somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটিক তুই পালিয়ে যা...

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক কথায় চমৎকার ভোট। উৎসবমুখর ভোট। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছিলো।মোড়েমোড়ে, প্রধানফটকে, ভোটারদের লাইনের কাছে এবং ভোটকক্ষের ভেতরে। তিন রাস্তার মোড়ে দায়িত্বপালনরত ৫জনের সাথে প্রথম দেখা হয়। সবার গায়ে জনপ্রিয় নেতার ছবি সংবলিত টিশার্ট। সবাই বলে উঠলেন, “ ডায়রেক মাইরা দিয়েন, বুথের মধ্যে যাওয়া লাগবে না, ডায়রেক মাইরেন যান”। সবাই মুখচাওয়াচাওয়ি করলাম।

পরের মোড়ে পৌঁছলাম যখন, ৮-১০ জন টিনএজার স্বেচ্ছাসেবক বীরবিক্রমে এগিয়ে এলো, প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসার মত। সবাই একই টিশার্ট পরা, একই কথা সবার, ওপেনে (প্রকাশ্যে) দিতেহবে।

ঐতিহাসিক এ ভোটযাত্রায় সহযাত্রী ছিলাম ১০-১২জন। আমরা প্রধান সড়কে উঠে গেছি। ধীর পায়ে , খানিকটা সংশয় নিয়ে এগিয়ে চলছি ভোটকেন্দ্রের দিকে। টিনএজার গ্রুপের কমান্ডার একজনকে দ্রুত দৌঁড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। আমাদের অতিক্রম করে দ্রুত ভোটকেন্দ্রের দিকে ছুটে গেলো সংবাদদাতা শিশুটি। মুহূর্তেই খবর পৌঁছে গেল, “দশ বারটা ভোট আসতেছে”।
প্রধান গেট পাহারা দিচ্ছেন বজলু ভাই নিজেই। সাথে লোকজন। বজলু ভাই জেলা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি। লেখা পড়া না জানলেও এলাকার শিক্ষিত অশিক্ষিত, ছোট বড় সবাই তাকে ভাই বলে। যেমন বডি ফিগার, তেমন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। এক কথায় ভোটকেন্দ্রের লড়াকু সৈনিক। আমাদের সহযাত্রীদের মধ্য থেকে মাথামোটা এক ভোটার বলে বসলেন, “কেন, ওপেনে কেন দেব”? বজলু ভাই আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে উঠলেন। এই প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও কপাল ঘামে ভিজে গেছে। টকটকে চোখদু’টো যেন জ্বলছে। আবেগের উত্তেজনায় দুই ঠোঁট বার বার কেঁপে উঠছে। ৭ই মার্চের ভাষণের মত আঙ্গুল ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলছেন, “ওপেনে দিতে না পারলে চলে যান এখান থেকে, ভোট দেয়া লাগবেনা আপনার”। মাথামোটা সহযাত্রীটি একদম চুপশে গেলো।

আরেক বুদ্ধিমান সহযাত্রী এগিয়ে গিয়ে বজলু ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ ওপেনে কেন দিতে পারবনা বাবা, অবশ্যই ওপেনে দেবো।বজলু ভাই একটু থামলেন। নিশ্বাস তার ঘন হয়ে গেছে। জোরে জোরে হাপাচ্ছেন। তার সহযোগীরা যার যার মত করে আগান্তুক ভোটারদেরকে ভোট দেয়ার নিয়োম শিখিয়ে দিচ্ছেন। “ওপেনে দিতে হবে”।

লাইনে দাঁড়াতে হয় যেখানে, সেখানেও দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়োজিত ছিলেন।খুব আন্তরিকতার সাথে তারা ওপেনে ভোট দেয়ার নিয়মটি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার।

ভোটকক্ষের ভেতরেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছিলেন ভোটারদের। কাউকে সিল মেরে, কাউকে ভাঁজ করে দিয়ে , কাউকে বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে সহযোগিতা।

