বাবা থাকলে হয়তো এই ব্যাপারগুলা আমাকে দেখতে হতনা,পিতা নাই বলে বড় হবার পরেই সংসারের সব দায়-দায়িত্ব আমার উপরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি ও খুশি মনে লাফাতে লাফাতে নিজের মাথায় সব দায়িত্ব তুলে নিলাম, কিন্তু তখন হয়তো বুঝতে পারিনি এই দায়িত্ব আমার উপরে এতটা বাস্তবতার সম্মুকে ফেলবে । জীবন আমার কাছে এত নিষ্ঠুর হয়ে প্রকাশ করবে ।
আমি সহ ঘরের সদ্যসের সংখ্যা চারজন, তিন ভাইবোনই পড়াশুনা করি,নিজেদের ঢাকাতে কোন বাড়ি নেই, বাসা ভাড়া করে থাকি । এই শহরে চারজনের একটা সংসার,যেখানে তিনজনের লেখাপড়ার খরচ,বাড়ি ভাড়া,খাওয়া দাওয়া,অন্যান্য আর কতশত খরচ । তারপরও ভালোই চলে যাচ্ছিলো । কিছুদিন যাবত অনেক খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হল । দুই মাসের ঘর ভাড়া বাকী, বাড়িওয়ালা প্রতিদিন একবার করে খুজে যায়,মাসের ১৪ তারিখ এখনও বাঁজার হয়নি,আম্মা খাবারের ব্যাপারটা সামলে নিচ্ছে । প্রতিদিন ভার্সিটি যেতে ১০০ টাকার উপরে লাগে তাই ভার্সিটি যাইনা,কিছুদিন পরে আবার ভার্সিটি সেমিস্টার ফ্রি দিতে হবে । সব কেমন জানি মাথার উপরে চলে আসছে ।
কিছুদিন যাবত ঘরে চোরের মত আস্তে আস্তে ঢুকি, চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে থাকি, রাতের খাবার খাইনা, কারন খাইতে গেলে আম্মার সাথে কথা বলতে হবে,আম্মা জিজ্ঞেস করবে টাকার ব্যাবস্থা হইছে??
“কি জবাব দিবো, না হয়নাই, আমি কিছু করতে পারিনাই, আমার কিছু করার ক্ষমতা নাই”
আমার বয়সের অন্য দশটা ছেলের দিকে তাকালে আমি অবাক হই,আমার আশেপাশের অনেক বন্ধুরাই কিছুদিন পর পর নতুন নতুন বাইক কিণে,গার্লফ্রেন্ড নিয়ে গুরাগুরি করে,সকাল সন্ধ্যা আড্ডা দিয়ে সারাদিন সময় নষ্ট করছ । এগুলা দেখে হিংসা করিনা, খালি মনে একটা প্রশ্ন জাগে, আমার সাথে কেন এমন?? আর আমি,সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুমানের আগ পর্যন্ত ফ্যামিলি ফ্যামিলি করতে থাকি, মাঝে মাঝে রাতের স্বপ্নটা তদের নিয়ে দেখি ।
হা, আমি চাইলে রাতারাতি অনেক টাকা আয় করতে পারি,আমার সামনে সেই সুযোগ আছে । কিন্তু সেইটা ন্যায়ের না অন্যায়ের রাস্তা । যাকে বলে অসৎ,দুর্নীতি,রক্তচুষা,দোকা,খারাপ রাস্তা ।
শরিলে বাবার রক্ত কিনা তাই পারি না, হয়তো না খেয়ে মরে যাবো তারপরও এগুলা করা হম্বব হবেনা,অন্যায়টাকে অনেক ঘৃণা করি । যতটুকু শিক্ষা নিজের ভিতরে আছে সেটা আমাকে এই কাজ করতে দিবেনা,বাবার আদর্শ আমাকে করতে দিবেনা ।
তাহলে কি করবো ?? এর থেকে মুক্তির উপায় কি ?? আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা । দায়িত্বগুলা তাড়া করেছে আমাকে, দায়িত্বগুলা শেষ করতে চাই,যেঁরে ফেলতে চাই সব ।দায়িত্ব আমাক অনেক বেশি গিরে ফেলেছে ।
মার মুখের দিকে তাকাইনা নিজেকে অনেক পাপি মনে হয় । ছোটভাইয়ের সামনে ভুলেও যাইনা । ছোটবোনের দিকে লজ্জা নিয়ে তাকাতে হয় । আশে পাশের মানুষগুলার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি ।
এত কষ্টের মাঝেও সবাই যখন আমাকে বলে কেমন আছো, তখন নির্লজ্জের মত মুখে হাশি নিয়ে বলে যাই, ভালো আছি । সত্যি কি ভালো আছি ??
**নিজেকে নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছি,এই কাজটা করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তারপরও করে যেতে হবে,নিজেকে যদি নিজের কাছ থেকে লুকাতে না পাড়ি, তাহলে হয়তো আমি আমাকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিবো ।