somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগের পাতা ফাঁদে বিএনপি

০২ রা জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সরকারী দলের কৌশলের কাছে একের পর এক ইস্যু হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলের। মাঠে মারা যাচ্ছে বিএনপির আন্দোলনের কৌশল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন বিল পাস হওয়ার পরও কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি।
৩০ জুন জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন বিল পাসের পরও বিএনপি হরতালের মতো কঠোর কোন কর্মসূচি দিতে পারেনি। অথচ ১২টি ইসলামী দল এ বিল পাসের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। বিল পাস হবার পর বিএনপি শুধু বিক্ষোভ মিছিল করে দায় সেরেছে। এ ছাড়া ৩০ জুন বিকেলে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারর্পাসনের কার্যালয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলন করে বিল পাসের বিরোধিতা করে প্রতিত্রিুয়া ব্যক্ত করেছেন। কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিলের কিছু অসংগতি তুলে ধরে সমালোচনা করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর মত জ্বলন্ত একটি ইস্যুতে জোটের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা না করায় ৪ দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। কি কারণে খালেদা জিয়া এত বড় ইস্যু হাতে পেয়েও কর্মসূচি দিলেন না তা নিয়ে সর্বত্র গুঞ্জন উঠেছে। বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেছে সংসদে। তখন দুএকটি হরতাল দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে বিল পাসের পরেও সংবাদ সম্মেলন করে নীবর থাকায় সরকার বিরোধী রাজনীতিতে তিনি পরাস্ত বলে মনে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের কৌশলের কারনেই খালেদা জিয়া হাতের ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করতে পারেননি।

তাৎক্ষণিকভাবে হরতালের মত কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিএনপির হাইকমাণ্ড সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। তা ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারনে ৩৬ ঘন্টার দেশব্যাপী হরতালের পর হরতাল ডাকা নিয়ে বিএনপি হাই কমাণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে বিগত হরতালগুলোতে মাঠে গুটিকয়েক কেন্দ্রিয় নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। এ কারণে হরতাল ডাকা হলে রাজপথের চিত্র কি হবে তা বিএনপি হাই কমান্ডের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু কেন্দ্রিয় নেতাই নয় নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশসদস্যকে হরতালের মাঠে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই তত্ত্বাবধায়কের মত ইস্যু পেয়েও বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারছে না বলে অনেকে মনে করছেন। তবে বিএনপি যখন সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ইস্যু পেয়ে মাঠ গরম করার কর্মসুচি ঘোষণা করে তখনই সরকার একেক নতুন ইস্যু সামনে এনে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

এর আগে মাঠে মারা যায় বিএনপির দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানান দাবিতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি। ৩১ মে প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার কোন সুযোগ নেই বলে ঘোষণা দেবার পর গরম হয়ে উঠে রাজনীতির মাঠ। ওইদিন বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। শুধু তাই নয় গত ৫ জুন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন। এরপর রাজনীতির মাঠে পিছে পড়ে যায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইস্যু। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবিতে বিএনপি তার সমমনা মিত্রদের নিয়ে এ ইস্যুতে আন্দোলন শূরু করে। সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পর পালিত হয়েছে ৩৬ ঘন্টার হরতাল। এরপর বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে দেয় আরাফাত রহমান কোকোর অর্থ পাচার মামলার রায়। গত ২৩ জুন সাজা ঘোষনার পরও বিএনপি বড় ধরনের কমৃসূচি ঘোষনা করতে পারেনি।

এদিকে ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ায় এ ইস্যুও মাঠে মার খাচ্ছে কি না তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইস্যুতে পরিণত হয়ে পড়ে কি না তাই তারা ভাবাচ্ছে।

মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর প্রথমে বিএনপির থলিতে ফেলে দেয় ট্রান্সজিট চুক্তির ইস্যু। এ ইস্যুতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ঝড় তুলেন। আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি। এই ইস্যু নিয়ে যখন বিএনপি আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করলো তখন সামনে আসলো খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ইস্যু। চল্লিশ বছরের স্মৃতি বিজরিত এই বাড়ি থেকে নেত্রীকে বের করে দেওয়ার মতো আবেগঘন ইস্যুতেও বিএনপি কোন জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ যখন আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে শুরু করলো তখনই সরকার তাদের সামনে কৌশলে ছেড়ে দেয় ট্রানজিট ফি ইস্যু। সরকারের কৌশল আঁচ করতে না পেরে বিএনপির বুদ্ধিজীবি ও শীর্ষ নেতারা ট্রানজিট ফি নিয়ে সমালোচনার ঝড় তোলেন। ভারত ট্রান্সজিট সুবিধা পেলে কত টাকা ফি দিবে তা নিয়ে বিএনপি গবেষণা শুরু করে দেয়। এই ফাঁকে সরকার ভারতের সাথে ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে অনেকটা সহজে সমাঝোতায় পৌছে যায়। ট্রান্সজিট ফি ইস্যুটি সামনে চলে আসায় ভারতের সাথে আগের ইস্যুগুলো বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে বিএনপি মে মাসে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকার পতনের কর্মসূচির ডাক দিলো। এবারও সুযোগ বুঝে সরকার তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি সামনে আনে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের ইস্যুতে ঢাকা পড়ে যায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি। বিএনপির কোন নেতা এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির কথা ভুলেও উচ্চারণ করেন না। ঠিক তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটিও বিএনপি হারাতে বসেছে। কারণ সরকার সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের পর কৌশলে অন্তবর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি সংযোজন করে রেখেছে। যাতে করে বিএনপি সহজে আওয়ামী লীগের পাতা ফাদে পা দেয়। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সমালোচনা না করে অন্তবর্তী সরকার কিভাবে গঠন করা যায়, কাদের নিয়ে গঠন করলে নির্বাচনে সুবিধা হবে এসব বিষয়ে আলোচনায় মত্ত থাকে বিএনপি। গত আড়াই বছরে বিএনপি বাঘা বাঘা ইস্যু পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সরকারের এইসব কৌশলের কারণেই। এবারও তাই ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।


Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×