আমাদের ক্রিকেট দল জিতে গেছে। মহাসাগর এলমেলো করে সে জয় নাড়িয়ে দিয়েছে-কাঁপিয়ে দিয়েছে-ভাসিয়ে দিয়েছে ব' আকৃতির পুরো ভূ-খন্ড। জিতে গেছে বাংলাদেশ। জিতে গেছি আমিও।
দুপুর দু'টা থেকে অফিস। দলের ব্যাটিং টা দেখেই দৌড় দিতে হল তাই। অফিসে ঢুকেই পিসি'র সামনে ক্রিকইনফো খুলে বসে থাকা। আহা কি অদ্ভুত ঘোর লাগা ম্যাচ। কোন তুখোড় পরিচালকের জমজমাট থ্রিলার যেনো।
ছোটবেলায় ভুতের সিনেমা দেখতে বসলে এরকম হত। দুরু দুরু বুক, হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় দেখার মত সাহস করে উঠতে পারবো না। তাও অসহায় সম্মোহনে তাকিয়ে থাকা স্ক্রিনের দিকে।
ছন্দে চলা শত্রু কে এক বীর মুহুর্তে নামিয়ে আনে মাটিতে। আর ঘন অন্ধকারের নিকষ অমানিশাকে স্তম্ভিত করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের স্বপ্ন। সেখান থেকে দূর্দান্ত রক্ষণাত্মক দূর্গ তৈরি করে তারা। সেই লৌহ কঠিন দূর্গে ফাটল ধরায় সেনাপতি নিজে। জয় প্রায় হাতের মুঠোয়। প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া শত্রু ভুমি ভেদ করে আবির্ভূত হয় নতূন শক্তিতে। পূরাণের কোন মুনির বর যেনো করায়োত্ত তার। তার বধ যেনো অসম্ভব। নরকগুলজার কুরুক্ষেত্রে তখনই এক মরণ বান ছুড়ে মারে এক বিস্ময় বালক। আহত অসুরের লেজটুকু মুড়ে দেয় জয়ের স্বপ্ন দেখানো সেই বীর।
আহা যেনো মহাকাব্য। এ যেনো খনার বচন। অবিশ্বাস্য তবুও বাস্তব- যেনো নিয়তি!
পুরো অফিস জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। শ্রমিক থেকে ম্যানেজার সবাই ব্যাপক খুশি। একটু পর পর এক একটা ছেলে এসে আমাকে খুশির সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে, "স্যার আমরা জিতে গেসি"। আমাদের নিয়ে অভিযোগ আমরা নাকি কলা পাতায়ও ভগবান দেখি। সাদামাটা আঠপৌরে ঘটনাকে নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করে মহাকাব্য গড়ি। আমি অবাক হই এটা অভিযোগ হয় কিভাবে ভেবে। এটাতো অসামান্য ক্ষমতা। নোনা জলেতো সকলে ভাসে অহেতুক নোনা জল ভাসানোর ক্ষমতা ক'জনের থাকে!
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, তোমরা জেনে রাখো- মহাসাগরের এপারে ছোট্ট এই ব'দ্বীপের প্রতিটা চোখ আজ বঙ্গোপসাগর, প্রতিটা বুক বাংলাদেশ!!