somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রপোগান্ডা, স্টপ জেনোসাইড ও জহির রায়হান

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরের মতো এই ব্লগেও স্বাধীনতাবিরোধি রাজাকার-বদর নন্দনরা মাঝে মাঝে জহির রায়হানকে অবলম্বন মানেন। অবশ্যই স্বার্থ আছে। মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা নিয়ে কথা! একটি প্রচলিত ধারণা আছে তাদের মাঝে (বাপ-চাচারা বলছে, নেতারা বলছে) জহির রায়হান মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লিগের স্বেচ্ছাচারিতার একটা ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন। নাম স্টপ জেনোসাইড। আর এজন্যই যুদ্ধশেষে তাকে হাপিস করে দেয় বঙ্গবন্ধু সরকার। এসব অপপ্রচারের জবাব আগেই দেওয়া হয়েছে। তার চেয়ে বরং মূল ডকুমেন্টারিটি সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মিত সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রশংসিত চলচিত্র হচ্ছে স্টপ জেনোসাইড। ১৯ মিনিটের এই ডকুমেন্টারিটি তখন পাকবাহিনীর গণহত্যার তাৎক্ষণিক ফুটেজ স্বল্পতার মধ্যেও অপূর্ব নির্মাণে তৈরি এক তীব্র প্রতিবাদ। চিত্রনাট্যে জহির রায়হানের সঙ্গী ছিলেন আরেক অসাধারণ নির্মাতা আলমগীর কবির (সূর্য্যকন্যা, ধীরে বহে মেঘনা ইত্যাদি)। আলমগীর কবির ইংরেজী ধারাবিবরণী লিখেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন এতে। আর ক্যামেরায় ছিলেন অরুণ রায়।

শুরুতে দেখা যায় গ্রামের এক হাসিখুশী চপল কিশোরী ঢেকিতে ধান ভানছে। তার আগে লেনিনের কিছু উদ্ধৃতি শোনা যায় নেপথ্যে। দৃশ্য বদলে যায় গুলির শব্দ আর গগনবিদারী আর্ত চিৎকারে। চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর এক নারকীয় দৃশ্য। শুধু লাশ আর লাশ। চোখ উপড়ানো, মাথার খুলি উড়ে যাওয়া, মগজ বেরিয়ে যাওয়া গুলিবিদ্ধ লাশ। সামনে, পেছনে, সারিসারি। সাউন্ডট্র্যাকে ব্রাশফায়ারের শব্দ। এরপর একটি প্রাচীর ধ্বসে পড়ে আর পর্দায় ভেসে ওঠে স্টপ জেনোসাইড লেখাটা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে পাকিস্তানীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকেই তুলে ধরেছেন জহির রায়হান স্টপ জেনোসাইডে। মাত্র তিনটি দৃশ্য দিয়ে সাজানো তা। প্রথম দৃশ্যে জাতিসংঘের সদর দপ্তর। সুশীল আলোচনা হচ্ছে সেখানে, গৎবাধা ভালো কথা। পরের দৃশ্য ভিয়েতনামে মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমানের গোলাবর্ষণ। নারী-পুরুষ-শিশুদের গণহত্যা। যুদ্ধাপরাধে বিচারাধীন এক মার্কিন লেফট্যানেন্টের পক্ষে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাফাই। পরের দৃশ্যে সেই বাংলাদেশ। লাশের স্তুপ আর হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য। নেপথ্যে শোনা যায় জাতিসংঘের মানবাধিকার লঙঘনের ঘোষণা- তবে কি কেবল পরিহাস? মুক্তিযুদ্ধের এই ক্লাসিক ডকুমেন্টারিটি একাধিক পুরষ্কার জিতেছে বিভিন্ন চলচিত্র উৎসবে। তবে তার চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়ে সোচ্চার হতে বাধ্য করে।

ইয়াহিয়া সরকার যুদ্ধের সময় একটি শ্বেতপত্র বের করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল আওয়ামী লিগ বাঙালীদের কনভিন্স করে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। তাদের শিকার বিহারী এবং অন্যান্য উর্দুভাষী সম্প্রদায়। তাদের নির্বিচার গণহত্যা ঠেকাতেই সেনাবাহিনী নাক গলাতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিবাদে এক সাক্ষাতকারে জহির রায়হান প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় জানিয়েছেন কিভাবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুভ্যি ক্যামেরা দিয়ে নিজেদের হত্যাকাণ্ডের ছবি তুলে, বিহারীদের দিয়ে লুটপাট করিয়ে তা এডিট করে বাঙালীদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।



দেখুন বিট্রেয়াল নামে পাকিস্তানীদের অপপ্রচারণার একটি তথ্যচিত্র যাতে সবদোষ তারা চাপিয়েছে আওয়ামী লিগের ঘাড়ে।



দেখুন জহির রায়হানের সাক্ষাতকার:







পড়ুন জহির রায়হানের মৃত্যু রহস্য
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৩৬
২৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×