‘বুদ্ধিমান’ শব্দটার সন্ধি বিচ্ছেদ অতি চমৎকার। বুদ্ধি+বতুপ=বুদ্ধিমান। সেই এস এস সি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পড়েছিলাম। বতুপ কি করে মান হয়ে যায় এই রহস্য এখনও পরিষ্কার হয়নি আমার কাছে।
যাই হোক, কথা সেটা না। কথা হচ্ছে গিয়ে, আমার ইদানিং ধারণা হয়েছে জাতি হিসেবে আমরা দিন দিন দুর্দান্ত বুদ্ধিমান হয়ে যাচ্ছি। বুদ্ধিমান মানে যে সে বুদ্ধিমান না, বুদ্ধি ঘামের মতো টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে টাইপ বুদ্ধিমান।
মানতে পারছেন না? একটু ব্যাখ্যা করে বলি। একজন বুদ্ধিমান লোকের বৈশিষ্ট্য কি?
সে সবসময় আগে-পিছে চিন্তা করে কাজ করবে। তার জন্য ঝামেলা হতে পারে এমন কাজ সে কখনই করবে না। তার বাস্তব এর সাথে সম্পর্ক থাকবে। অবাস্তব কিছু নিয়ে লাফালাফি সে করতেই পারে না। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যে কোন বিপদে বুদ্ধিমান লোক সবসময় আগে নিজেকে রক্ষা করবে। কারন সে জানে –‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম।’ অন্যের অহেতুক ঝামেলা সে কোন অবস্থাতেই নিজের উপরে টেনে আনবে না।
খেয়াল করে দেখবেন, ইদানিং আমরা সবাই কিন্তু কম বেশি আদর্শ বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করছি! আমার কথাই ধরুন? শেষ কবে আমি আমার চেয়ে শক্তিশালী কারো প্রতিবাদ করতে গিয়েছি আমার মনে পড়ে না। সম্ভবত আপনিও পারবেননা। অবশ্য ফেসবুকের জ্বালাময়ী স্ট্যাটাসটা বাদ দিয়ে আর কি। এমন স্ট্যাটাস আমারও দুই একটা আছে।
সাম্প্রতিককালে চায়ের কাপে লাগাতার ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। ঝড় লেগেই আছে! প্রথমে ভারতে ধর্ষণ, তারপর টাঙ্গাইলে ধর্ষণ, এরপর শিক্ষক এর চোখে মরিচ পানি, এরপর আরও এক তারপর আর......এমন চলছেই। ঝড় গুলোর আয়ু খুব কম,অনেকটা সামুর অনির্বাচিত পোস্টের মতো- এক ঘণ্টা গেলেই খুজে পাওয়া মুশকিল। আমার তোলা ঝড় গুলোও ওইখানেই থেমে গেছে। কারণ, আমি বুদ্ধিমান। আমি জানি বেশি ঝড় তুলে যদি রাস্তায় নেমে পড়ি তাহলে নিশ্চিত প্যাঁদানি আছে কপালে। সর্বময় ক্ষমতায় যে ভদ্রমহিলাই থাকুক না কেন, প্রতিবাদের উত্তরে তারা একটাই ভাষা ব্যবহার করেন- রাম প্যাঁদানি।
এখন সি এন জি ওয়ালা মামারাও বুদ্ধিমান! উঠলেই মুচকি হেসে বলে-‘মামা,পুলিশ ধরলে কইয়েন মিটারে যাইতাছি।’ আমিও কি কম বুদ্ধিমান? বিশাল ভাড়া কবুল করে পাল্টা হাসি দিয়ে বলি-‘তথাস্তু।’ রাস্তায় অসুস্থ রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যায়, আমি বুদ্ধিমানের মতো তার সামনে গাড়ী ঢুকিয়ে দিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেই। আর যদি রাস্তায় কেউ পড়ে আছে দেখি তাহলে তো কথাই নেই, আগে নিজের বাসায় যাই পরে কথা। ভাল কথা! পড়তে গিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকাবেন না,এমন আপনিও করেন।
যাই হোক, ভাবতে কিন্তু অবাক লাগে। একটা অতি আহাম্মক জাতি কি করে এত বুদ্ধিমান হয়ে গেল! একাত্তর এর কথাই ধরেন? বেকুবের দল,কথা নাই বার্তা নাই লাঠি নিয়ে নেমে গেল ট্যাঙ্ক এর বিরুদ্ধে! আরে বাবা,সেনাবাহিনির সাথে কি করে পারবি তুই? কোথায় তাড়াতাড়ি শান্তি কমিটি নয় রাজাকার এ নাম লেখাবি, দুই একটা বেকুবের ঘর বাড়ি পোড়াবি তা না! ভাঙা রাইফেল নিয়ে দৌড়। কি বোকামি! কি অবাস্তব চিন্তা সব!
জানেন? এখনও এমন কিছু বোকা লোকজন বেঁচে আছে এই দেশে। ধাম ধুম প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যায়,ব্লগ লিখে ছুরি খায়, চুরি ঠেকাতে যায়। কেউ কেউ আবার আরও বেকুব, ওরা সিস্টেমটাকেই পালটানোর স্বপ্ন দেখে!
লাভটা কি হয় বলেন তো? ঘুরে ফিরে সেই প্যাঁদানিই তো খায়। আমি আপনি কি কখনো এত বোকা হব? যে ওদের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?
আমার মনে হয় কি, সবাই মিলে বোকা লোক গুলোকে খুঁজে বের করে জেলে ভরে দেই। কে বলেছে ওদের এইসব অবাস্তব স্বপ্ন দেখাতে? বুদ্ধিমানদের বুদ্ধিকে অপমান করার সাহস পায় কি করে ওরা!
এখনও সময় আছে,চলেন বেকুব গুলিকে সাইড করে দেই। তারপর সবাই মিলে হয় দেশটাকে খেতে শুরু করি, নয় যে খাচ্ছে তাকে তালি দিয়ে উৎসাহ দেই। কিছু না পারলে অন্তত চুপ করে থাকি যেন অন্যদের খাওয়ার ডিস্টার্ব না হয়।
বুদ্ধিমানের দেশে আমার আপনার মতো বুদ্ধিমানের তো অভাব নেই। সবাই মিলে শুরু করলে দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে শেষ করতে আর কয়দিনই বা লাগবে,বলেন?