এই সিরিজের ব্লগ লেখা শুরু করলাম এই ভাইবা যে আজ হোক কিংবা কাল, ইনশাআল্লাহ্ আমার সুদিন আবারও ফিরা আসবো। সেই গত বছর থেকে এমন দৌড়ের উপর আসি যে থামার কোনো সুযোগ পাইতাসি না। যারে বলে, জীবন একেবারে "চাবি মাইরা, দিছে ছাইড়া", ননস্টপ দুর্ভোগ চলতেছে। এককালে মাসে হাজার দশেক টাকার উপর শুধু বই কিনা হইতো। সেইসব দিনের কথা এখন রূপকথার মতন মনে হয়। যাই হোক, বাইচ্চা আছি, টিক্যা আছি - এইটাই শেষ কথা। তো, দিন বদলাইলে এই বইগুলা কিন্যা বাসায় নিয়া আসুম। তাই এই লিস্ট বানাইয়া রাখলাম।
আর নামকরনের মাজেজাটা বইলা যাই। আসলে তো এই বইগুলা পড়ি নাই। হাতে নিয়া নাইরা-চাইড়া দেখা। তো বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা অংশবিশেষ পইড়া, বা বইয়ের বিষয় বুইঝা যখন বইটা পছন্দ হইছে তখন সেইটারে লিস্টে তুইলা ছবি নিসি। তাই, মন-পছন্দ থেইকা ফ্ল্যাপ-পছন্দ। তা, শুরু করা যাক।
০১। আওরঙ্গজেবের উপাখ্যান - আহকমিআলমগিরি, অনুবাদঃ বিশ্বেন্দু নন্দ
এর আগে আওরঙ্গজেবরে নিয়া জয়নাল হোসেনের লেখা "উইলে চার টাকা দুই আনা : সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভিতর-বাহির" পড়ছিলাম। সেই বইয়ে রাজাকে এমন মহিমান্বিত রূপে দেখানো হইছিলো যেইটা আমার পছন্দ হয় নাই। কারন, ইতিহাসের অন্যন্য বই থেইকা এতটুকু তো জানি যে আওরঙ্গজেবই খুব সম্ভবত সবচাইতে নিষ্ঠুর স্বভাবের মোগল সম্রাট ছিলো।
এই নিষ্ঠুর শব্দটা অবশ্য যথাযথ হইলো না। মসনদ পাইতে হইলে যা যা করা উচিত, তিনি তাই তাই করছিলেন। কর্মবীর যারে বলা যায়। তা সেই সব ইতিহাস নিয়া আরেকটু বিস্তারিত এই বইটা থেইকা জানা যাইবো আশা রাখি। এছাড়াও অবশ্য "মোগলনামা"-র দ্বিতীয় খন্ড-ও পড়ার তালিকায় আছে।
০২। অমৃতপান্থ - ভারতপথিক হিউ-এন-সাঙ-এর কাহিনী, চঞ্চলকুমার ঘোষ
দেড়হাজার বছর আগে ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম তার অসাধারণ মানবিক বাণী দিয়া নিজেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়া গেছিলো। সেই সময় সুদূর চীন থেকে এক বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউ-এন-সাঙ, বৌদ্ধ ধর্মের আরো গুঢ় তত্ত্বের খোঁজে পাড়ি জমান ভারতের উদ্দেশ্যে।
এই হাজার হাজার কিলো পথ, পুরোটাই পাড়ি দেন পায়ে হেঁটে। সেই একই পথ ধরে হেঁটে চলা উপন্যাস এই বইটা।
০৩। মেয়েদের চোরাগোপ্তা স্ল্যাংঃ শরীর ও অন্যান্য আলাপ, তৃপ্তি সান্ত্রা
বয়েজ স্কুলে পড়া পোলা আমি। পাশেই গার্লস স্কুল থাকলেও মেয়েদের মনে হইতো অন্য কোন গ্রহের প্রানী। প্রথম কম্বাইনড ক্লাস করা শুরু করি ক্লাস নাইনে উইঠা, ই-হক কোচিং-এ। তার কয়েকদিনের মধ্যেই জানতে পারলাম, মেয়েদের সামনে মুখ খারাপ করা যাবে না। কি আজিব কাণ্ড! মেয়েরা কি মুখ খারাপ করে না নাকি!? এ তো অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার!
