somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুরেল (২য় পর্ব)

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পের পূর্বসুত্রঃ শিমুল তার মোটরসাইকেলে চড়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছাতেই সে বৃষ্টির মুখে পড়ে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মোটরসাইকেল রেখে সে রাস্তার পাশের একটি পুরনো আমলের এক বাড়ির বারান্দায় গিয়ে উঠে। সেখানে তার সাথে রিয়া নামের এক মেয়ের দেখা হয়, যে নিজেকে ঐ পুরনো বাড়ির মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। রিয়া শিমুলকে সৌজন্য দেখিয়ে ঘরে নিয়ে যায় ও চা খেতে দেয়। রিয়ার দেয়া চায়ে চুমুক দেবার পর শিমুল নিজেকে এক ভয়ংকর জগতে বন্দী হিসেবে দেখতে পায়।
(গল্পের পূর্বাংশ পড়ুন- চুরেল (১ম পর্ব))


পল পল করে সময় বয়ে যেতে থাকে। শিমুল পড়ে রয়েছে ঘুণে খাওয়া পুরনো চেয়ারে। ওর হাত পা সব অসাড় হয়ে আছে, যেন সে প্যারালাইসিসে ভোগা রোগী। দেহের সব শক্তি জড়ো করে শিমুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চাইলো। হাতের চাপে চেয়ারের ডান পাশের হাতল খুলে ঝুলে পড়ল। কিন্তু চেয়ার হতে সে মোটেই আলগা হতে পারলো না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে, আগের চেয়ে আলো অনেক ফিকে হয়ে গেছে। কিন্তু শিমুলের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। শিমুল ভাবতে থাকে এটা যদি স্বপ্ন হয় তবে তা হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম স্বপ্নের রেকর্ড। আর যদি স্বপ্ন না হয়, তাহলে সবই হ্যালুসিনেশন।
শিমুল বিজ্ঞানের ছাত্র, সে পড়েছে গণিত নিয়ে। যুক্তি ও বাস্তবতার বাইরে পৃথিবীতে কিছুই ঘটে না- এটাই তার বিশ্বাস। কিন্তু আজ সে যে অস্বাভাবিকতার ভেতর আটকে পড়েছে এর কি যুক্তি?

শিমুল তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একে একে ভাবতে থাকে। ঘটনা ভেবে ভেবে সে এই অস্বাভাবিকতার সূত্রটা বের করতে চায়।
প্রথমত, জোরে বৃষ্টি শুরু হল। বাইক থামিয়ে শিমুল একটা পুরনো ম্যানশনের দিকে দৌড় দেয়। এই ঘটনার পেছনে কি অস্বাভাবিক কিছু আছে? নাহ, এমন যদি হত কাদায় পা পিছলে পড়ে শিমুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তারপর বেহুশ অবস্থায় তার বিভ্রম হচ্ছে, তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু এমন তো ঘটেনি। কারণ তখন সবে মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, রাস্তায় পানি জমেনি, কাদাও ছিল না। কাজেই পা পিছলে পড়ে জ্ঞান হারানোর সম্ভাবনা নেই।
তারপর, বারান্দায় সুন্দরীকে দেখা। নাহ এটাও অস্বাভাবিক নয়।
তারপর, সুন্দরীর ঘরে ঢুকে চা পান....
ইয়েস, ঘটনার শুরু এখানেই। মেয়েটা যেই চা খেতে দিয়েছিল তাতে হয়তো কড়া কোন ড্রাগ ছিল। তাই চায়ে চুমুক দেবার পর শিমুল হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে হ্যালুসিনেশন দেখতে শুরু করে। এই ঘরদোর সবই ঠিক আছে। এমনকি যে ভাঙা চেয়ারে সে বসে আছে এটাও একটা ভালো সোফা, কিন্তু ড্রাগের নেশায় পড়ে শিমুল সোফাটিকে ভাঙা চেয়ার হিসেবে দেখছে। আর সাজানো গোছানো ঘরটিকে পুরনো গুদামের মত লাগছে। শিমুলের ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে রিয়া নামের মেয়েটিও আশেপাশে আছে, কিন্তু নেশাগ্রস্ত শিমুল তাকে দেখছে না। এই মেয়েটা এমন কেন করছে? তার কি মাথায় সমস্যা আছে? শিমুল অস্ফুট স্বরে ডাকার চেষ্টা করে, ‘রিয়া’।
কোন সাড়া নেই।
শিমুল গলায় জোর এনে আবার ডেকে উঠে, ‘রিয়া, আপনি কোথায়?’
