মাস দুয়েক আগে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্দ্যালয়ে। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে আমবততলা নামক জায়গায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্দ্যালয়টি। এই ভার্সিটির রয়েছে ছেলে মেয়েদের জন্য একটা করে হল(মজার ব্যাপার হল মেয়েদের হলটি মসজিদের পাশেই)একটা একাডেমিক ভবন, একটা সুরম্য মসজিদ, সেই সাথে একটা ক্যান্টিন। ভিসির বাসভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তদের জন্য একটা ডরমেটরি। শহর থেকে দুরে হওয়ার কারনে বাহিরের জগত থেকে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই ভার্সিটির ক্যামপাস।
যাইহোক বন্ধুর সাথে দীর্ঘ আড্ডা দেওয়ার পর যখন ফিরার পালা আসলো, তখন পড়লাম মহা মসিবতে। কোন যোগাযোগ ব্যাবস্থা চোখে পড়লোনা। বন্ধুরে বল্লাম কিরে তোরা কিভাবে শহরে যাস? সেই যা বল্ল তাতে আমি পুরো আক্কেল গুড়ম হয়ে গেলাম। বন্ধুটি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমাকে বল্ল দোস্ত আমরা শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের সাথে বাসে করে কোনমতে শহরে যাই। কিন্ত আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য মাইক্রোবাসে ও পাজেরো গাড়ীর ব্যাবস্থা আছে। ওরা আমাদের সামনে দিয়ে মাইক্রোতে চড়ে যাতায়াত করে। আমি অবাক হয়ে জিগ্গাস করলাম তোরা ভিসি কে কিছু বলিসনাই? তখন সেই আমকে জানালো বলে কোন লাভ নেই ভিসি নিজের পদ ধরে রাখার জন্য এদের কে খেপাবেনা।
আজব এই দেশ গতকালকে সেই বন্ধুর সাথে ফোনে কথা হল, বন্ধু জানাল আমরা আন্দলন করতেছি, আমি শুনে খুশি হলাম, তাহলে তোরা এত দিনে বুঝলি তোদের যাতায়াতের একটা ব্যাবস্থা করার জন্য। সেই অনেকক্ষন চুপ থাকার পর বল্ল নারে যাতায়াতের ব্যাবস্থা করার জন্য নয়। আমাদের ভার্সিটির কন্ট্রোলার আমাদের একজন টিচারকে সবার সামনে হাতগুটিয়ে মারতে এসেছিল তাই এই লোকটার অপসারনের দাবীতে আমরা ক্লাস বর্জন করে আন্দলন করতেছি। আমি কারন জিগ্গাস করলাম সে আমকে যা বল্ল তার সারমর্ম হলো ১০/১২ দিন আগে একটা বাসের নিচে চাপা পড়ে আমাদের ভার্সিটির একটা ছেলে আর একটা মেয়ে মারা যায়। আমরা ১৫/১৬ শিক্ষক ওদের দেখতে যেতে চাইছিলাম। এই জন্য মাইক্রো নেওয়ার জন্য ড্রাইভারকে ফোন দিই, কিন্তু ড্রাইভার আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ না করে ঐ কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের একজন শিক্ষক গাড়ীটা থামতে বলায়, গাড়ী থেকে নেমে ঐ শিক্ষককে তেড়ে আসে মারতে আসে আর বাকীরা গাড়ীতে বসে গালাগালী করে।
আমরা এর প্রতিবাদ করায় ওরা হুমকি দিচ্ছে আমারা যদি বেশি বাড়া বাড়ি করি আমাদের ঐ শিক্ষকের মাথা কেটে ভার্সিটির গেটে ঝুলিয়ে রাখবে। আমি বল্লাম এত সাহস পায় কোথায় থেকে এরা? সেই বল্ল এরা সব এখানকার স্থানীয় তাই ভিসিও ওদের ভয় পায়।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম, যেই ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকদের এই অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে থাকতে হয় সেই ইউনিভার্সিটির ভবিষ্যত কি হবে আমি ভেবে পাই না।