somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য আদার কনসার্ট ফর বাংলাদেশ : যেটার কথা কেউ বলে না!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বলতেই আমাদের চোখে ভাসেন জর্জ হ্যারিসন। যুদ্ধপীড়িত বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজন করেছিলেন অসাধারণ সেই আসরের। অনেকেরই হয়তো জানা নেই ঠিক মাস দেড়েক পর ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে হয়েছিলো এমনই আরেকটি রক কনসার্ট। আর সেটার উদ্দেশ্যও ছিলো বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহ।



ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন যেমন ইউএস ওপেনের ভেন্যু, কেনিংটন ওভাল তেমনি ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী টেস্ট ভেন্যুগুলোর একটি। সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হাতে এর মালিকানা। ১৯৭১ সালের দিকে আর্থিক দুর্দশা চলছিলো সারের। সুবাদেই তারা তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিচ্ছিলো মাঠ। ১৮ সেপ্টেম্বর সেখানে এক রক কনসার্ট আয়োজনের জন্য সারের অনুমতি চায় বাফেলো কনসার্ট লিমিটেডের রিকি ফার। এজন্য ক্লাবকে দেওয়া হয় ৩ হাজার পাউন্ড। কনসার্টের প্রমোটার ছিলেন হার্ভে গোল্ডস্মিথ। আর মূল উদ্যোগটি ছিলো ‘কস্তুর’ নামে একটি দাতব্য সংগঠনের। কেন্টের ব্রোমলিভিত্তিক (জায়গাটার নাম সম্ভবত পেঞ্জ) এই সংগঠনটি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য নানা ভাবে সাহায্য তুলছিলো।



‘গুডবাই সামার’ নাম দিয়ে এই কনসার্টের টিকেট ধরা হয়েছিলো সোয়া এক পাউন্ড। বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট লেখা ছিলো বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা। আগের দিন মাঝরাত পর্যন্ত কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকেট বিক্রি হয়েছিলো মাত্র ১০ হাজার। কিন্তু কনসার্টের দিন পাল্টে যায় ছবি। ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার হলেও ওভালে সেদিন দর্শক হয়েছিলো প্রায় ৪০ হাজারের মতো।



হওয়ারই কথা, কারণ বিজ্ঞাপনে নাম ছিলো দ্য হু’র- সে সময় রক অ্যান্ড রোলে কাঁপানো এক নাম। আরো ছিলো দ্য ফেস, যার ভোকাল ছিলেন তখন রড স্টুয়ার্ট। এছাড়া আমেরিকা, দ্য অ্যাটমিক রুস্টার, মট দ্য হুপল, লিন্ডিসফার্ন, গ্রিজ ব্যান্ড, ককাইজ, ইউজিন ওয়ালেস ও কুইন্টএসেন্স অংশ নিয়েছিলো সকাল ১১ টা থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে। আর এর সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন টেড ডেক্সটার- সে সময়ের বিখ্যাত ডিস্ক জকি ও এমসি। ফার অবশ্য চেষ্টা করেছেন বড় ব্যান্ডগুলোকে টানতে। কিন্তু দরদামে বনেনি।



খ্যাতির দিক দিয়ে বাকি ব্যান্ডগুলো অনেক পিছিয়ে থাকায় শেষ পর্যন্ত ফেস এবং হু’কেই টানতে হয়েছে গোটা কনসার্ট। হু গেয়েছে তাদের কালজয়ী সব গান যা তখন ছিলো মাত্র রিলিজড। এর মধ্যে ছিলো লাভ এইনট ফর কিপিং, মাই জেনারেশন, সি মি ফিল মি, বেইবি ডোন্ট ইউ ডু ইটের মতো হিট সিঙ্গেলস। এখানে কুইন্টএসেন্সের কথা বলতে হয় একটু। মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের নিয়ে গড়া এই রক ব্যান্ডটি সে সময় বেশ নজর কেড়েছে।



অনুষ্ঠানের আগেই উদ্যোক্তারা জানিয়ে দিয়েছিলো তারা ১৫ হাজার পাউন্ড দেবে। এর তিনগুনেরও বেশী অর্থ উঠলেও তারা প্রতিশ্রুতির বেশী আর হাত খোলেনি। কস্তর নীল প্লাস্টিকের কিছু বাক্স বানিয়ে দর্শকদের মধ্যে পাঠিয়েছে বাড়তি কিছুর আশায়। অনেকগুলো বাক্স ফেরেইনি। তবে এসবের মধ্যে আলাদা করে বলতেই হয় রড স্টুয়ার্টের কথা। চিতা বাঘের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ ফোঁটা কাটা জ্যাকেট আর প্যান্ট পড়ে গান গেয়েছেন তিনি। এক পর্যায়ে জ্যাকেটটি খুলে দেন নিলামে বিক্রি করতে। আর সে বাবদ ৫০০ পাউন্ড যোগ হয় তহবিলে।



‘দ্য হু’ আলাদা পিএ সিস্টেম ব্যবহার করেছিলো। এজন্য তাদের অংশটুকু আরো বেশী উপভোগ করতে পেরেছে দর্শকরা। এর আগে সাউন্ড সিস্টেমে অসন্তুষ্ট রড স্টুয়ার্ট একটি গান গেয়েই ফিরে যান। সাফ জানিয়ে দেন ত্রুটি না সারালে গাইবে না ফেস। আধঘণ্টা পর সমস্যা মিটলে স্টেজে ফেরেন তারা। এর বাইরে দর্শকদের মধ্যে ড্রাগসের ব্যবহারও বেশ সমালোচিত করেছে কনসার্টটিকে। দর্শকদের থেকে গায়করাও কম যাননি। হু যথারীতি তাদের গিটার ভাঙ্গার রীতি চালিয়ে গেছে।



তবে কনসার্টটিকে রক অ্যান্ড রোলের পাগলপনার টালিখাতায় যোগ করার কৃতিত্বটা কিথ মুনের। হু’র ড্রামার এসেই ক্রিকেটার সাজা ডেক্সটারের হাতের ব্যাট কেড়ে নেন। সেটা দিয়ে ড্রামও বাজান খানিকক্ষণ। শেষদিকে সঙ্গীরা যখন গিটার আছড়াচ্ছেন, কিথ ভাঙ্গেন তার ড্রাম। ভাঙ্গেন মানে সেটার মধ্যে গিয়ে পড়েন। সারা স্টেজে এমনভাবেই ছড়িয়ে যায় তা যা দেখে ডেক্সটার বলে উঠেন : "As you can see, an encore is impossible. We have drums everywhere." সেটি ছিলো আসলে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা।



শেষ কথা : কনসার্টটি পুরোটাই রেকর্ড করা হয়েছিলো ভবিষ্যতে এলবাম ও ফিল্ম করার আশায়। কিন্তু অংশগ্রহণকারী ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে রয়ালটি নিয়ে না বনায় শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় পরিকল্পনা। টেপগুলো স্মৃতি হয়ে হয়তো পড়ে আছে কোনো বেসমেন্টে। কদরহীন, অনাদরে।

ছবি: কনসার্টের প্রকাশনার মলাট, বিজ্ঞাপন, কনসার্টের সময় দর্শকপূর্ণ ওভাল, মট দ্য হুপল, দ্য ফেস, হু, কিথ মুনের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ড্রাম বাজানো
ভিডিও : এটি আসলে দ্য ফেসের মে বি আ’ম এমেজড গানটির সময় দর্শকদের মধ্যে থেকে ধারণকৃত অডিওট্র্যাক, রড স্টুয়ার্টের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:০৩
৪৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×