ 'বিষ' তৈরি এবং দেশজুড়ে এর অবাধ বাণিজ্য চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীরা। হাজারীবাগ, লালবাগ, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক কারখানায় দেদার চলছে 'বিষাক্ত পোলট্রি ফিড' তৈরি। ক্যান্সার ও কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি ফিড বাজারে পাওয়া যায়। এ খাবার যেসব মুরগি বা মাছকে খাওয়ানো হয় সেগুলো মানুষের জন্য ঝুঁকিকর নয়। কিন্তু সে পথে না গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ঝুঁকে পড়েছেন অবৈধ উপায়ে শতাধিক বিষাক্ত বর্জ্যে তৈরি ফিডে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্যানারিতে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক জিংকসহ প্রায় আড়াই শ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। বিষাক্ত সেসব পদার্থের উচ্ছিষ্টের সংমিশ্রণেই তৈরি হচ্ছে পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড। খামারগুলোতে নিয়মিত সেই ফিড খেয়ে গরু, মুরগি, মাছ একেকটি পরিণত হচ্ছে বিষের কুণ্ডলীতে। বিষময় সেসব মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেয়ে মানুষের জীবন পড়ছে হুমকির মুখে। একেকটি পোলট্রি ফিড কারখানা প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৩ থেকে ১০ ট্রাক পর্যন্ত বর্জ্য বিভিন্ন ট্যানারি থেকে সংগ্রহ করে নেয়। এগুলো নিয়ে ফিড কারখানার মালিকরা প্রথমে স্তূপ করে রাখেন এবং পর্যায়ক্রমে এ বর্জ্য শুকিয়ে বস্তাজাত করা হয়। ইদানীং কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জেও বিপুল হারে গজিয়ে উঠছে পোলট্রি ফিড কারখানা। এসব কারখানার সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কোনো কিছুই নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ফিড কারখানার মালিক জানান, বিজ্ঞানসম্মতভাবে পোলট্রি ফিড বিক্রি করতে হয় প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬২ টাকায়। আর ট্যানারি বর্জ্যে তৈরি ফিড বিক্রি হয় মাত্র ১২ টাকা দরে। আবার বর্জ্যের ফিড হাঁস-মুরগি কিংবা মাছকে খাওয়ালে দ্রুত বেড়ে ওঠে। খামারমালিকরা কম দামে পাওয়ায় এবং দ্রুত বর্ধনশীল বলে ট্যানারি বর্জ্যের ফিড ব্যবহারে বেশি আগ্রহী।

স্থানীয় থানা পুলিশ, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, ভুয়া প্রতারকচক্র, ডিবিসহ অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থার নামে মাসহারা নেওয়ার বিনিময়ে চলছে এসব ফিড কারখানা।

বুয়েট কেমিকৌশল বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজারীবাগ ট্যানারি পল্লীর আশপাশ, কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের উভয় পাশ, সংলগ্ন অন্যান্য বস্তির মধ্যে যেনতেনভাবে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য পোলট্রি ফিড কারখানা। সেখানে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পোলট্রি ফিডগুলো তৈরি ও প্যাকেটজাত করে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাগ-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সরেজমিন গিয়ে অন্তত পাঁচটি পোলট্রি ফিড তৈরির ঝুপড়ি বস্তির কারখানা চোখে পড়ে। পেট্রলপাম্পের অদূরে ঘন ঘিঞ্জি চান মিয়া বস্তির দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে পাশাপাশি দুটি পোলট্রি ফিড কারখানা রয়েছে। একটির নাম ভয়েজার গ্রুস ফিড। মালিক লুৎফর রহমান। অন্যটি আনছার আলীর মেসার্স ফ্যাট-ফিড, ইউএসএ। ৩০-৩৫ ফুট দীর্ঘ ও ১২-১৩ ফুট প্রশস্তের টিনের ছাপরাঘরের চারপাশে রয়েছে উচ্ছিষ্ট চামড়ার স্তূপ। এ স্তূপের আশপাশে দাঁড়ানোর উপায় নেই। তীব্র ঝাঁঝাল উৎকট গন্ধে বাতাস ভারী থাকে সব সময়। এর মধ্যেই বাস করছে বস্তির ৫০-৬০টি পরিবার। এখানকার বাসিন্দা রাজিয়া চাকরি করেন একটি পোলট্রি ফিড কারখানায়। তিনি জানান, একটু বাতাস হলে উৎকট গন্ধ এমনভাবে ছড়ায় যে তখন আধা মাইলের মধ্যে দাঁড়ানো কঠিন। বৃষ্টির পানির সঙ্গে বস্তিঘরে ঢুকে পড়ে এসব চামড়ার বিষাক্ত বর্জ্য।

বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের একদল ছাত্র সরেজমিন অনুসন্ধান করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, কাঁচা চামড়াকে প্রক্রিয়াজাত করতে ক্রোমিয়াম, চুনা, সোডিয়াম সালফাইড, সালফিউরিক এসিড, ফরমিক এসিড ও সোডিয়াম ফরমেটসহ উচ্চক্ষমতার নানা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। চামড়া পাকা করার পর কাটিংয়ের সময় বর্জ্য হিসেবে যেসব টুকরো পাওয়া যায় তা আগুনে জ্বালিয়ে বানানো হয় প্রোটিন জেল। আর প্রোটিন জেল থেকে তৈরি হয় প্রোটিন ফিড, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ।

Click This Link


বিষ মিশিয়ে যারা ফল পাকায় বা যারা খাদ্যদ্রব্যে ফর্মালিন মিশায় তাদের মত যারা ট্যানারির বর্জ্যে দিয়ে বিষাক্ত পোলট্রি ফিড তৈরি করছে তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিৎ মৃত্যুদণ্ড।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×