দ্যা থিং ইজ, আমাদের শৈশবের মোটিভেশন বলেন, আর বিনোদন বলেন, ছিলো চৌকশ কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড, মুসা আমানরা। শৈশব থেকে একটু ওপারে পৌঁছুতেই মাসুদ রানার হাত ধরে চলে যেতাম দেশ থেকে দেশান্তরে। মেজর জেনারেল রাহাত খান, সোহেল, কিংবা সোহানা। কি দুর্দান্ত কৈশোর পাড় করেছি। ধনী পরিবারে জন্ম হয়নি। বই কিনতাম আমার বন্ধু সাগরের সাথে, নীলক্ষেত কিংবা পুরোনো বই বিক্রির কোন দোকান থেকে।
তারপর গন্ডি বাড়তে লাগলো। হুমায়ূন আহমেদের মেঘ বলেছে যাবো যাবো কিংবা কবি কিংবা হিমু মিসির আলি শেষ করে চলে গেলাম বিদেশী সব লেখকের বইয়ে। জুল ভারন, দস্তায়োভস্কি, হোমার থেকে আরও কত কি। যা পেতাম, তাই পড়তাম। ভলতেয়ার, বোদলেয়ার, এমিলি জোলা , জাঁ পল সাত্রে, র্যাবো, হেমিংওয়ে, হুগো
এরপর খুব অল্প বয়সে ব্লগোস্ফিয়ারে ঢুকে গেলাম। আকর্ষণ বাড়লো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। ব্লগ তখন অন্য একটা জিনিষ ছিলো। যুক্তি তর্ক প্রমান ছাড়া কথা বলা যায় না, আর তাও সবাই আমার থেকে অনেক বড়। পড়া শুরু করলাম মুক্তিযুদ্ধের বই। আমি বিজয় দেখেছি, রক্তের ঋণ এন্থনি মাস্কারানহেসের, একাত্তরের দিনগুলি, একাত্তরের স্মৃতি...... ক্রাচের কর্নেল, ইভেন পাক আর্মির মেজর সিদ্দিক সালিকের উইটনেস টু সারেন্ডারও পড়তে হয়েছে। কারন যুক্তি তর্ক করতে সব জানতে হবে।
এত কিছু বলার কারন অনেক। এক, আমাদের মোটিভেশন ছিলো বই। লিখিত দলিল। যা আলোর মত সত্য। তাই আমাদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ খুব কম। আমাদের ইন্টারনেটে ফ্রড মোটিভেটরের মোটিভেশন খুঁজতে হয় না।
দুই, আমরা গুগল পন্ডিত না। আমাদের জ্ঞান গুগলের জ্ঞানের সমানুপাতিক না। মিথ্যে দিয়ে সাজানো সাইট ব্লগ গুলোতে আমাদের বিভ্রান্তি নেই।
তিন, আজকের দিনের তাৎপর্য বুঝতে অনেক গভীরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু একদিনের জন্য রাস্তায় নেমে নেতা হননি। রবার্ট ফ্রস্ট জিজ্ঞেস করছিলেন, আপনি অনেক রাজপথে নেমেছেন, গ্রেফতার হয়েছেন কতবার। বঙ্গবন্ধু মুখ থেকে পাইপ সরিয়ে তুবড়ি ছোটালো শুধু, ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৯। ৫২ পর্যন্ত জেলে ছিলাম। ৫৪ তে মিনিস্টার হলাম। আবার গ্রেফতার হলাম ১৯৫৪। ১৯৫৫ পর্যন্ত কন্টিনিউ করলাম। আবার এরেস্টেড হলাম ১৯৫৮। আবার এরেস্টেড হলাম ১৯৬২ তে। আবার এরেস্টেড হলাম ১৯৬৬। তিন বছর জেলে ছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধের থেকে বড় মোটিভেশন আর কিছু হতে পারে না প্রজন্ম। হ্যা, আমি বলতে বলতে এই কথা তোমাদের কান পচিয়ে ফেলেছি।
টি-৩৩ বিমান উড়িয়ে নিয়া আসা বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান কে ধাওয়া করছিলো চারটি জঙ্গি বিমান। দ্যাট ওয়াজ এপিক।
কুলনেস বুঝতে চাও? মোটিভেশন চাও? হাবিবুর রহমান বীর বিক্রম পাকিস্তান নৌবাহিনীর দুই জাহাজ "এস.ইউ. ইঞ্জিনিয়ারস্ এল সি- ৩" এবং "এস টি রজার" ডুবায় দেয় চরে আটকাইয়া, দ্যাট ওয়াজ কুল ম্যান। তারপর হাবিব রে সবাই ডাকতো 'জাহাজমারা হাবিব।'
মোটিভেশনের গল্প লাগবে?
মেজর জেনেরেল খালেদ মোশাররফের নির্দেশনা ছিলো হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বিদেশী সাংবাদিক ও অতিথিরা থাকাকালীন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি যে শান্ত নয় এবং এখানে যুদ্ধ চলছে তা বোঝানোর জন্য শহরের আশে-পাশে কিছু গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে হবে; কিন্তু দু:সাহসী এই তরুণেরা ঢাকায় এসে ৯ জুন তারিখে সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্রেনেড হামলা করেন ছিলো অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ ও অচিন্তনীয় কাজ।
সন্ধ্যায় বিবিসির খবর থেকে খালেদ মোশাররফ এই অপারেশনের কথা জানতে পেরে বলেন, 'দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল! বললাম, ঢাকার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটাতে আর ওরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে।' তিনিই প্রথম এই দলটিকে "ক্র্যাক" আখ্যা দেন; যা থেকে পরবর্তীতে এই প্লাটুনটি "ক্র্যাক প্লাটুন" নামে পরিচিত হয়।
দ্যাট ওয়াজ ক্রাক।
অস্ত্র হাতে নিজের খুনিদের দেখেও গর্জে উঠে বলা, 'তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি, কী করবি- বেয়াদবি করছিস কেন?”......... এর থেকে বড় কি হতে পারে। কোন প্রাণ ভিক্ষার কান্না নয়, কোন আকুতি নয় জীবন নিয়ে। বাজখাই গলা দিয়ে খুনে সামরিক কর্মকর্তাদের ঘাবড়ে দেয়া, এর চেয়ে বড় মোটিভেশনের গল্প কে হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১৭