somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিশরীয় সভ্যতা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিশরীয় বিজ্ঞানের প্রথম ধাপ ছিল জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত শাস্ত্রের বিকাশ । জ্যোতির্বিদ্যার উন্নয়নের ধারা হিসেবে পূর্ববর্তী বর্ষপঞ্জী বিষয়ক আলোচনায় কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে । মুখ্যত কৃষি অর্থনীতির প্রয়োজনে গ্রহ নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে যেয়ে মিশরীয়রা জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রেখেছিল । গণিত শাস্ত্রের বিকাশ মিশরে গণিত শাস্ত্রের বেশ অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল । মিশরীয়রাই পাটিগণিত ও জ্যামিতির উদ্ভাবন করেন বলে পণ্ডিতদের মত । পাটিগণিতের ক্ষেত্রে তারা যোগ , বিয়োগ ও ভাগ পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল । তবে গুণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে পারেনি । তারা মশমিকের হিসেব জানলেও ‘ শূন্যের ’ আবিষ্কার করতে পারেনি । ভগ্নাংশ সম্পর্কে মিশরীয়দের সামান্য জ্ঞান ছিল । মিশরীয় সভ্যতার প্রাচীনতম কালেই হিসেব রাখার প্রয়োজনে গণিতশাস্ত্রের চর্চা চলতে থাকে । অক্সফোর্ডের অ্যাসমোলিয়েন যাদুঘরে একটি দণ্ড রয়েছে । ৩,৪০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রথম রাজবংশীয় যুগের মিশরে এটি তৈরী হয়েছিল । এতে লিপিবদ্ধ কয়েকটি সংখ্যা ছিল , যেমন ১,২০,০০০ জন বন্দী , ৪,০০,০০০ টি গবাদী ও ১৪,২২,০০০ টি ছাগল । রোমান ধাচে এই বৃহৎ সংখ্যাগুলো লেখা হয়েছে । প্রত্যেকটি দশমিককে এক মিলিয়ন পর্যন্ত গুণিতক করার প্রতীক রয়েছে এতে এবং প্রয়োজন মতো বারংবার এর পুনরাবৃত্তি ৬৪ করা হয়েছে । সাধারণত বৃহত্তম সংখ্যাগুলি প্রথম তালিকাভুক্ত করা হত । দেখতে ভালো দেখা যায় এরকম যে কোন নিয়মে সংখ্যাগুলো সাজানো হতো ।পিরামিডের নির্মাণ কাজের জন্য জ্যামিতিক জ্ঞান অপরিহার্য ছিল । চুনাপাথরের টুকরোগুলো নির্দিষ্ট অবস্থানে আনার জন্য পিরামিড নির্মাতাদের তা সঠিক মাপে কাটতে হতো । এই কাজের জন্য জ্যামিতিক ও Stereotomer বা নিরেট পদার্থ কাটার বিদ্যা জানা আবশ্যক ছিল । এছাড়াও পিরামিড তৈরীর জন্য ত্রিকোণ ভূমি পরিমাপের প্রয়োজনেও জ্যামিতিক জ্ঞান থাকা ছিল অপরিহার্য । ত্রিভুজ , চতুর্ভুজ , বহুভূজ ও বৃত্তের ক্ষেত্রফল এবং সিলিণ্ডার পিরামিড প্রভৃতির ঘনফল তারা নির্ণয় করতে পারতো । পরবর্তীকালে মিশরীয় গণিত বিষয়ক ৩৬ টি মূল দলিল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । এগুলো ৩৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে লিখিত হয়েছিল । ভাষা ছিল মিশরীয় , কস্টিক ও গ্রীক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ১৬ টি দলিলও ছিল । এগুলো ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ ও সম্পূর্ণ । চিকিৎসা বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রাচীন মিশরীয়রা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । প্রথমদিকে মিশরের চিকিৎসা সংক্রান্ত ধারণা অনেকটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল । ধীরে ধীরে তা বিজ্ঞান সম্মত রূপ লাভ করে । খ্রীষ্টপূর্ব ১৭০০ অব্দের দিকে মিশরীয় চিকিৎসকগণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে