somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিনতাই করে পোষায় না

২২ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসে করে এইমাত্র নাটোর থেকে ঢাকার গাবতলীতে এসে পৌছাল মনির। রাত প্রায় এগারটা বাজে। পরদিন তার একটা ইন্টারভিউ আছে। চন্দ্রাতে বেশ বড়সড় জ্যাম লেগেছিল। সেজন্য বেশ রাতই হয়ে গেল। তার এক মামা থাকেন তেজতুরীবাজার। ওখানেই রাতে থাকবে সে। আগেই ফোনে কথা হয়েছে। মামা বলে দিয়েছেন, বেশী রাত হলে সিএনজি নেয়ার দরকার নেই। কারণ সিএনজিগুলো রাতে ছিনতাইকারীদের বাহনে পরিণত হয়।

বাস থেকে নেমে সে দেখল অনেকগুলো সিএনজি সেখানে। মানুষজন দরদাম করে সিএনজিতে উঠছেও। মনির সেদিকে না গিয়ে আরো সামনে এগিয়ে গেল। সেখানে কয়েকটি ৮ নম্বর বাস দাঁড়িয়ে আছে। হেলপারেরা সমস্বরে ডাকছে, “আসেন, ফার্মগেট মতিঝিল সায়দাবাদ”। মনির আগেও তার মামার বাসায় গিয়েছে। সে জানে, ৮ নম্বর বাসে করে ফার্মগেট গিয়ে নামলে খুব সহজেই সে তার মামার বাসায় চলে যেতে পারবে।

বাসগুলো প্রায় খালি। উঠবার পর ছাড়তে কতক্ষণ লাগে কে জানে। একটা বাসে মোটামুটি প্যাসেঞ্জার আছে। ১০-১২ জন হবে। ঐ বাসটাতে উঠল মনির। সাথে সাথেই বাস ছেড়ে দিল। বেশ দ্রুতগতিতেই বাস চলছে। কন্ডাক্টর এসে জিজ্ঞেস করল, “কই যাইবেন?” মনির বলল, “ফার্মগেট”। সে আর ভাড়া টাড়া চাইল না।

বাসের যাত্রীদেরকে তেমন সুবিধার মনে হল না মনিরের কাছে। কেমন যেন নেশাখোর টাইপের মনে হচ্ছে। মনিরের একটু খটকা লাগল। খটকা আরো বাড়ল, যখন বাস টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী কোন জায়গা থেকেই প্যাসেঞ্জার উঠাল না। শ্যামলী শিশুমেলার দিকে এসে বাস যখন আসাদগেটের দিকে না গিয়ে আগারগাওয়ের দিকে অন্য রুটে চলতে শুরু করল, তখন মনিরের আর বুঝতে বাকি থাকল না, কি ঘটতে যাচ্ছে।

আগারগাওয়ের রাস্তায় ঢুকেই বাসে গতি কমে গেল। কন্ডাক্টর এসে বলল, “ভাড়া দেন”। মনির মানিব্যাগ বের করল। কন্ডাক্টর মানিব্যাগ জোর করে মানিব্যাগ নিয়ে নিল। মনির বলল, “মানিব্যাগ নিলা কেন? দেও”। কন্ডাক্টর বলল, “হালা, ভাড়া দিবি না ক্যান”। অন্য যাত্রীরা সব দৌড়ে আসল। একজন চিৎকার করে বলল, “ধর শালারে, ভাড়া না দিয়া যাইব কোথায়”।

মনির বুঝতে পারল, যাত্রী সে আসলে একাই ছিল। বাকিরা সব ছিনতাইকারী। সবাই মিলে মনিরকে মুহুর্তেই ধরাশায়ী করে ফেলল। টাকা-পয়সা, মোবাইল, চশমা সব নিয়ে নিল। তার সাথের ব্যাগও ঘাটাঘাটি করতে লাগল। একজন বলল, “হালায় ফকিরের পুত, কিছুই নাই”।

একজন এসে মনিরের চোখে কি যেন লাগাল। চোখ প্রচন্ড জ্বালা করে উঠল। মনির ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল। একজন বলল, “ঐ হালা, চিল্লাইলে একদম কল্লা নামায় দিমু, এইটা দেখসস?”। আরো কয়েকজন এসে চোখে মলম আর মরিচের গুড়া লাগাতে লাগল। মনির তখন আকুতি করছে, “ভাই, ছাইড়া দেন, ভাই, দয়া করেন”।

ওদের কি আর দয়া হয়? বরং একজন বলল, “হালায় তো এখনও পিটপিট কইরা চাইতাছে, কি মলম লাগাইলি?”, বলে আরেক দফা মলম চলল। সামনে থেকে ড্রাইভার বলছে, “চালু কর তোরা, এক কাস্টোমারেই তো রাইত কাবাইর কইরা দিতাছস”। মনিরের বাম পাশ থেকে একজন বলল, “হালায় ফকিরের পুত, লস হইয়া গেল”। পিছন থেকে একজন বলল, “হালার ছিনতাই কইরা পুষায়না, কয়ডা পয়সাই পাই। ওস্তাদ, চান্দার বিজনিজে লাইন দেন, গ্যাঞ্জাম কম, পয়সাও বেশী”। ড্রাইভার অর্থাৎ ওদের ওস্তাদ বলল, “হ, চান্দা লইয়া বইয়া আছে আর কি”।

কম গতিতে চলা অবস্থায় মনিরকে ওরা চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিল। আর সাথে সাথেই পগারপাড়। মনির তখন চিল্লাচ্ছে, “কেউ আছেন নাকি ভাই, আছেন নাকি কেউ?” কোন সাড়াশব্দ নাই। প্রায় ঘন্টাখানিক পরে এক রিক্সাওয়ালা দয়াপরায়শ হয়ে তাকে তার মামার বাসায় পৌছে দিল। সেই সাথে মামার কাছ থেকে মোটা অংকের বকশিসও আদায় করে ছাড়ল।

মনিরের আর ইন্টারভিউ দেয়া হয় নি। ১ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। চোখের নানারকম টেস্ট করতে হয়েছিল। আর এই দুঃস্বপ্ন তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রতিদিন।

আর দশটা ছিনতাইয়ের মত, এই ঘটনাতেও কোন মামলা হয় নি। মলম পার্টির উপদ্রবের কথা তাই পুলিশের নথিতে নেই, মন্ত্রীদের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়, সেখানেও নেই। শুধু আছে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

[আমার ভাইয়ের বন্ধুর এক আত্মীয়ের ঘটনা এটি এবং আরো অনেকের, আমাদের আগোচরেই যা ঘটছে।]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:০১
৩১টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×