শিমুলের পেছনে কেউ জবাব দিল, ‘আমি তোর খুব কাছেই আছি।’
কথা শুনে শিমুলের পিলে চমকে উঠে। কথা যে বলেছে, সে কি মানুষ নাকি ভালুক। গলার আওয়াজ শুনে ভয় পেতে যে কেউ বাধ্য হবে। ভীতু শিমুল জানতে চায়, ‘কে? আমার পেছনে কে? রিয়া কোথায়?’
-‘আমি রিয়া। কি বলতে চাস রে ফটকা? বলে ফেল।’
-‘অসম্ভব। রিয়ার গলা কি এমন?’
-‘হ্যাঁ এমন, তাতে তোর কি আসে যায়? রিয়ার গলা তুই খাবি নাকি? কি বলতে চাচ্ছিস বলে ফেল গাধা।’
হতবিহ্বল শিমুল বলে, ‘আচ্ছা আপনি রিয়া হন আর যে হন। প্লিজ আমার সামনে আসুন।’
পেছনের সেই লোক ভয়ংকর খ্যানখ্যানে গলায় অট্টহাসি জুড়ে দেয়। এই হাসি কোন মানুষের হাসি নয়, ঠিক যেন দোযখবাসী শয়তানের হাসি। হাসি থামিয়ে সে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি সামনে চলে আসছি।’ শিমুল টের পায় কেউ একজন পেছন হতে ভাঙা কাঠ আর পুরনো কাপড়ের স্তূপ পেরিয়ে খসখস শব্দ করে সামনে আসছে। সে এসে শিমুলের ঠিক সামনে মুখোমুখি দাঁড়ায়।
শিমুল এই ব্যক্তির চেহারা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এটা নারী নাকি পুরুষ কিছুই বোঝার উপায় নেই। কোন মানুষ মারা গেলে চার পাঁচদিন পর মৃতদেহে পচন ধরলে যেমন দেখা যায় ঠিক তেমন একটা মৃত মানুষ তার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ, গায়ের ত্বক পচে ফুলে উঠেছে। আর তার পেটটা অসম্ভব রকম ফোলা। সেই ফোলা পেট মৃদু মৃদু নড়ছে, যেন এখনি পেট ফেটে পচা নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে আসবে।
শিমুল ভয়ে ভয়ে বলল, ‘রিয়া কোথায়? রিয়াকে ডাকুন প্লিজ। আমি তাকে শুধু একটা কথা বলতে চাই।’
-‘তাকে খুব দরকার? আচ্ছা, এনে দিচ্ছি তাকে।’
লোকটি মাথা নুয়ে নিজের ফুলে ওঠা পেটের দিকে তাকায়। সেই পেট ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসে। তার হাতের ত্বকের মরা ফ্যাকাশে রূপ বদলে সতেজ কোমল হয়ে আসে। অদ্ভুত দর্শন এই মানুষের সারাদেহের অবস্থা বদলে যায়। তারপর সে মাথা তুলে চেয়ারে বন্দী শিমুলের দিকে তাকায়।
আজ যেন শিমুলের চমকের দিন, সে সামনের লোকটির চেহারা দেখে আরেকবারের জন্য চমকে উঠে।
-‘আরে রিয়া, আপনি? একটু আগে আপনার চেহারা এমন ছিল কেন?’
রিনরিনে সেই হাসি দিয়ে রিয়া বলে, ‘সেটাই তো আমার আসল চেহারা।’
-‘আসল চেহারা! অসম্ভব! আমি আজ এসব কি দেখছি?’
