সকলের ধৈর্য্য ও মানবিক মনোভাব নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য বিশেষ নিবেদন করা হলো।
আজ আমার ভাবির দ্বিতীয় সিজার। সিজারের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে রক্তের প্রয়োজন। ডাঃ গতদিন কনফার্ম করেছিল দ্বিতীয় সিজারে নাকি ব্লাড বেশি প্রয়োজন হতে পারে। আজ রাতে ভাবির সাথে কথা হওয়াতে ভাবি বলল ব্লাড ম্যানেজ করা হয়েছে। আমি জানতে চাইলাম কোথা থেকে ম্যানেজ করলেন?
ভাবি উত্তরে বলল " কওমি ব্লাড ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া" নামে একটি ব্লাড ডোনেট সংস্থা থেকে। আমরাও নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে ব্লাড ম্যানেজ করা হয়েছে । চিন্তা মুক্ত থাকা যায় অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আজ সকাল ১১টায় ভাবিকে সিজারে নেওয়ার কথা। দুঃখের বিষয় এই যে, যাদের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। নাম্বার ও সুইচ অফ দেখাচ্ছে। অফিসে ফোন করা হয়েছে তারা বলছে যাদের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল তারা নাকি আল্লামা শফী হুজুরের জানাজায় চলে গেছেন। তখন আমাদের মাথার উপর বড় আকাশটা ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে কি করি ভেবে পাচ্ছিলাম না। এত ইমার্জেন্সি কি ব্লাড কোথাও পাওয়া যায়? এবং ভাবীর শারীরিক অবস্থা ও ভালো না। ডাক্তার কি করবে কোন ভাবেই ফাইনাল ডিসিশন নিতে পারছে না। বাতাসে থুথু উড়ানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না আমাদের। কাছে থেকে একটা অসহায় মূখের দিকে থাকাতে ও পারছিলাম না। যদি ডানা থাকত এই ব্যক্তি গুলোকে উড়াল দিয়ে নিয়ে এসে বুঝিয়ে বলতাম মৃত ব্যক্তি পৃথিবী থেকে চলে গেলে আর আসে না, আপনারা ছোখের সামনে কফিনের মৃত দেখছেন,আর আমরা দেখছি বেডের উপর বাচার আকুতি। পরিশেষেঃ আল্লাহর উপর সকল ভরসা রেখে ডাঃ রিস্ক ভন্ডিংয়ে সিগনেচার নিতে বাধ্য হল।
এখন প্রশ্ন হলঃ
১) একজন মৃত ব্যক্তির জানাজা কি ইম্পোরট্যান্ট হয়ে ছিল যে আরেকজন মানুষকে বিপদে রেখে?
২) একজন ব্যক্তি পরলোক গমন করেছে, আর একজন মা তার সন্তানকে মুক্তি করার জন্য বার বার অসহায়ত্বের দৃষ্টি খুলে দেখছে কওমির মাদ্রাসার কোন লোক আসছে কি না। ব্লাড ডোনেট করতে। কোনটা ইম্পোর্টেন্ট ছিল? প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা বদ্ধতা, নাকি মৃত ব্যক্তির জানাজা? ('হে ইমানদারগণ, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করবে।' (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত :১)
৩) প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদাবদ্ধ যখন হয়েছিল তারা তখন ও কি জানত না আগামীকাল আল্লামা শফি সাহেবের জানাজা?
৪) ব্যক্তি অন্ধত্ব হওয়া খারাপ কিছু না। জীবিত ও মৃতের পার্থক্য বুঝাটাই সফলকাম নয় কি?
যাইহোক, কওমি ব্লাড ব্যাংক একটি মানবিক ব্লাড ডোনেট প্রতিষ্ঠান,সমাজের নানামুখী সমস্যা নিয়ে হোক আপনাদের পথচলা, কিন্তু আমরা আপনাদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করব ব্যাক্তির প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠানে না পরে যায় এবং রক্ষক যেন রক্ষক ই থাকে।
বিঃদঃ : আমার লেখার উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তিগত বিষয়ের উপর বা প্রাতিষ্ঠানিক মান ক্ষুন্ন নয়।
লেখক : রাজ সোহল। রিপোর্টার: দৈনিক ফ্রন্টিয়ার, ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল newskantho.com