somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার জনগণ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির দাবার ছকের বোড়ে

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনিক সকালে ১টা ও রাতে ১টা করে JANMET 500 ট্যাবলেট খেতে হয়। যতদিন ডাক্তার ঐ ওষুধ না পাল্টায় ততদিন আমাকে খেয়ে যেতে হবে। আমি যখন ঐ ওষুধটা প্রথমবার কিনতে যাই তখন ফার্মেসী থেকে বলল ১পাতায় ৭টা ট্যাবলেট থাকে আর প্রতিটা ট্যাবলেটের দাম ১১০টাকা। আমি বললাম, “অত দাম কেন”? বলল, “বিদেশি ওষুধ, আমেরিকার”। তারপর জিজ্ঞেস করল আমি ক’পাতা নিব। ডায়াবেটিসের ওষুধ, খেতেই হবে, তাই ভাবলাম ১ পাতা নিই; আপাততঃ চলুক। এর মধ্যেতো ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে, তখন সস্তা কোন ওষুধের নাম লিখিয়ে নিব!

তা দুই-একদিন পর ডাক্তারের (ঘনিষ্ট পরিচিত) কাছে যেয়ে বললাম, “এত দামী ওষুধ দিয়েছ! এই এক ওষুধেইতো আমাকে ফতুর করে দিবে”। শুনে ডাক্তার বলল, “কেন! আপনাকেতো কমদামী দেশি ওষুধই দিয়েছি। জ্যানমেট একমি-র ওষুধ”। আমি কোন কথা না বলে চলে আসি। বাসায় এসে দেখি আমার কেনা ওষুধটা JANMET নয়, JANUMET; আর প্রেসক্রিপশন খুলে দেখি ডাক্তার সাহেব JANMET-ই লিখেছে JANUMET নয়। যাহোক, পরে ওষুধের দোকানে গিয়ে ওদের ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে JANMET-500 নিয়ে ফিরে এলাম। ৬টা ট্যাবলেটের ১টা প্যাকেটের দাম নিল ২৬০টাকা (এখন দাম আরো কমে গেছে। এখন ১টা ট্যাবলেটের দাম নেয় ২৫টাকা)। আমি এক এক বারে ১০-১২ প্যাকেট করে JANMET কিনি। এবার, এই দিনকয়েক আগে, আমার মজুদ যখন প্রায় শেষ, তখন একদিন গেলাম ঐ ওষুধের দোকানে। আমাকে জানানো হল ঐ ওষুধটার সরবরাহ নাই বলে ওদের মজুদ নাই। আমাকে অন্য দোকানে খুঁজে দেখতে বলল। আমি লাজ ফার্মা থেকে শুরু করে তার আশেপাশের সব ওষুধের দোকানে ঘুরে একই উত্তর পেলাম, “নাই"। এদিকে আমার সেই রাতে খাওয়ার ওষুধ থাকলেও পরদিন সকালেরটা থাকবেনা। মহা সমস্যা, কী যে করি! করারও কিছু নাই। মনখারাপ করে যখন ফিরে আসব, তখন ঐ দোকানের বিক্রয়কর্মী বলল, “আপনার GLIPITA M হলে চলবে”? আমি বললাম, “মানে”? সে বলল, “জ্যানমেট আর ওটা একই”। আমি আবার বললাম, “মানে”? ও বলল, “মানে জ্যানমেট যা গ্লিপিটা এম-ও তা। দুটোতেই সিটাগ্লিপটিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ ও মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ৫০০ মিঃ গ্রাঃ আছে। জ্যানমেট একমির আর গ্লিপিটা এম হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মার”। আমি তখন তাকে বললাম, “যদি ঐ দুই ওষুধ একই হয়, তবে আমাকে দোকানে দোকানে ঘুরালেন কেন? আমাকে বলে গ্লিপিটা দিতেই পারতেন”! সে তখন কানের গোড়া পর্যন্ত দাঁত বের করে একটা হাসি দিল। আমি ৬ প্যাকেট গ্লিপিটা এম নিয়ে এলাম (১ প্যাকেটে ১০টা বড়ি থাকে, মূল্য প্রতি প্যাকেট ২৫০টাকা)।

ল. জে. এরশাদ-কে আমরা যতই গালাগাল দেইনা কেন, তার আমলে প্রণীত জাতীয় ঔষধ নীতি কিন্তু ভাল ছিল। ঐ নীতিতে সব ওষুধ জেনেরিক নামেই বাজারজাত করার বিধান ছিল। ঐ বিধান যদি এখনো বলবৎ থাকত, তবে আমার এই ভোগান্তি হতোনা। আমাকে ৪৮ টাকার বড়ি ১১০ টাকায় কিনতে হতনা বা ঐ দোকানে আমার প্রয়োজনীয় ওষুধ অন্য কোম্পানির তৈরি অন্য ব্র্যান্ড নামে থাকা সত্বেও আমাকে অন্যান্য দোকানে তা ঢুঁড়ে বেড়াতে হতোনা। জানেন, কারা লে. জে. এরশাদ-এর ঔষধ নীতির বিরোধী? প্রধান বিরোধী হচ্ছে আমাদের দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো। তারা তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে চায়না যেন বাজারে ওষুধ জেনেরিক নামে বিক্রি হয়।

গত শতকের অষ্টম দশকের মাঝামাঝি দিকে শরীরের বিভিন্ন ব্যথার, তা হাড়েই হোক কিংবা ঘাড়ে, মহৌষধ হিসাবে পরিচিত ছিল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি সিবা-গেইগীর তৈরি VOLTAREN নামের ওষুধ, যার এক একটা ৫০ মিঃ গ্রাঃ বড়ির দাম ছিল, যতদূর মনে পড়ে, ১২টাকা। ঐটার জেনেরিক নাম ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম। এখন ঐ ওষুধ দেশের অনেক নামী-দামী অনামী-কমদামী প্রায় সব কোম্পানিই তৈরি করছে। জেনে আশ্চর্য হবেন, বাংলাদেশে ৭৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিভিন্ন নামে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ওষুধ তৈরি করে ও বিভিন্ন দামে বিক্রি করে। সি-ফেনাক নামে বাজারজাত করা কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজ-এর তৈরি ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (MRP) ৩০ পয়সা আর এস-ফেনাক নামে বাজারজাত করা সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর তৈরি ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (MRP) ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজারে ১টা ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির সর্বোচ্চ মূল্য সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি। আর নোভার্টিস বাংলাদেশের ১টা ভোল্টালিন ফোর্ট ৫০ মিঃ গ্রাঃ ট্যাবলেটের দাম ৬টাকা, যার মূল উপাদান ঐ সেই ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম।

যদি ওষুধের মান ঠিক থাকে, তবে নাম যাই হোকনা কেন, সব ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম বড়ির কার্যকারিতা একই হবে। সব বড়িতেই যদি ৫০ মিঃ গ্রাঃ ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম থাকে, তবে দামের অত পার্থক্য হবে কেন তা আমি বুঝতে পারছিনা! আমি বুঝতে পারছিনা, বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন কোন ফর্মুলায় হিসাব কশে ওষুধের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে! আমিতো শুধুমাত্র সিটাগ্লিপটিন ৫০ মিঃ গ্রাঃ + মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ৫০০ মিঃ গ্রাঃ এবং ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ৫০ মিঃ গ্রাঃ বড়ি সম্বন্ধে আলোচনা করলাম। মনে হয় বাজারের আর সব ওষুধের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। হাজার হাজার কোটি টাকার ওষুধ-বানিজ্যের বাজারে আমরা সবাই দাবার ছকের বোড়ে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×