আকাশের চাদটা মেঘে ঢেকে গেছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাত বারটা বেজে ছয় মিনিট। সারা গায়ে তেল মেখে মাওলানা ইদ্রীস আর সাদেক মোল্লা রেডি। বড় হুজুর আজ মন খুলে দোয়া করেছেন। বলেছেন যে করেই হোক আজকের অপারেশন সফল করতেই হবে। প্লান করে দিয়েছেন খতিব সাহেব। ইদ্রীস থাকবে বাড়ীর বাইরে। ওর সাথে থাকবে গরু জবেহ এর বড় ছুরি। আর সাদেক মোল্লা শাবল দিয়ে সিধ কেটে রমিজের ঘরে ঢুকবে। ওর কোমরেও গুজে দেওয়া হয়েছে ছোট একটা ছুরি।
কাহিনীর শুরু আজ সকালে। রমিজের বাড়ীর পিছন দিকের মরে যাওয়া খেজুর ঘাছটার গুড়ী মাটি থেকে উঠানোর সময় শাবলের গুতোয় কি যেনো ঢং করে উঠেলো। হাত দিয়ে মাটি সরাতেই বেরিয়ে পড়লো একটা কাসার থালা। আকার দেখেই বোঝা যায় পুরোনো আমলের। আরও কিছু মাটি খুড়তেই বেরিয়ে এলো দেড় ফিট লম্বা একটা কষ্টিপাথরের মূর্তি। রমিজ তারাতারি গামছা পেচিয়ে বাড়িতে রেখে এসে ছিলো। কাউকে বলে নি। কিন্তু বিধি বাম। দেখে ফেলেছিলো কাজের বেটি রহিমা। রহিমার স্বামী আবার মাদ্রাসার সামনের হোটেলের মেসিয়ার। দুপুরে রহিমার কাছে শুনেই সে মাদ্রাসার বড় হুজুরের কানে খবর লাগিয়ে দেয়।
বড় হুজুর মনে প্রানে একজন মুসলিম। তার চিন্তা ভাবনা সাধারনের মত নয়। তিনি ঠিকই বোঝেন রমিজ এই মূর্তি ভারতে পাচারের প্লান করছে। অথবা থানাতেও জমা দিতে পারে। দু ক্ষেত্রেই মূর্তিটি সংরক্ষন শালায় চলে যেতে পারে। তাই ঠিক করেন কিছুতেই এ মূর্তিকে হাতছাড়া করা যাবে না। যে কোন মূল্যেই একে ধ্বংস করতে হবে। ইদ্রীস আর সাদেক মোল্লার উপর তার ভরসা আছে। তারা আগেও এই রকম অপারেশন মাশাল্লাহ খুবই যত্নের সাথে করেছে।
তবে হুজুরের মনে একটা খটকা থেকেই যায়। দেশে যে হারে মূর্তি ভাংগা হচ্ছে তাতে কদিন পর মূর্তি সংকট দেখা দিতে পারে। তবে বেশ কয়েকজন বলে ইংল্যান্ডে নাকি মোমের মূর্তি যাদুঘর আছে। আর খাটি নাসারার দেশ ফ্রান্সে নাকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে উলংগ জেনানাদের মূর্তি বসানো। আর আমেরিকায় তো বিশাল একটা আছেই। এগুলারও একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। এর জন্য বিশাল ফান্ড দরকার। এবার আরও কয়েকটা সৌদি ফান্ড জোগার করতে হবে।
হুজুর মনে মনে চিন্তা করে বিদিশি মূর্তি গুলা ভাংগার আগে একবার করে দেখে নিতে হবে। বিশেষ করে ফ্রান্সের গুলা। বিদিশি মূর্তি, আহা! নিশ্চয়ই বিদেশি লোকের মতই ফর্সা আর সুন্দর হবে।