রোগ নির্ণয় করে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করতেন । তৃতীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জোসার ( Zoser ) এর উজির ইমহোটেপ ( Imhotep ) ছিলেন প্রাচীনতম চিকিৎসক । তিনি একাধারে ছিলেন জ্যোতির্বিদ , চিকিৎসক ও স্থপতি । চিকিৎসাবিদ্যায় তার দক্ষতা এতই বৃদ্ধি পায় যে পরবর্তীকালে ইমহোটেপকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা হতো । পিরামিডের যুগে মিশরে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল বলে ধারণা করা হয় । চতুর্থ রাজবংশের রাজত্বকালে একটি সমাধিক্ষেত্রে প্রাপ্ত চোয়ালের হাড়ে প্রাচীন দস্ত চিকিৎসকের দক্ষতা ফুটে উঠেছে । এতে প্রথম চর্বন দাতের খাজের নীচে একটি ফোড়া অপারেশন করা হয়েছে । ষণ্ঠ রাজবংশের একজন প্রধান চিকিৎসক একাধারে দন্ত বিশেষজ্ঞ , চক্ষু চিকিৎসক , এবং পাকস্থলী অস্ত্রের চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন । চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ সর্বপ্রথম মানুষের হৃৎপিণ্ডের গুরুত্ব নির্দেশ করেছিলেন । নাড়ীর স্পন্দন সম্পর্কেও তাদের ধারণা ছিল । ভাঙ্গা , মচকানো এবং ছোট খাট অপারেশনও তারা করতে পারতো । তবে মিশরীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটেছিল ধর্মীয় ধারণাকে উজ্জীবিত করতে যেয়ে । মিশরীয় ধর্মে আমরা মৃত্যু পরবর্তীকালে ফারাওদের ভূমিকার কথা জানতে পেরেছি । মৃত্যুর পর দেহ অবিকৃত রাখার প্রশ্নটি ধর্মীয় ধারণা থেকেই জন্মলাভ করে । মিশরের শুষ্ক মরুময় অঞ্চলে মৃতদেহে পচন ধরতো দেরী করে । মৃত্যুপরবর্তী বাস্তবতা এতে হয়তো আরও স্পষ্ট হয়েছিল । ফারাওদের দেহ অবিকৃত রাখার প্রয়োজনে শেষ পর্যন্ত মিশরীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ মমী তৈরীর পদ্ধতি বের করতে পেরেছিল । মমী তৈরীর মধ্য দিয়ে মিশরীয়রা শল্য চিকিৎসার দিক থেকে তাঁদের বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচয় রাখতে পেরেছিল । মমী তৈরীর পদ্ধতি ছিল নিখুঁত । পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাথা থেকে মগজ , পেট থেকে সাবধানে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলা হতো । মৃতের পেটে কাঠের গুড়ো বা পাতলা কাপড় ভরে দেয়া হতো । গাছ গাছড়া দিয়ে তৈরী ঔষধে প্রথম মৃতদেহ ভিজিয়ে রাখা হতো । পরে সমস্ত শরীরে মাখা হতো মলম । অতঃপর পাতলা নরম কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ব্যান্ডেজ করা হতো । এক প্রকার তরল ঔষধে দেহ ভিজিয়ে রাখার পর ধীরে ধীরে পুরো দেহ কাপড়ের সাথে জমাট বেঁধে যেতো । এভাবেই তৈরী হতো মমী । মিশরীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে দেখা যায় যে মিশরীয়রা রোগের জন্য প্রাকৃতিক কারণকে নির্দেশ করছে । তারা পেটের পীড়াসহ অসংখ্য রোগের ঔষধ আবিষ্কার করেছিল । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মিশরীয়দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে ' মেটেরিয়া মেডিকা ’( Materia Medica ) বা ঔষধের সূচী প্রস্তুত করা । তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক আবিষ্কার পরবর্তীতে গ্রীকদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে ।

লেখার সোর্স: অপ্রত্যাশিত হিমু
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×