somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখি রে তুই...

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মীনা কার্টুন দেখে পাখি পোষার সখ চেপে বসল।
পাখিটা যেমন তেমন হলে চলবে না। একদম মীনার টিয়াপাখি মিঠুর মত হবে। মায়ের কাছে আবদার ধরলাম, মা আমি একটা টিয়াপাখি পুষবো। মা বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু মুখেই বললেন, পাখি এনে দেবার মত কোন তাড়া দেখলাম না। এদিকে আমি তো পুরাই অস্থির, কবে যে আমার একটা মিঠু আসবে।
মা প্রতিদিন দেবো দিচ্ছি বলে সময় পার করে দিচ্ছেন। আমি বুঝলাম বাবাকে ধরা ছাড়া উপায় নেই। গিয়ে ধরলাম বাবাকে, বাবা আমি মীনার মত একটা টিয়াপাখি রাখবো। এনে দাও না বাবা!
আমার জীবনের এক আশ্চর্য ব্যপার হল, যে আবদার পূরণে মা ব্যর্থ হতেন সেই আবদার বাবাই খুব দ্রুত পূরণ করে দিতে পারেন। বাবাকে বলার চব্বিশ ঘন্টার মাথায় খাঁচাসুদ্ধ এক টিয়াপাখি পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমি তো আমার পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখবো না। এটা হবে অবিকল মিঠুর মত। আমার টিয়াপাখি নিজের মনের মত উড়ে বেড়াবে। যখন আমি তাকে ডাকবো তখন সে উড়ে এসে আমার হাতে বসবে। আমার পাখি আমার সাথে কথা বলবে। একদম মীনার টিয়া মিঠুর মত।