-‘সবই তো ঠিক দেখছিস গাধা কোথাকার। সমস্যা কোথায় পেলি?’
-‘সমস্যা নেই? আপনি যে ভয়ংকর জম্বির মত হয়ে গেলেন, আবার মানুষের মত হচ্ছেন, এগুলো কি স্বাভাবিক? এসব তো আমি জীবনে আর দেখিনি। আমার সাথে কি খেলা খেলছেন আপনি? আমাকে যেতে দিন।’
সুন্দরী রূপি পিশাচ রিয়া হেসে বলল, ‘আরে ফটকা, তোকে যেতে দেবো? সিংহের গুহায় ঢুকে কোন হরিণ কি আর বের হতে পারে? তুই তো একদম তোর মরার জায়গায় চলে এসেছিস। আমার বাচ্চাটা খুব ক্ষুধার্ত, সে এখন তোকে খাবে। তোর আর ফিরে যাওয়া লাগবে না।’
-‘আপনার বাচ্চা আমাকে খাবে?’
-‘হ্যাঁ, তার জন্যেই তো তোকে ধরে রেখেছি। মানুষের তাজা রক্ত ছাড়া তার ক্ষুধা মেটে না, আমি রাস্তা থেকে তোর মত যুবকদের ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে এনে আটকাই, কিন্তু তুই তো গাধা, নিজেই এসে আটকে গেছিস। আমি সবসময় রাস্তায় সুযোগ বুঝে যুবক ড্রাইভারদের গাড়ি নষ্ট করে দিই। তারা যখন গাড়ি থেকে বের হয় তখন আমি সুন্দর চেহারা আর মনমাতানো কথার মায়ায় বন্দী করে তাদেরকে এই পোড়ো বাড়িতে নিয়ে আসি। তারপর তাদের রক্ত দিয়ে আমার বাচ্চার ক্ষুধা মেটাই।’
-‘কি বলেন এসব? কেন আপনি এগুলো করেন?’
রিয়া হেসে উঠে। এবার তার হাসিতে মুক্তো ঝরেনি, এবারের হাসি দেখে মনে হল সুন্দরী নারীর এক অপার্থিব ভয়াল চেহারার হাসি। রিয়া বলে, ‘এখন এসব করাই কাজ। আমি তো মানুষের মত বাঁচতে চেয়েছিলাম, তোর মত কিছু লোক আমাকে এমন বানিয়েছে। আমি এখন তোদের ধরে ধরে শেষ করব।’
-‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনার প্রত্যেকটা কাজ আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। প্লিজ আমাকে খুলে বলুন আপনি আসলে কি চান?’
-‘গাধা, খুলে বলার মত কিছু নেই। আমি ছিলাম সুন্দর একটা মেয়ে। আমার একটা সুন্দর জীবন ছিল। জীবনে অনেক বড় হবার মত সুন্দর একটা স্বপ্ন ছিল। আমি যখন কলেজে নতুন ভর্তি হলাম তখন এক ছেলের ফাঁদে পড়ে গেলাম। ছেলেটা আমার সাথে প্রেম করতে চাইল। প্রথম দিকে তাকে একদম গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু সে নাছোড়বান্দার মত পেছনে লেগেই রইল। একটা সময় মনে হল সে আমার সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি তার প্রেমের ফাঁদে পড়ে গেলাম। তারপর অনেক ভুল করলাম। আমার ভেতর খুব নীরবে আরেক মানুষের বীজ উপ্ত হল। আমি গর্ভবতী হয়ে পড়লাম। তারপর আমার পৃথিবীটা বদলে গেল। আমার সেই নাগর আমাকে বিয়ে করল না। উল্টো এবরশন করাতে চাইল। উপায় না দেখে আমিও এবরশনে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার বলল- এবরশন