somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের সবচেয়ে বড় “ফাঁদ’’

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সান্যাল বাড়ির বড়ো বউ রমলা। শ্বশুরবাড়ি গ্রামে, স্বামী চাকরি করে শহরে। সপ্তাহে দু'দিনের জন্য বাড়িতে আসে। এই রমলার ছিল সকলকে খুশি করার রোগ, সকলের সামনে নিজেকে ভালো প্রতিপন্ন করার নেশা। সে গোটা সংসারের কাজ নিজের কাঁধে তুলে নেয়। শ্বাশুড়ি মা, ননদরা সাহায্য করতে এলে তাদের বিশ্রাম করতে পাঠিয়ে দেয়।


রমলার স্বামী ছুটিতে বাড়ি এসে বউয়ের দেখা পায় না। সারাক্ষণ টইটই করে কাজ করে চলেছে সে। দু'টো গল্প করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু বউয়ের আর সময় কোথায় তার জন্য! রমলার শ্বাশুড়ি মা বুঝতে পেরে রমলাকে নিজের ঘরে যেতে বলেন, কিন্তু সে যায় না। রমলার ননদদের বিয়ে হয়ে যায়, দুই দেওরের বিয়ে হয়ে যায়। ইতিমধ্যে রমলার এক মেয়ে হয়, তার নাম টুয়া।

রমলার স্বামী ভাবে, এইতো এবার বাড়িতে আরো বউয়েরা আছে। সে শহরে দেখেশুনে একটা বাড়ি ভাড়া করে বউ আর মেয়েকে নিয়ে যেতে চায়। বাড়ির সকলে রাজি, কিন্তু রমলা রাজি হয় না। সে বলে, "ছি ছি, একি বলছো তুমি! আমি বাড়ির বড়ো বউ! আর সেই আমি কিনা সব দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে শহরে ফুর্তি করতে চলে যাবো!" গোটা পাড়ায়, আত্মীয়মহলে রমলা "আদর্শ বউ"। এতো বড়ো খেতাব ছাড়া যায়! অগত্যা তার স্বামী হতাশ হয়ে একাকীই ফিরে যায় শহরে।

রমলার জায়েরা মজা পেয়ে গেছে। "দিদি একেবারে মায়ের মত আমাদের আগলে রাখে" বলে সব কাজ রমলার ঘাড়ে ফেলে নিজেরা এদিক ওদিক ঘুরতে চলে যায়। কখনও নিজেদের স্বামীর সঙ্গে, কখনও বা বাপেরবাড়িতে। এতে রমলার কোনো আপত্তি নেই। এমনকি সে রান্নাঘরে কাউকে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় না। গোটা বাড়িতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে বসে আছে। তার ধারণা হলো, আমি ছাড়া সব অচল। আমার মত ভালো বউ কেউ পাবে!

রমলার মেয়ের সঙ্গে তার খুড়তুতো ভাইদের ঝগড়া মারপিট হলে রমলা আগুপিছু না জেনে আগে গিয়ে মেয়েকে দু'ঘা কষিয়ে দেয়। টুয়ার তখন এগারো বছর বয়স। নিজের মতো বসে পেয়ারা খাচ্ছিল। তার খুড়তুতো ভাইয়েরা গিয়ে কেড়ে নেয়, ভাইবোনদের মধ্যে মারপিট হয়। এতে রমলার জায়েরা মুখ ভার করে রমলার কাছে গিয়ে টুয়ার নামে নালিশ ঠুকে দেয়। রমলা তেড়ে এসে মেয়েকে একটা চড় মেরে বলে, "ছোটো ভাইদের এমনি এমনি মারছিস! এমন মেয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়া ভালো।"

একে তো বড়ো হওয়ার সময়, মনে অনেকরকম ভাবনাচিন্তা চলতে থাকে। তার উপর টুয়া দেখেছে ভাইদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হলে তার মা সবসময় তাকেই আগে মারে, বকে। নিদারুণ অভিমানে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে টুয়া। রমলার মনে বড়ো একটা ধাক্কা লাগে। সংসারের কোনো কাজ আর সে করে না, ঘরের কোণে চুপচাপ বসে থাকে। রমলার স্বামী তাকেই দায়ী করে সবকিছুর জন্য।

প্রথম প্রথম কিছু না বললেও কয়েকদিন পর থেকেই রমলার জায়েরা মুখ খুলতে শুরু করে। "কতোদিন আর মেয়ের শোকে বসে থাকবে! সংসারে থাকতে হলে কুটো তো নাড়তে হবে, না কী!" এরকমই সব মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে রমলার কানে। রমলা উপলব্ধি করে, তার যা ছিল সে হারিয়ে ফেলেছে। সকলের কাছে এতোদিন ধরে ভালো হওয়ার জন্য সে যে এত পরিশ্রম করলো, এতো ত্যাগ করলো সবই অন্তঃসারশূন্য।

কী বুঝলেন তাহলে? জীবনের সবথেকে বড়ো ফাঁদ হলো সকলের সামনে ভালো হওয়ার প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় যে মানুষ কতকিছু হারিয়ে ফেলে, কতো কাজ যে নিজে না চাইতেও করে তা সে নিজেই বুঝতে পারে না। তবে ভালো হওয়ার চেষ্টা না করা মানে যে অন্যদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া, তা কিন্তু নয়। অন্যের প্রতি সম্মান রেখে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছাকেও সম্মান করতে পারলে এই ফাঁদে আর পড়তে হয় না, জীবনটাও চাপমুক্ত ভাবে বাঁচা যায়।

লেখার সোর্স:- অপ্রত্যাশিত হিমু
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×