সেই ধন্দ কাটলো প্রেমে পড়ার পর। বউয়ের থেইকা জানলাম মেয়েরাও গালি দেয় এবং দুষ্টু কথা বলে। কিন্তু সবই মিষ্টি মিষ্টি, ভালো কথার আড়ালে। সবই কোড ওয়ার্ড। সেইসব শব্দ শুনে মাথা ঘুরান্তি দিলো। তা আজ এতদিন পর, এই ধরনের বিষয়ের উপর লেখা একটা বই দেইখা ভালো লাগলো। তাই পড়ার লিস্টে তুললাম। এখন অবশ্য সেই দিন নাই। বা*, চো*না এবং তার চাইতেও কড়া কড়া সব স্ল্যাং এখন মেয়েরা অনায়াসেই দেয়। স্টিল, বেশ ইন্টারেস্টিং টপিক্স বইটার।
০৪। মোমেনশাহী উপাখ্যান - অমর মিত্র
গতবছর পড়া অন্যতম সেরা বই ছিলো রূপক সাহার লেখা "তরিতা পুরাণ" যা কিনা মনসামঙ্গল কাব্যরে নিয়া লেখা এক আধুনিক কালের আখ্যান সুন্দরবনের পটভূমিতে। এই বইটার ফ্ল্যাপ পইড়া সেই কথাই মনে হইলো। ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনীগুলারে বাস্তবে নিয়া আইসা এক দারুন ঐতিহাসিক, কাল্পনিক আখ্যান লিখসেন লেখক। গ্রেট জব। ব্রাভো। এইসব বই লেখাটাই আসল। কেউ না পড়লেও, না জানলেও, বেস্টসেলার না হইলে, হাইপ না উঠলেও সমস্যা নাই। এইসব বই হইলো আসল জিনিস।
পীর মোমেনশাহ, মহুয়া, মলুয়া, কমলা, কাজলরেখা, কঙ্ক ও লীলা, আয়না বিবি - লোককথার সব চরিত্ররে একসুতায় গাঁথা সহজ কাজ না। সেই সাথে সুসং দূর্গাপুর-কেন্দ্রিক বর্ণনা, হাজং বিদ্রোহ, গারো জাতির যুদ্ধ - সবমিলায়া মাস্ট রীড।
০৫। হ্যারিসন রোড - একরাম আলি
একটা সময় সাহিত্য করতে কলকাতায় ভীড় জমাইতো সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তরুণ যুবক-যুবতীরা। তাদের চোখে রঙ্গীন সব স্বপ্ন থাকতো। কিন্তু, স্বপ্ন তো ভাংতেই তৈরি হয়। আর তাই, একসময় দেখা যাইতো বাস্তবতার জমিতে তারা খাবি খাইতাছে। কেউ কেউ টিক্যা যাইতো, কেউ কেউ হইয়া উঠতো কিংবদন্তি। কিন্তু বাকীরা?
সেই সময়ের, সেই ঘটনাই এই উপন্যাসে উইঠা আসছে। কবি হওয়ার কষ্ট, পরিশ্রম, ত্যাগ, যন্ত্রণা সেই সাথে সাহিত্যের নানান চোরাবালি নিয়াও লেখক লিখসেন। বইটার ফ্ল্যাপ দেইখা সুনীলের "আত্মপ্রকাশ" আর হুমায়ুনের "কবি"-র কথা মনে পইড়া যাইতেছিলো।
(চলবে)