আমি বুঝলাম এই পাখিকে প্রথমে একটা নাম দিতে হবে। তাই নাম দিলাম- পাখি। সহজ সরল নাম।
এরপরের কাজটা সামান্য কঠিন, পাখিকে আমার নাম শেখাতে হবে যেন কোন দরকার হলেই সে আমাকে নাম ধরে ডাকতে পারে। আমি আমার পাখিকে নাম শেখাতে উঠে পড়ে লাগলাম। পাঠকদের বলে রাখি, আপনারা আমাকে যেই নামে চেনেন এটা খুবই সহজ নাম। কিন্তু এই নামে আমাকে আমার ঘরের লোকজন মোটেই ডাকে না। কাছের মানুষদের কাছে আমি যেই নামে পরিচিত সেই নাম পাখিকে শেখাতে চাইলাম। বলা বাহুল্য, নামটা একটু কঠিন। অনেক মানুষ আমার আসল নামটাকে ঠিক মত উচ্চারণ করতে পারে না, টিয়াপাখির জন্য তো আরও কঠিন। তবুও শেখাতে হবেই।
পাখিকে নিজের নাম শেখাতে হলে নামটা পাখির সামনে বেশি বেশি বলতে হবে। এত বেশি বলতে হবে যেন পাখিটা শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলে।
ওরে বাপরে বাপ, পাখির সামনে আমি কত অসংখ্যবার আমার নাম উচ্চারণ করেছি জানি না। নিজের মুখে নিজের নাম এত বেশি আর কখনো বলিনি। সারাজীবনে নামটা যতবার বলেছি, অল্প কয়েকদিনে এর চেয়েও বেশি বলে ফেলেছি পাখির সামনে।
কিন্তু আমার পাখি দেখি বেশ দেমাকি। নিজের মুখে সে আমার নাম বলেই না। মনে মনে পাখিটাকে কত অনুনয় বিনয় করে বলেছিলাম, পাখি আমার, একবার নাম ধরে ডাকো না আমাকে। আমার নামটা শিখে নাও না গো পাখি। একবার যদি আমাকে শিখে নাও তাহলেই তুমি ফ্রি! এরপর তুমি আর আমি দুজন দুজনার।
কিন্তু না, পাখি দেখি খুবই রাশভারী। আমার নাম সে বলে না।
হাল ছাড়লাম না। দিনভর পাখিকে আমি আমার নাম বলি, আর রাতে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ার পর শুধু ভাবতাম, পাখির সাথে ভাব হয়ে গেলে আমি তাকে নিয়ে সব জায়গাতে ঘুরতে যাব। ছুটির দিনগুলোতে আমার পাখিকে নিয়ে আমি পার্কে যাব। সেখানে সে সবার সামনে উড়ে উড়ে ঘুরে অবশেষে আবার আমার হাতে ফিরে আসবে। টিয়াপাখি কি বাদাম খায়? আমি দুইটাকার বাদাম নিয়ে ছিলে ছিলে নিজেও খাব, আমার পাখিকেও খাওয়াবো। অনেক মজা হবে।
এক সপ্তাহ চলে গেল। পাখি বড় হারামি। আমার নাম সে বলেই না! মনে মনে অভিমান চেপে বসল, পাখিকে এতো আদর করি, সে কি একবারের জন্য আমার নামটা বলতে পারে না? একদম শুদ্ধভাবে বলতে হবে এমন কোন কথা নেই, ভুল হোক, তবুও তো সে বলতে পারে। না, সে ভুল শুদ্ধ কোন নামেই আমাকে ডাকছে না!
সপ্তাহ পার হল, একদিন স্কুল থেকে ফিরে যথারীতি পাখির খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। অমনি পাখিটা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার নাম বলে উঠলো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। পাখি আবার আমার নাম বলল, ভুল নয়, মানুষ আমাকে যেভাবে ডাকে এর চেয়েও সুন্দর করে আমার নাম ধরে পাখি ডেকে উঠে।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমার পাখি আমার নাম ধরে আমাকে ডাকছে।
আবারো আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো।
আমার কাছে তখন কেমন ভালো লেগেছিল তা আমি কাকে বোঝাতে পারবো? আরাধ্য প্রিয় ব্যক্তি যদি নাম নিয়ে ডাকে, তাহলে কেমন লাগে তা হয়তো কেউ কেউ বুঝবেন।
আমি সীমাহীন সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।
বেশি খুশিতে তখনি একটা ভুল কাজ করে ফেললাম, পাখির খাঁচার দরজাটা দিলাম খুলে। মনে করেছিলাম আমার পাখি আমাকে চিনে ফেলেছে, এখন সে আমার আদর বোঝে, আমি যে তাকে নিয়ে দিনরাত দুর্ভাবনায় মেতে রয়েছি তা সে বুঝেছে, এখন সে আর আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। কিন্তু আমাকে বোকা প্রমাণ করে দিয়ে পাখি উড়ে চলে গেল, হারিয়ে গেল চিরতরে।

আমার মনের দুঃখের কথা মাকে বললাম। আমার মা যেন জীবনে ঐ একদিনই আমার দুঃখটাকে খুব ভালো করে অনুভব করেছিলেন। মা বললেন, 'বোকা মেয়ে, এটা তো খাঁচাবন্দী পাখি। এটা মুক্ত অবস্থায় তোমার পোষ মানবে না তো। পোষ মানার জন্য আলাদা পাখি আছে। মা তোমাকে আরেকটা কিনে দেবো।'
আমি খুব অভিমান নিয়ে বললাম, 'আমি পাখি পুষবো না মা। আমার পাখি লাগবে না।'
অভিমানে আমার বুক ভেঙ্গে খালি কান্না আসছিল।

তারপর দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর পেরিয়ে গেল অনেক। এখন আমার মনে টিয়াপাখি পোষার মত বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ নেই।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার! এখনো আমি মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি আমার বারান্দার রেলিঙে বসে একটা টিয়াপাখি আমার নাম ধরে খুব সুন্দর করে ডাকছে।
ঘুম ভাঙ্গার পর বুকের ভেতর কোন অচেনা জায়গায় এখনো সেই অভিমান ছোট করে উকি দিয়ে যায়।



ছবিসুত্রঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×