কত্তা বাবু, কত্তা বাবু আজ ইফতারে কিছু বানাতে পারবো না। আগে থেকে বলে রাখলাম। পরে যেন বকা দিও না।
*ক্যান রে? আজ কি তোর ব্যামো হয়েছে?
বাবু, সরকার বাজেট দিল। অবুঝ-রা চেঁচামেচিও করলো। দাম বাড়লো গ্যাস-বিদ্যুতের। ভ্যাট বসলো সব কিছুতে। ট্যাক্স দিলুম মিছেমিছিতে। এরপরেও সকাল থেকে চুলো জ্বলে না, ফ্যান ঘুরে না।
*তুই গতকাল ইলেক্ট্রক হটপটে রেঁধেছিলি না নচ্ছড়? গতকাল ফ্যানের বাতাস হা করে গিলিস নি অভাগা?
বাবু তা তে? গতকালের জন্য আজ বুঝি কিছুই পাবো না। ওদিকে কত অবৈধ কারেন্ট সংযোগ আছে, কতশত গ্যাস নষ্ট হচ্ছে। বাজেটের ঘাটতিও আমাদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে। আর কত বাবু?
* যা হতভাগা, রাস্তা থেকে ঘুরে আয়।
কিন্তু বাবু কেন? ( বাবুর রক্তচক্ষু দেখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না)
বাবু রাস্তায় তো খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, উড়ছে ধূলা। বাড়ছে জ্যাম। তার উপর ভীষণ গরম। কষ্টে মানুষে ঝরছে ঘাম।
*সব তো দেখলি বটে আসল লেখা তবে কেন চোখ এড়ালো?
কোনটে বাবু?
*ন্যাকা আমার। দেখো নি.. "উন্নয়নের কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধায় দুঃখিত" গত শত বছরের উন্নয়নের সাক্ষী এই টিনের বোর্ড। এই উন্নয়নের জোয়ারে এক লাখ টাকা দিয়ে ফ্যান কিনেছে পর্যন্ত। নচ্ছর তোমরা, এইসব উন্নয়ন তো তোদের চোখে পড়ে না ( লাল চোখে অগ্নিশর্মা হয়ে যাওয়ার ইমো হবে) যা গিয়ে বাজার থেকে ফ্যান কিনে নিয়ে আয়। পুরানো ফ্যান আর রাখবো না।
বাবু এতেও সমস্যা আছে যে। টাকা যে পোষাবে না
*কেন রে হতচ্ছাড়া ? মাস তিনেক আগেই তো ব্যাংকে লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছি। ওটা ভেঙে ফ্যান কিনে আয়।
বাবু, এইবারের বাজেটে তিনমাস পরে লাখ টাকা তুলতে আরো ৪৪ টাকা জমা দিতে হবে যে।
বাবুর চোখে এইবার মাত্র আমি জল দেখলাম।।বাবু কাদে নি কোনদিন। সবসময় সরকারের পক্ষেই ছিলেন। আজ তাকে অসহায় হতে দেখলাম।
হঠাৎ বাবু চোখ মুছে বললেন.. সব ঝামেলা তোর ইফতার বানানো থেকে শুরু। সব তোদের জঙী কর্মকাণ্ড। আমিও দেখে নিবো।
বাবু কি যেন লিখা শুরু করলেন। জঙী সামগ্রী নিয়ে দুই উঠতি তরুণ গ্রেফতার। তাদের ঝোলায় পাওয়া গেল আধা কেজি ছোলা বুট আর শশা।
আমি চুপ করে রুম থেকে চলে গেলাম। আমায় আবার আধা কেজি ছোলা আর শশা দিয়ে ঝোলা বানাতে হবে। নইলে বাবু যে আমার মিথ্যে হয়ে যাবে