somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু ঝগড়া আর সাথে একটু ভালবাসা এবং একটা সুন্দর রাত

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইকের ইন্জিনটা বন্ধ করে দিলাম । এমনিতে গলি তারপর উপর গভীর রাত । ইন্জিনের আওয়াজটা বড় বেশি শোনাচ্ছে । কারো না করো ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সব থেকে বেশি অস্বস্তি লাগছে কেউ আবার চোর চোর বলে চিত্কার করে ওঠে । অবশ্য ওঠাটা অস্বাভাবিক না । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় দেড়টা বাজে । এতো রাতে কারো বাড়ির সামনে গিয়ে যদি দাড়িয়ে থাকি চোর ভাবাটা খুব বেশি দোষের কিছু না । হোক না যতই শ্বশুর বাড়ি । আর এটা কি সময় হল শ্বশুর বাড়িতে আসার ।
কিন্তু কি করবো ঘুম যে আসছিল না কিছুতেই । শ্রাবণকে ছাড়া কিছুতেই ঘুম আসছিল না । বিকেল বেলা শ্রাবণের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে । মনে হয় ঝগড়ার মাত্রা টা একটা বেশিই হয়ে গিয়েছিল । ঝগড়ার একটু পরেই দেখলাম ও বাসা থেকে বেরিয়ে গেল । বেরুবার আগে পাশের ঘরে মাকে বলল মা আমি বাবার বাড়ি যাচ্ছি । আপনার ছেলেকে বলবেন যেন আমারকে ফোন না দেয় । তার মনে যখন এতো সন্দেহ তখন আমার সাথে আর থাকতে হবে না । আমি আব্বার বাড়িতে যাচ্ছি । আর আসবো না ।
মা আটকাতে চেষ্টা করল । কিন্তু পারলো না । ওর যা জেদ । রিক্সা করে চলে গেল ।শ্বশুর বাড়ি কাছে হওয়ার এই এক অসুবিধা । কিছু হলেই বাপের বাড়ি । যাক যেখানে ইচ্ছা । আমার দিকটা সে দেখবে না আমি কেন তার কথা ভাববো ? আর আমি ঠিক যে কাজটা পছন্দ করি না সে কাজটা সে কেন করে । কেন সে ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলল ? হোক না মামাতো ভাই ! তার আবার হেসে ।
আমি বলি নি আমি সন্দেহ করি । কিন্তু ঐ ছেলেটা তোমাকে এক সময় পছন্দ করতো । বিয়ে করতে চেয়েছিল । এটা আমি কিছু মেনে নিতে পারি না । তোমার পাশে কোন ছেলেকে আমি সহ্যই করতে পারি না । কেন এটা বোঝ না তুমি ? মনে মনে রাগ হয় খুব । কার উপর কে জানে ? আমি শ্রাবনের উপর রাগ করতে চাইলাম । কেন জানি কাজ হল না খুব ।
এই একটা ব্যপার শ্রাবনের রাগ করা যায় না কিছুতেই । কিন্তু ওর যাবার পর মনের ভিতর কেমন জানি একটা অনুভুতি শুরু হল । রাতে ঐ অনুভুতিটা আরো প্রবল হল । শান্তি দিলো না কিছুতেই । খাবার সময় কেন জানি ভাত মুখে উঠল খুব । অন্য দিন শ্রাবণ খাওয়ার সময় ও সামনে বসে থাকতো । খেতে না চাইলে অথবা ভাত নষ্ট করতে দেখলে ধমক দিতো । জোড় করে খাওয়াতো । আজ কিছু আর ভাল লাগল না ।
সব থেকে ঝামেলা বাধল ঘুমানোর সময় । প্রতি দিন ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই । ওর গায়ে গন্ধ না পেলে ঘুম আসে না । প্রথম ও খুব আপত্তি করতো । বলত কেউ স্পর্শ করলে ঘুম আসে না । কিন্তু সে আপত্তি টেকে নি । বলতাম ঘুম না আসলে জেগে থাকো । বিয়ে করেছি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমুবার জন্য নাকি ? ও হাসতো ।
খানিকটা এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লাম । খামোখা চেষ্টা করে লাভ নাই । ওকে ছাড়া ঘুম আসবে না কিছুতেই । শ্বশুর বাড়ি খুব দুরে না । মোটরসাইকেলে বড় জোর দশ মিনিটের পথ । ঐ রাত একটার সময় বাইক বের করলাম । মা জেগে গেছিল । আমাকে বের হতে দেখে বলল “এতো রাতে আর এসে কাজ নাই । ও বাড়িতেই থেকে যাস” ।
তারপর এইখানে শ্বশুর বাড়ির সামনে । শ্রাবণের নাম্বারে ফোন দিলাম । যদিও ওদের ঘরের বাতি নেভানো । তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে ও জেগে আছে । দুবার রিংয়ের পরই দেখলাম ও ফোন রিসিম করল ।
“কি ব্যাপার ? ফোন দিয়েছো কেন” ?
কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । খানিকটা ইতস্তঃ করে বললাম “ঘুম আসছে না” ।
“তো আমি কি করবো ? ঘুম পাড়ানি গান শোনাবো” ? এতো কঠিন জবাব ! মনটা একটু খারাপ হল ।
বললাম “তোমার ও তো ঘুম আসছে না” ।
“আমার ঘুম আসুক বা না আসুক সেটা নিয়ে তো তোমার ভাবতে হবে না । শোন এসব ফালতু কথা বলতে ভাল লাগছে না । আমি রাখি” ।
“না প্লিজ শোন………”
কোন সাড়া শব্দ নাই । ফোন রেখে দিল নাকি । মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি না এখনও লাইনে আছে ।
“টিয়াপাখি আছো ? আছো” ?
অনেকক্ষন পরে বলল “বল” । এবার অনেকটা নরম স্বরে । “ বল । কথা বলছো না কেন” ?
আমি একটু চুপ থাকলাম । তারপর বললাম “একটা কথা বলি” ?
“বল”
“আই লাভ ইউ” ।
“এটা জানি । অন্য কিছু বল” ।
“আমি তোমাকে কখনও সন্দেহ করি না । কখনই না” ।
“এটাও আমার জানা” ।
“তাহলে তুমি আসার সময় ঐ কথা কেন বললে” ?
“বলেছি রাগের মাথায়” ।
“কিন্তু তোমার পাশে কোন ছেলেকে দেখলে দেখলে আমার সহ্যই হয় না । বল এটা কি আমার দোষ” ?
ও বলল জি “এটা আপনারই দোষ । এটাও আমি জানি । অন্য কিছু বল” ।
“আচ্ছা একটা কথা বলি যেটা তোমার অজানা” ।
“বল” ।
“আমি এখন তোমাদের বাড়ির সামনে” ।
ও হেসে ফেলল । “হাসসো কেন” ?
“হাসছি কারন এটাও আমি জানি” ।
“মানে” ?
শ্রাবণ বলল “একটু উপরে তাকাও ব্যালকুনিল দিকে” ।
প্রথম কিছু বুঝলাম না অন্ধকারের জন্য । একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম একটা শেইপ । শ্রাবণ দাড়িয়ে ।
“তুমি কিভাবে বুঝলে ? এতো রাতে”?
ও আবার হাসল । বলল “তোমার ভটভটির যা আওয়াজ , তুমি যখন গলির মধ্যে ঢুকলে তখনই বুঝছি আমি । আর সন্ধ্যা থেকেই মনে হচ্ছিল যে তুমি হয়তো আসবে” ।
আমার মনটা ভাল হয়ে যায় চট করে । বললাম “নিচে আসো । আজ সারা রাত তোমাকে ঘুরবো” ।
“ইস ! আমার বুঝি সকাল বেলা উঠতে হবে না ? আর তোমার ভটভটির যা আওয়াজ ! শোন গেট খুলছি । চুপচাপ এসে ঘুমাও” ।
“একটু আসো না । বেশি না । অল্প একটু” ।
“না । দেখো এরকম করলে কিন্তু আমি গেট খুলবো না । ঘুম আসছে না ঘুম পারিয়ে দিচ্ছি ।এতো শখ কেন” ?
“আচ্ছা” । খানিকটা মন খারাপ করে বললাম ।
কিছুক্ষন পর গেট খুলে বাইরে এল । গেটটা বাইরের দিক দিয়ে তালা মারতে দেখে অবাক হলাম ।
“ বেশি না” ও বলল “মাত্র আধা ঘন্টা” । তারপর ও মোটরসাইকেলে উঠে বসল । “কই তোমার ভটভটি স্টার্ট দাও” ।
আমি ভটভটি স্টার্ট দিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×