আজ বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম। বিশেষ মুহূর্তটা বাসার সবার সাথে অনুভব করতে চাচ্ছিলাম। আজ একাত্তরের ২৫ শে মার্চ স্মরণে ঠিক রাত ৯.০০ টায় বিদ্যুৎ চলে যাবে। পুরো ষাট সেকেণ্ড ধরে আমরা একাত্তরের ভয়াল রাত স্মরণ করবো। সেই রাতেও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। হয়ত সে রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন গুমোট পরিবেশ স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের নীতি নির্ধারকগন এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সারাদেশে একসাথে কারেন্ট যাবে। আলোতে এই জাতিকে একাত্তরের পর আর একত্র করা যায় নি। তাই হয়ত সমস্ত দেশকে এক আঁধারের ছায়ায় আনতে চেয়েছেন আমাদের নীতি নির্ধারকমণ্ডলী। আলো না হোক আন্ধার সই, সূর্য সন্তানদের ত্যাগ চান্দের আলোয় অকৃত্রিমভাবে উদযাপনের প্ল্যান আমাদের।
বাসায় এসে মোমবাতি নিয়ে বসে আছি। কারেন্ট যাওয়া মাত্রই মোমবাতি জ্বালবো। আঁধারের ভয়ংকর রুপ দেখবো। যদি একটু হলেও সে রাতের ভয়াবহতা বুঝতে পারি। হঠাৎ খেয়াল করলাম মোমবাতি আছে কিন্তু সাথে দেশলাই নাই।
অনেকটা যেন তপুর গানের মতনঃ
“এক হাতে মোমবাতি আমার, অন্য হাত খালি
খুঁজে ফিরি দেশলায়ের দু’একটা কাঠি-
বল কেউ...... দেবে কি?”
যাক গে, হঠাৎ খেয়াল করলাম ৯ টা বেজে গেছে কিন্তু কারেন্ট যায় নি। ভাবলাম আমার বাসার ঘড়ির সময় হয়ত আগানো। টিভি ছেড়ে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত “বিটিভি”চ্যানেল খুলে সময় দেখতে গিয়ে ভানুমতির খেল দেখলাম। যান্ত্রিক গোলযোগ না হওয়াতে তারাও বিব্রত হয়ে পরেছে। মাথায় আসলো রাত ৯টা তো অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার্ড সময় ছিলো, বাঙলা সময় তো আধঘণ্টা পরে আসে।
ধারণা ভুল ছিলো না। ৯টার শোক ৯.৩০ এ পালন করি। অনেকটা রবি ঠাকুরের মত করে বলা যায়ঃ "কারেণ্ট চলিয়া গিয়া প্রমাণ করিলো এতক্ষণ ধরিয়া কারেন্ট আছিল" (কাদম্বিনী গল্পের প্রেরণা)
বি.দ্রঃ আলোতে আমরা এক হতে পারি না, আঁধারেতে সমবেত হয়ে শ্রদ্ধা করার অঙ্গিকারও ধূলিসাৎ হল। এই জাতি আজ তর্জনী উচু করে বজ্রকণ্ঠের নেতৃত্বের অভাব তীব্রভাবে অনুভব করছে ।
তীব্র বিষাদে নিজেকে একাত্তরের আত্মসমর্পনকারী পাকিস্তানী থেকেও বেশি পরাধীন লাগে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪১