somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘর হইতে কয়েক পা ফেলিয়া- বাড়ির পাশে নবাব বাড়ি-পর্ব আহসান মঞ্জিল

১৭ ই মে, ২০১১ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

: দোস্ত চল ঘুরে আসি বান্দরবন/সুন্দরবন.।.।.।.।
: যাওয়ার তো খুব ইচ্ছা ছিল বন্ধু কিন্তু টাইম তো নাই। অফিসে কাজের যেই চাপ/ পড়াশুনার যে চাপ কেমনে যাই বল।
: দোস্ত সময় তো নাই ঘুরতে যাওয়ার, তাছাড়া এত কষ্ট করে এতদুর যেতে পারব না।
: যাইতে তো চাইছিলাম কিন্তুক আম্মা যাইতে দিব না :(
.................।

এইসব বাহানা বানায়ে যারা ঘরকুনো হয়ে গেছে, শহরে থেকে হয়ে গেছেন শহুরে কারাগারে বন্দী তাদের বলছি, এবার তোরা দাড়া, দুই পা সামনে বাড়া!

ঢাকায় যারা থাকেন, ব্যস্ততার জন্য ঘোরাঘুরি করতে পারেন না আপনারা চাইলে কিন্তু ঢাকাতেই ঘুরে আসতে পারেন ৪০০ বছর বয়সী ঢাকার কিছু ঐতিহাসিক স্পট। এবারের পর্ব আহসান মঞ্জিল।



ছবিটি উইকি কমন্স থেকে নেয়া, ২০০৫ সালে তোলা (বর্তমানে নতুন করে রঙ করা হয়েছে)

অবস্থানঃ
ঐতিহাসিক এই প্রাসাদটি পুরোনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গার পাড়ে অবস্থিত।

একটু গল্পঃ
ফিরে যাই মুঘল আমলে। এখন যেখানে আহসান মঞ্জিল দেখা যায় সেখানে এলাকার বিশিষ্ট জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহর বাগানবাড়ী ছিল। ১৭৪০ সালে তার ছেলে শেখ মতিউল্লাহ ফরাসী ব্যবসায়ীদের হাতে বাড়িটি বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে খাজা আলিমুল্লাহ এই বাড়িটি ফরাসীদের কাছ থেকে কিনে নেন এবং নিজ পরিবার সহ বসবাস শুরু করেন। তার পুত্র নবাব আব্দুল গনি এই বাগানবাড়ীর পূর্বাংশে একটি বিরাট প্রাসাদ নির্মান করেন তার ছেলে নবাব খাজা আহসানুল্লাহর জন্য এবং নাম দেন আহসান মঞ্জিল।


নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (খাজা আহসানুল্লাহর পুত্র) আহসান মঞ্জিলের সামনে তার পরিবারবর্গের সাথে। (এই ছবিটি ঢাকা নবাব পরিবারের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার তোলেন, প্ররবর্তীতে জাগরন নামে একটি সুভেনির থেকে এই ছবিটি সংগ্রহ করা ২০০৫ সালে, বর্তমানে এটি উইকি কমন্স এ আছে।)

১৯৫২ সালে নবাবদের জমিদারী বিলুপ্ত হলে নবাব বংশের উত্তরসুরী রা এই মঞ্জিল ছেড়ে চলে যায়। মঞ্জিলের বিভিন্ন রুম সাধারন লোকদের কাছে ভাড়া দেয়া হয় এবং দ্রুত এই মঞ্জিলের জৌলুস নষ্ট হতে থাকে। অবশেষে ১৯৭৪ সালে নবাব পরিবার এই বাড়ীটি নিলামের ঘোষনা দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই নিলাম বন্ধ ঘোষনা করে একে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সম্পত্তি করে দেন এবং এর সংস্কার ও উন্নয়ন করে একে টুরিষ্ট স্পট ও মিউজিয়াম হিসেবে উন্মুক্ত করেন।



আহসান মঞ্জিলের বর্তমান ছবি। (উইকি কমন্স থেকে নেয়া)

অনেক তো গল্প বললাম, চলুন এবার নবাব বাড়িতে ঢুকে পড়ি।

কিভাবে যাবেনঃ
যারা পুরোনো ঢাকায় থাকেন তাদের কে ইসলামপুর কোথায় এটা বলার মনে হয় প্রয়োজন নেই। যারা অন্যত্র থাকেন তাদের বলছি, আপনারা নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত আসবেন, (গুলিস্তান থেকে নর্থ সাউথ রোড ধরে কিছুদূর গেলেই পড়বে নয়াবাজার মোড়) এবার নয়াবাজার মোড় থেকে বাবুবাজারের দিকে যেতে থাকবেন, বাবুবাজার ব্রীজের বাম পাশে নিচ দিয়ে কিছুদূর গেলে আরেকটি মোড় পাবেন, এবার বামে গেলেই ইসলামপুর। যারা গাড়ী নিয়ে যাবার প্লান করছেন তাদের বলি গাড়ি নিয়ে ইসলামপুর ঢোকার কোন মানে হয় না। রিকশাও ঠিক্মত যেতে পারে না! সবচেয়ে ভাল হয় যদি বাবুবাজার ব্রীজের নিচ থেকে হেটে যান। ইসলামপুর ঢুকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই আহসান মঞ্জিলের রাস্তা দেখিয়ে দেবে।

প্রবেশ মূল্যঃ
যেহেতু এটি একটি যাদুঘর তাই আপনাকে টিকেট কিনতে হবে। টিকেট মূল্য ২টাকা। বৃহস্পতিবার আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে। আপনারা যদি ক্যামেরা আনেন তাহলে ক্যামেরা নিয়ে জাদুঘরে ঢুক্তে পারবেন না তবে মঞ্জিলের চারপাশে ঘুরতে এবং ছবি তুলতে পারবেন। ক্যামেরা জমা রেখে জাদুঘরে ঢোকা যাবে।


মঞ্জিলে ঢোকার রাস্তা




মঞ্জিলের কিছু ছবি


মূল বাড়ীর সাথে অন্দরমহলের সংযোগ পথ।



ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা!


মূল বাড়ি।




বাড়ির পেছনের অংশ




ঝড় এলো, এলো ঝড়!


বৃষ্টিস্নাত নবাব বাড়ী।


অপেক্ষা।


অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, বালতি ভর্তি বালি।


কাকবাড়ি।


অতিথি


পিছনের বারান্দা।




প্রাঙ্গনের ফুল।




জাদুঘরে ছবি তোলা নিষিদ্ধ (গোপনে কয়েকটা ছবি তুলছিলাম!) তাই ছবি দেয়া গেল না। জাদুঘরে বেশ কিছু মজার ব্যাপার দেখতে পাবেন। একটি মজার তথ্য দেই। আহসান মঞ্জিলে কোন টয়লেট নেই! কারন নবাবদের ভ্রাম্যমান টয়লেট ছিল যেগুলো তার চাকররা নবাব যেখানে যেত সেখানেই বহন করে নিয়ে যেত!

বিশেষ আকর্ষনঃ
ইদানিং তো প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। নবাব বাড়িতে বসে বৃষ্টি দেখার সৌন্দর্য অতুলনীয়। যারা দেখেন নি তাদের কাছে এই সৌন্দর্য বর্ননা করা সম্ভব নয়।

যাওয়ার সময়ঃ
আহসান মঞ্জিল প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে এবং অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা ৩০ থেকে ৭টা ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।


তথ্যসূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Ahsan_Manzil
Click This Link

ছবিঃ
প্রথম তিনটি ছবি বাদে বাকি ছবিগুলো তুলেছেন আবিন সুর
গুগল ম্যাপ ভিউঃ
Click This Link

ভ্রমন বিষয়ে আমার অন্যান্য পোস্টগুলোঃ
ঘর হতে কয়েক পা ফেলিয়া (ছবিসহ বিস্তারিত) পর্ব-কুয়াকাটা, ফাতরার চর।

ঘর হতে কয়েক পা ফেলিয়া (ছবিসহ বিস্তারিত) পর্ব- শ্রীমঙ্গল,মাধবকুন্ড।
ঘর হতে কয়েক পা ফেলিয়া (ছবিসহ বিস্তারিত) পর্ব- নাফাখুম
ঘর হতে কয়েক পা ফেলিয়া (ছবিসহ বিস্তারিত) পর্ব- রাঙ্গামাটি
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১১ সকাল ১১:২৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×