দুপুরে লাঞ্চে যাবার সময় মেয়েটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম আমাদের ফ্যাক্টরির গেটে। এক হাতে পুরাতন একটা কাপড়ের ব্যাগ। অন্য হাতে তিন বছরের একটা কন্যাশিশু নিয়ে সে দাড়িয়ে আছে।
পেছনে বোরকা পড়া আরেক জন মহিলা।
প্রায়ই দুই ঘন্টা পর ফিরে এসে দেখি ওরা সেখানেই দাড়িয়ে আছে। চোখে প্রচণ্ড হতাশা। মুখ শুকিয়ে গেছে।
আমি সিকিউরিটি অফিসারকে ডেকে বললাম, ভাই এদের ঘটনা কি?
সিকিউরিটি অফিসার আমাকে জানালো, এই মেয়েটার হাসবেণ্ড গত এক বছর যাবত নিখোজ। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল নাকি মেয়েটাকে ছেলেটি ফোন করে বলেছে আমাদের গামেন্টেসে ছেলেটি সুপাভাইজার পদে কাজ করে। সে ঠিকানা দিয়ে বলেছে এখানে আসতে। মেয়েটা বরিশালের কোন এক গ্রাম থেকে বাচ্চা আর মাকে সহ এসেছে।
আমি মেয়েটার মাকে জিজ্ঞাসা কলাম আরো কিছু কথা । খোজ নিলাম ফ্লোরে। জানলাম সিপন নামের কেউ আছে কিনা?
জানা গেল এই ছেলে একবছর আগেই চাকুরি ছেড়ে চলে গেছে!
মহিলা কেদে ফেললো।
তার যাবার ভাড়া নেই। সে বুঝতে পারছে না কি করবে। আমাদের কোম্পানির কেউ তাকে সাহায্য করতে আগ্রহী হলো না।
আমি পকেট থেকে ভাড়ার টাকার জন্য কিছু টাকা দিলাম।
তাকে ফিরে যেতে বললাম বাড়িতে। জানালাম আপনি প্রতারিত হয়েছেন।
ওরা চলে গেল ভাঙা হৃদয় নিয়ে।
আমার ডান পাশে দাড়ানো আমার চেয়ে বেশি বেতন পাওয়া এক কলিগ বললো আপনি এত মায়া দ্যাখান কেন? দরকার ছিলো এই টাকা খরচের!
আমি তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললাম। মেয়েটার না খাওয়া মুখের মাঝে আমি আমার দেড় বছরের কন্যার ছবি দেখেছি ভাই।
সে কোন কথা না বলে চলে গেল। আমিও গেট থেকে আমার অফিসের দিকে হাটতে লাগলাম। জানিনা পুরুষ নামের এই সব পশু গুলো কবে মানুষ হবে?