আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে শামিমের বাবা যখন মারা যায় সেই সময় ৭ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘোর বিপদে পড়ে যান শামিমের মা লতিফা খাতুন। তার স্বামী মনোয়ার মিয়া পিডিবি তে মিটার রিডার হিসাবে কাজ করতো। নিজের ঘর ভিটা থাকায় জৌলশ না থাকলেও লতিফা খাতুনের সংসারে কোন অভাব ছিলনা। বড় ছেলে শামিমের বয়স ছিল ১৯ বছর।উপরের মহলে অনেক দেন দরবার করে শেষ পর্যন্ত শামিম তার বাবার অফিসে লাইনম্যান হিসাবে চাকরি পায়। ছোট ভাই বোন আর মা কে নিয়ে শামিম আবার শুরু করে নতুন সংসার। চাকুরীর পাশাপাশি বাসা বাড়ীতে ছোট খাট ইলেকট্রিকের কাজ করে চলত এর পরেও কিছুটা অভাব থাকলেও শামিমের সংসারে সুখের ঘাটতি ছিল না মোটেও। তিল তিল করে মানুষ করতে থাকে তার ছোট ভাই বোনদের। বিয়ে করে তারই বাড়ির চাচাতো বোন সেলিনা কে। সেলিনা আগেই থেকে সব জানত বিধায় সেই খুব সহজে নিজেকে মানিয়ে নেয় শামিমের সংসারে।
একে একে শামিম বিয়ে দিয়ে দেয় তার সব ছোট বোন দের। সবার ছোট বোনকে যখন বিয়ে দেয় শামিমের চোখে মুখে হাসির ফোয়ারা। সেই কি আনন্দ এক বন্ধূকে বলেই দিল এখন আর আমার কোন চিন্তা নাই বাকি জীবনটা ভাইদের কে প্রতিষ্ঠিত করার পর নিজের মেয়েদের মানুষ করতে করতে কাটিয়ে দিব। সেই তার ছোট দুই ভাই কে অনেক ধার দেনা করে পাঠাল বিদেশে। আর নিজের বউ কে বলতে লাগল এতদিন তোমাকে কিছু দিতে পারি নাই এবার দেখবা সব শুধে আসলে মিটিয়ে দিব। শামিমের মুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর।
ছোট দুইটা ভাই তার জন্য প্রতি মাসেই টাকা পাঠাতে থাকল। ভাই দের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে শামিম টাকার বড় ভাগটা জমাতে থাকল। ৩ বছর পর যখন শামিমের ৪ বছরের ছোট মাসুদ বিদেশ থেকে আসে। সেই তার বড় ভাইয়ের জন্য অনেক কিছু আনে। বড় ভাইকে অভয় দিয়ে বলে আপনার আর কোন কষ্ট করা লাগবেনা এক জীবনে অনেক করেছেন এখন আমরা ছোট দুই ভাই আছি আমরাই সব কিছু দেখা শুনা করবো। শামিম মনে মনে ভরসা পায়। তার নিজের তিন টা মেয়ে আছে সবাই স্কুলে পড়ে। ওদের মানুষ করতে হবে,বিয়ে দিতে হবে। এখন আর আগের মত খাটতে পারে না সে, গত বছর একটা কারেন্টের পিলার থেকে পড়ে গিয়ে তার একটা পা ভেঙ্গে ফেলেছিল সে। অনেক চিকিৎসা নিয়েছে, যদিও এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁট তে পারে কিন্তু আগের মত বল পায় না। সে ভাবতে লাগল মাসুদ কে বিয়ে দেওয়া দরকার আনেক দেখে শুনে একটা মেয়ে ঠিক করল মেয়েটি একটা গার্মেন্টস এ কাজ করত, যদিও শামিমের প্রথমে পসন্দ হয় নাই, কিন্তু তার বউ সেলিনা যখন জানাল যে মাসুদ এই মেয়ে কে খুব পসন্দ করেছে সে আর আপত্তি করে নাই। সেই নিজের মন কে বুঝ দিতে লাগল এই মেয়েটা যেহেতু গরীব ঘরের চাহিদা অনেক কম হওয়ারই কথা বিয়ে করালে হয়তো ভাইটাও অনেক সুখে থাকবে। অনেক আয়জন করে বিয়েটা হয়ে গেল। (চলবে)