নরীদের কক্ষে নারী স্বেচ্ছাসেবক। আমার সহযাত্রী নারী ভোটাররা একেক জন একেক বিবরণ দিলেন। একজন বললেন, “আমারে ওপেনে দেতে কইছে, ওপেনে দিছি”। একজন বললেন আমার ব্যালট টান দিয়ে নিয়ে একজনে সিল মেরে বেলট ফেরত দিয়ে বলে, “নেন বাক্সের মধ্যে রাখেন”। একজন বললো, আমারে কইচে যান আপনারাটা দেওয়া হয়ে গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এবং নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত পরিশ্রমের সাথে কাজ করেছেন। জেলা যুব সংগঠনের রসভাপতি বারবার সবগুলো রুমে ঢুকছেন, দেখছেন, দ্ব্যার্থহীনকণ্ঠে নির্দেশনা দিচ্ছেন, “খবরদার, একটা ভোটও যেন এতিক সেদিক না হয়।”

পোলিং অফিসারদেরকে বলে দিচ্ছেন, “যারা ওপেনে সিল না মেরে চলে যাবে তাদেরকে লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে রাখবেন।আর যারা কাপড়ের আড়ালে যেয়ে ভোট দেবে তাদেরকেও মার্ক করে রাখবেন”।

বিপত্তি ঘটলো আরেক মাথামোটা সহযাত্রীকে নিয়ে। এত এত বার এত এত ভাবে বলে দেয়ার পরও সে পর্দার আড়ালে যেয়েই ভোট দিলো। কাউকে না দেখিয়েই ওমনি বাক্সের মধ্যে ফেলে দিল। একজন পোলিং অফিসার সাথে সাথে দাগ দিয়ে রাখলেন।মুহূর্তেই রটে গেল,“ফটিক পর্দার আড়ালে ভোট দিয়েছে”। ফটিক বাড়ি ফেরার আগেই তার বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি চৌকস দল পৌঁছে গেলো। দেশ এখন ডিজিটাল। ফটিকের মোবাইল বেজে ওঠে, “ফটিক তুই পালিয়ে যা, বজলু ভাইরা যাচ্ছে”।

ভোট দিয়ে ফেরার পথে দেখি একটি জটলা জটলার কেন্দ্রে এক মহিলা। বোরখাা পরা। মাথামোটা মহিলা জোরে জোরে বকে চলেছে।সাথে আরো ৩-৪ জন। নীরব। দ্বিধাগ্রস্ত। বাড়ির দিকে যাবে, নাকি কেন্দ্রের দিকে। মহিলাটি রীতিমত বক্তৃতা শুরু করেছে,“ ভোট আমার নাগরিক অধিকার, দেখিয়ে ভোট দিতে হলে দেবোনা ভোট, ইত্যাদি”।

টিনএজারদের কমান্ডার এগিয়ে আসে। “আপনার ভোট দেয়া লাগবেনা, বাড়ি যেয়ে ঘুম পড়েন। এই, তোরা চিনে রাখ, এইটা মৌলবির বউ”। মহিলা আবার বলতে শুরু করেন,“এই, তুই মন্টুর ছেলে, আমার ছেলের চেয়েও তোর বয়স কম। তুই এত কথা বলছিস কেন্? ….. ইত্যাদিইত্যাদি”।

ফটিক এখনো আত্মগোপনে। কিন্তু এভাবে কত দিন সম্ভব? ফটিক দিনমজুর। পালিয়ে থাকলে সংসার চলবে না। বেরই বা হবে কিভাবে? একেক বার একেক কথা ভেবে মনে শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করে।আবার চুপসে যায়।শেষ মেস সিদ্ধান্ত নেয়, আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসবে। কিল ঘুষি, চড় লাথি যা খাওয়ার এখনি খেয়ে নেনে। তারপর আর ভয় নেই।কিন্তু লুকিয়ে থাকলে পুরো পাঁচ বছরই লুকিয়ে থাকতে হবে। এটা সম্ভব নয়। সম্ভব্য ধোলাইটি খাওয়ার সময় অনুনয় বিনয় করে কী বলবে তাও রেডি করে রেখেছে ফটিক। “ভাই আমিতো ইচ্ছা কইরা পর্দার আবডালে যাইনাই। অফিসার কইলো, তাই গেলাম। তা ছাড়া পর্দার আড়ালে গেলেও ভোটতো নৌকায়ই দিচি”।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৫
২৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×