করার সময় পেরিয়ে গেছে। এমন কথা শুনে আমার দেবনাগর আমাকে রেখে পালায়। আমি এক ভয়ংকর বিপদে পড়ি। আমার পরিবারের কাছে সব জানাজানি হয়। কিন্তু তখন পৃথিবীতে আমার আপন বলে আর কেউ রইল না। বুঝলি রে ফটকা, পৃথিবীকে আমি খুব ভালোবাসি, কিন্তু যখন এই পৃথিবী আমাকে চায় না তখন তো আমাকে সরে যেতেই হয়। তাই না? আমি সরে গেলাম। কিন্তু আমার ভেতর যে আরেকটা সত্ত্বা আছে, তার তো দোষ ছিল না। তার জন্যেই আমি মরেও যেতে পারলাম না। ঈশ্বর আমাকে এখন এক অদ্ভুত ক্রিয়েচার বানিয়ে রেখেছেন। আমি আমার পেটে সেই বাচ্চাকে বহন করছি। সেই বাচ্চা রক্ত চায়। তাজা রক্ত। তাই তো আমি এই পোড়োবাড়িতে লুকিয়ে রয়েছি। আমার বাচ্চার যখন রক্তের ক্ষুধা লাগে তখন এই মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যুবক ড্রাইভারদের শিকার করে নিয়ে আসি। তোকে আনতে কোন ঝামেলাই হয়নি। একটু পর আমার বাচ্চার ঘুম ভাংবে, তখন তাকে তোর রক্ত খাওয়াবো।’
শিমুল বলল, ‘আপনার কথা আর প্রত্যেকটা কাজ খুব অদ্ভুত। বুঝলাম আপনি একটা মৃত মানুষ। আমার খুব জরুরী কাজে যেতে হবে। আমার বন্ধুর বোনের অপারেশন হবে। তাকে রক্ত দিতে হবে। আমি রক্ত দিতে যাচ্ছিলাম। আপনি আমাকে আটকে রেখেছেন। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।’
দোযখবাসি শয়তান আবার খলবলিয়ে হেসে উঠে, ‘দারুণ ফটকা, তুই খুব কথা বলতে পারিস। সবাই তো আমার মরা চেহারা দেখেই অর্ধেক মরে যায়। আর তুই এখনো বেঁচে থাকার ফিকির করছিস। এখনো কি সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলছিস। তুই সহজেই মেয়ে পটাতে পারবি। কয় জনকে পটিয়েছিস এই পর্যন্ত?’
-‘আমি কাউকে পটাইনি, কারো ক্ষতি করিনি কখনো। আমি উপকার ছাড়া কারো কোন ক্ষতি কখনো করিনি। আমাকে যেতে দিন। কথা দিচ্ছি যতদিন বেঁচে থাকবো সবার উপকার করেই যাবো। শুধু একবার আমাকে সুযোগ দিন।’
-‘হা হা হা, কিরে ফটকা, বেলা নামের মেয়েটার কথা মনে আছে? সেই মেয়েটাকে তুই তো কিছুই করিসনি, শুধু কয়েক বন্ধু মিলে রুটি বানানোর মত বেলন দিয়ে ডলে দিয়েছিস। খুব উপকার হয়েছিল মেয়েটার, তাই না রে? আজ আমার একটু উপকার কর, আমার বাচ্চাটাকে আদর করে দে।’
শিমুলের অসাড় দেহের মেরুদণ্ড বেয়ে যেন সাপের মত একটা ঠাণ্ডা স্রোত নিচে নেমে গেল। রিয়া নামের এই পিশাচিনী বেলার কথা জানে? বেলার কথা মনে পড়ল শিমুলের, সহজ সরল একটা মেয়ে। কি অকপটে সে শিমুলকে বিশ্বাস করে নিয়েছিল। আর সেই বিশ্বাসের এক করুণ পরিণতি পেয়েছিল। বেলা মেয়েটা কি তবে রিয়ার বেশে ফিরে এসেছে?
শিমুল কম্পিত কণ্ঠে জানতে চায়, ‘তুমিই কি সেই বেলা?’
-‘ধুর গাধা, বেলার কি কোন বাচ্চা ছিল? আমার তো আছে। আমি, বেলা আর হাজারো মৃত লোক একই ভুবনে থাকি। তাই তো বেলার কথা জানি। কিন্তু আমি বেলাদের মত নই। তারা পুরো মরে গেছে। তাদের কোন দেহ নেই, কিন্তু আমার একটা গলিত দেহ আছে। আমি মরে গিয়েও মরতে পারিনি। পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যতদিন মাটির উপর চলব ততদিন তোর মত নারীলোভীদের রক্ত শুষে নেব।’
-‘আমি কিচ্ছু বিশ্বাস করি না। যা দেখছি সব মিথ্যা, তুমিও মিথ্যা, সবই একটা দুঃস্বপ্ন। এখনি আমি জেগে উঠে দেখবো সবকিছু স্বাভাবিক আছে।’
রিয়া হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে, তার একটা হাত রাখে শিমুলের বাম হাতের ওপর। রিয়ার শীতল হাতের ছোঁয়ায় শিমুলের হাতে তীব্র ব্যথার সঞ্চার হয়। রিয়া জানতে চায়, ‘এখনো কি স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে? তোর হাতটা কেমন হয় দেখতো।’ শিমুলের হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তার হাতের চামড়া বৃদ্ধদের মত কুঁচকে যেতে থাকে। সেই হাত হতে রিয়া যেন রক্ত-পানি সব শুষে নিচ্ছে। দেখতে দেখতে শিমুলের বাম হাত শুকিয়ে মমির হাত হয়ে যায়। ভয়ে ও বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ শিমুল ভাষা হারিয়ে বিস্ফারিত চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। রিয়ার চেহারা বদলাতে শুরু করে। সুন্দর চেহারাটা পুরো বিকৃত হয়ে ভয়ংকর পিশাচ চেহারা আবার ফিরে আসে। তার পচা অন্ত্র ভর্তি পেট আবার মৃদু দুলতে শুরু করে। দুলতে দুলতে পেটের উপরের অংশে বুকের কাছে চটের মত ছিঁড়ে বড় ফাঁক হয়ে যায়। সেই ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে আসে ভয়ানক একটা মাথা। মাথাটা দেখে শিমুল বুঝে যায় এটাই রিয়ার সেই বাচ্চা। কি ভয়ংকর তার চোখ, যেমন মা তেমন বাচ্চা। ক্যাংগারুর পেটের থলে থেকে যেভাবে ক্যাংগারুর ছানা বের হয়ে আসে সেভাবেই পিশাচিনী রিয়ার পেট হতে মুচড়াতে মুচড়াতে বাচ্চা বেরিয়ে এলো। বানরের মত সেই বাচ্চাটা পিশাচিনী রিয়ার গা বেয়ে নিচে নেমে আসে।

নিশ্চল শিমুলের চারপাশে কুকুরের মত গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে অদ্ভুত এক মানবশিশু। চারপাশের কাঠ এবং পুরনো কাপড়ে খসখসে শব্দ উঠছে। তার চক্রের পরিধি ছোট হতে থাকে। একসময় শিমুলের পায়ের কাছে এসে চোখে চোখ রেখে তাকায়। ফোলা ফোলা তার ছোট চোখ মুখ, এই চোখে মুখে যে অভিব্যক্তি ফুটছে তা শিমুলের পরিচিত নয়। তবে সে বুঝতে পারে অন্তিম সময় উপস্থিত।
ভয়াল চেহারার মানব শিশুটি শিমুলের পা বেয়ে উঠতে থাকে। শিমুল শেষবারের মত চিৎকার করতে চায়। কিন্তু গলায় এসে তার আওয়াজ থেমে গেল। সুড়সুড় করে পিশাচ ছানা শিমুলের বুকের কাছে উঠে আসে। ধীরে ধীরে সে তার পচে ফুলে ওঠা ঠোঁট দিয়ে শিমুলের বুক স্পর্শ করে।



উৎসর্গঃ ব্লগার কাওসার চৌধুরীকে। ব্লগিং শুরু করার দিন থেকে যিনি আমার পাশে থেকেছেন। যিনি সামুতে আমাকে প্রথম ব্লগার হিসেবে নিজের লেখা উৎসর্গ করেছিলেন। পাশে থেকে উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। :)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×